মোদির হেলিকপ্টারে 'সন্দেহজনক কালো ট্রাংক'!

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফাইল ছবি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফাইল ছবি

হেলিকপ্টার থেকে নামানো হলো একটি কালো ট্রাংক। তা ধরে আছেন দুজন। ট্রাংক নিয়ে জোরে দৌড়ে এগিয়ে চলেছেন তাঁরা। তাঁদের লক্ষ্য সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সাদা গাড়ি। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই গাড়ির সামনে পৌঁছে যান তাঁরা। ট্রাংক রেখে দেওয়া হয় গাড়িতে। এরপর দ্রুতগতিতে ওই জায়গা ছেড়ে চলে যায় গাড়িটি।

ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার (সিসিটিভি) ফুটেজে ধরা পড়েছে এসব। এ নিয়ে ভারতে শুরু হয়েছে শোরগোল। বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বিতর্কের কারণ, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কর্ণাটক সফরের সময় হেলিকপ্টার থেকে নামানো হয়েছে ওই ট্রাংক। আসলে ওই কালো ট্রাংকের মধ্যে কী আছে, তা নিয়ে কথার লড়াইয়ে শামিল বিজেপিবিরোধীরা। যদিও অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলছে মোদির দল।

এনডিটিভি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, কয়েক দিন আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী কর্ণাটকের চিত্রদুর্গায় গিয়েছিলেন। সে সময় নরেন্দ্র মোদির হেলিকপ্টারে ‘সন্দেহজনক ট্রাংক’ নিয়ে যাওয়া হয় বলে দাবি করেছে কংগ্রেস। সেই ট্রাংকের ভেতর কী ছিল, তা জানতে তদন্তের দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে আবেদনও করেছে দলটি।

কর্ণাটক রাজ্যের কংগ্রেস সভাপতি দিনেশ গুন্ডু রাও ট্রাংক নিয়ে যাওয়ার সিসিটিভি ফুটেজটি নিয়ে টুইট করেছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘একটি সন্দেহজনক ট্রাংক শনিবার চিত্রদুর্গায় প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার থেকে নেমেছে। এরপর সেটিকে একটি বেসরকারি গাড়িতে চাপিয়ে পাচার করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের খতিয়ে দেখা উচিত, এই ট্রাংকে কী ছিল? গাড়িটাই–বা কার?’

এরপর গতকাল রোববার দিল্লিতে দলের দপ্তরে ট্রাংককাণ্ড নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে কংগ্রেস। সেখানে তুলে ধরা হয়েছে মিনিটখানেকের সিসিটিভি ফুটেজ। দলের পক্ষ থেকে মুখপাত্র আনন্দ শর্মা বলেন, ‘আমরা দেখেছি, প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টারের পাশে আরও তিনটি হেলিকপ্টার ছিল। অবতরণের পর সেখান থেকে একটি কালো রঙের ট্রাংক বের করা হয়। অল্প সময়ের মধ্যে সেটি একটি গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। তবে ওই গাড়ি প্রধানমন্ত্রীর কনভয়ের অংশই ছিল না। এই ঘটনায় কর্ণাটক কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

কংগ্রেস নেতা সাবেক কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা আরও বলেন, ‘ওই ট্রাংকে কী ছিল? যদি টাকাই না থেকে থাকে, তাহলে তো তদন্ত করা যেতেই পারে। ভোটের সময় কোনো মন্ত্রী, কোনো নেতা এমন কিছু নিয়ে যেতে পারেন না, যাতে অবাধ নির্বাচনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। আর এটি তো খোদ প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টার। যেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর পরীক্ষা ছাড়া কিছু যাওয়ার উপায় নেই। এই ট্রাংকে যদি নগদ টাকা না থাকে, তাহলে সেটি নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়ে দিক। সেই ট্রাংকে কী রাখা হয়েছিল, কেনইবা গাড়ি কনভয়ের বাইরে একটি গাড়িতে তা তুলে সেই গাড়ি উধাও হয়ে গেল?’

এর পাশাপাশি কংগ্রেস নেতার দাবি, গত পাঁচ বছরে কী কী কাজ করেছেন, তা প্রধানমন্ত্রী জানান। রাফাল যুদ্ধবিমান প্রসঙ্গে আনন্দ শর্মা বলেন, মোদি রাফাল নিয়ে চুপ কেন? প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফ্রান্সের আলোচনা প্রকাশ্যে আনা হোক।

ভোটের মুখে এই ট্রাংক–রহস্য নিয়ে বেশ অস্বস্তিতেই আছে গেরুয়া শিবির। কংগ্রেসের অভিযোগ খারিজ করেছে বিজেপি। দুর্নীতি প্রসঙ্গে কংগ্রেসকে পাল্টা খোঁচাও দিয়েছে তারা। বিজেপি নেতা দলের মুখপাত্র জি ভি এল নরসীমা রাও বলেন, ‘এগুলো ভিত্তিহীন অভিযোগ। আসলে দুর্নীতির অপর নাম কংগ্রেস। ওরা আগে ওদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির জবাব দিক।’

লোকসভা নির্বাচন শুরু হওয়ার কয়েক মাস আগে থেকে নতুন করে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে কংগ্রেস।