উত্তর কোরিয়া বোমা তৈরির জ্বালানি আহরণ করছে?

তৃতীয় দফা বৈঠকে বসতে পারেন ট্রাম্প এবং কিম। ছবি: এএফপি।
তৃতীয় দফা বৈঠকে বসতে পারেন ট্রাম্প এবং কিম। ছবি: এএফপি।

উত্তর কোরিয়ার প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় তৎপরতা শনাক্ত করা গেছে। এতে তেজস্ক্রিয় পদার্থকে বোমা তৈরির জ্বালানিতে রূপান্তর করার আভাস পাওয়া গেছে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর পিয়ংইয়ং হয়তো তেজস্ক্রিয় উপাদান পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করছে বলে আজ বুধবার বিবৃতিতে জানান মার্কিন এক পরিদর্শক।

গত ফেব্রুয়ারিতে ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সর্বসম্মত কোনো চুক্তি ছাড়াই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং-উনের মধ্যকার যুক্তরাষ্ট্র-উত্তর কোরিয়া দ্বিতীয় দফার বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। এর জের ধরে গত সপ্তাহে নতুন করে তেজস্ক্রিয় উপাদান পুনঃপ্রক্রিয়াজাত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।

বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পর থেকে উত্তর কোরিয়া দাবি করছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে গভীরভাবে চিন্তিত তারা। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন বলেন, ‘যথাযথ মনোভাব’ নিয়ে আলোচনায় অংশ নিলে ট্রাম্পের সঙ্গে তৃতীয় দফা বৈঠকে বসতে রাজি তিনি।

দ্য সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ জানিয়েছে, স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবি অনুযায়ী ইয়ংবিয়ন পারমাণবিক স্থাপনায় ১২ এপ্রিল সক্রিয়তার প্রমাণ মিলেছে। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধি অঞ্চল এবং তেজস্ক্রিয় পদার্থের রাসায়নিক পরীক্ষাগারের আশপাশে পাঁচটি রেলগাড়ির উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক পরিদর্শকেরা জানান, এর আগে তেজস্ক্রিয় উপাদান সরানো কিংবা পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণের কাজে এ ধরনের রেলগাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে। রূপরেখার সঙ্গে তাদের বর্তমান কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে, তারা পুনঃপ্রক্রিয়াজনিত কোনো কাজে এগিয়ে চলেছে।

ট্রাম্প ও কিমের মধ্যকার বহুল প্রত্যাশিত প্রথম বৈঠকটি সিঙ্গাপুরের সেন্তোসা দ্বীপে অনুষ্ঠিত হয়। সেবার ‘কোরীয় উপদ্বীপকে পরমাণুশক্তিচ্যুত’ করার একটি অস্পষ্ট চুক্তিতে স্বাক্ষর করে দেশ দুটি। তবে দ্বিতীয় দফা হ্যানয় বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পর এই চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিম প্রস্তাবিত আংশিক চুক্তি থেকে সরে আসেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সে চুক্তিতে ইয়ংবিয়ন পারমাণবিক চুল্লি উন্মুক্ত করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়।

পিয়ংইয়ং থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরবর্তী ইয়ংবিয়ন দেশটির প্রথম পারমাণবিক স্থাপনা। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র কার্যক্রমের প্রধান উপকরণ প্লুটোনিয়ামের একমাত্র উৎস এটি। ইয়ংবিয়নই দেশটির একমাত্র ইউরেনিয়ামসমৃদ্ধ এলাকা নয়। কাজেই কেবল এই চুল্লি বন্ধ করে উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিকভাবে নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব হবে—এমন ধারণা ভুল। উত্তর কোরিয়া ২০১৮ সালে বৈঠক চলাকালে পারমাণবিক এবং ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা স্থগিত করে। তবে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে ইয়ংবিয়নে পারমাণবিক চুল্লি ব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছে।