ইঁদুর ও বাজপাখির মমি

টুটুর সমাধিক্ষেত্রে পাওয়া ইঁদুর ও বাজপাখির মমি।  ছবি: রয়টার্স
টুটুর সমাধিক্ষেত্রে পাওয়া ইঁদুর ও বাজপাখির মমি। ছবি: রয়টার্স

মিসরে রঙিন চিত্রকর্মে ভরা প্রাচীন একটি সমাধিক্ষেত্র থেকে প্রায় ৫০টি ইঁদুর ও বাজপাখির মমির সন্ধান পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। সমাধিক্ষেত্রটি টলেমির যুগের বলে জানা গেছে। ২ হাজার বছর আগে টুটু নামে এক শীর্ষ কর্মকর্তা ও তাঁর স্ত্রী তা-শিরিত-ইজিজের সমাধিক্ষেত্র এটি। রাজধানী কায়রো থেকে ৩৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে সুহাগ শহরে এর অবস্থান।

গত অক্টোবরে সুহাগে সাতটি প্রাচীন সমাধিক্ষেত্র আবিষ্কার করেছেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। টুটুর সমাধিক্ষেত্র তাদের একটি। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রাচীন নিদর্শন আবিষ্কারের কৃতিত্ব কিছুটা চোরাকারবারিরাও পাবে। কারণ, তারাই সেখানে প্রথমে গোপনে খননকার্য চালাচ্ছিল। কর্তৃপক্ষ টের পেয়ে তাদের হাতেনাতে ধরে। পরে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে এই অমূল্য প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ।

গত শুক্রবার টুটু ও তাঁর স্ত্রীর শবাধার খোলা হয়েছে। সেখানে তাঁদের মমিকে ঘিরে প্রায় ৫০টি মমিকৃত ইঁদুর ও বাজপাখি সাজানো ছিল। এসব সমাধি থেকে উদ্ধার করে দর্শনার্থীদের জন্য প্রদর্শন করা হচ্ছে। এ ছাড়া উদ্ধারকৃত একটি নারী ও শিশুর মমিও সমাধির বাইরে প্রদর্শিত হচ্ছে। নারীটি সম্ভবত ২৫ থেকে ৫০ বছর বয়স্ক এবং মৃত্যুর সময় ছেলেটির ১২ থেকে ১৪ বছর বয়স ছিল। শবাধারের ভেতর রঙিন অনেকগুলো মুখোশের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।

সমাধিক্ষেত্রের দেউড়ি
সমাধিক্ষেত্রের দেউড়ি

সমাধিক্ষেত্রটিতে দেখা যায়, এটি তিনটি অংশে বিভক্ত। প্রধান ফটকের কাছে একটি ছোট দেউড়ি, এরপর একটি সমাধিকক্ষ ও সেখানে দুটি পাথরের শবাধার রাখা সমাধিপ্রকোষ্ঠ। বাইরের দেউড়িটি দুই ভাগে বিভক্ত। পুরো সমাধিক্ষেত্রের দেয়ালজুড়ে রঙিন চিত্রকর্মে ভরা। সেখানে সমাধিক্ষেত্রের মালিক টুটু ও তাঁর স্ত্রীর ছবি আঁকা রয়েছে। টুটুর সঙ্গে বিভিন্ন দেব-দেবীর উপহার বিনিময় দেখানো হয়েছে অনেক ছবিতে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ক্রিয়াদি ও সেখানে যেসব লোক উপস্থিত ছিলেন, ছবি এঁকে তার বিস্তারিত দেখানো হয়েছে দেয়ালে। হায়ারোগ্লিফিক অক্ষরে দেয়ালে লেখা আছে টুটুর বংশবৃত্তান্তও।

টুটুর স্ত্রী তা-শিরিত-ইজিজের সমাধিতেও একই ধরনের চিত্রকর্ম দেখা গেছে। পার্থক্য শুধু, তাঁর সমাধির দেয়ালে মৃত্যুর পরের জীবন নিয়ে নানা শ্লোকও উদ্ধৃত রয়েছে।

প্রাচীন মিসরে টলেমির শাসন চলে তৃতীয় শতাব্দী পর্যন্ত। রোমানদের আক্রমণে ওই শাসনকালের অবসান হয়। সুহাগ এখন ওই সময়ের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের নগরীর খ্যাতি পাচ্ছে। নীল নদের পশ্চিম তীরে এই মরুশহরের পর্যটন অর্থনীতি এখন এই চমকপ্রদ প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারকে কেন্দ্র করে ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করছে সরকার।