ধুতি, লুঙ্গি আর গামুসার লড়াই

ভোটে ধুতি, লুঙ্গি, গামুসার প্রবক্তা আসামের অর্থমন্ত্রী হীমন্ত বিশ্বশর্মা। ছবি: সংগৃহীত
ভোটে ধুতি, লুঙ্গি, গামুসার প্রবক্তা আসামের অর্থমন্ত্রী হীমন্ত বিশ্বশর্মা। ছবি: সংগৃহীত

হীমন্ত বিশ্বশর্মা। আসামের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী মন্ত্রী। আগে কংগ্রেসেরও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন। বছর পাঁচেক আগে চিটফান্ড কেলেঙ্কারি নিয়ে রমরমা সময়ে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। গোটা উত্তর পূর্ব ভারতেই বিজেপির অন্যতম মুখ। এবার লোকসভা ভোটে টিকিট চেয়েছিলেন। পাননি। কিন্তু তাতেও পরোয়া নেই। হেলিকপ্টারে চেপে গোটা রাজ্য চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। ভোট প্রচারে, আসামবাসীর কাছে প্রশ্ন, ‘রাজ্যে কি শুধুই ধুতি আর লুঙ্গি থাকবে? গামুসার কী হবে?’

হীমন্ত বিশ্বশর্মা প্রকাশ্যে বলেছেন। কিন্তু বাস্তবেই ভারতের আসামে চলছে ‘ধুতি, লুঙ্গি আর গামুসার (গামছা)’ ভোট। বিজেপি নেতারা প্রকাশ্যেই ইস্যু হিসেবে তুলে এনেছেন এই তিনটি বিষয়কে। আর প্রতিপক্ষ কংগ্রেস খিলঞ্জিয়াদের (ভূমিপুত্র) না চটিয়ে ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের আস্থা জয়ে মরিয়া। এনআরসি (নাগরিক নিবন্ধন) আর ক্যাব (নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল) নিয়ে নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ থেকে শুরু করে রাহুল গান্ধী, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্রদের ভোট প্রচারে মুখ্য বিষয়ই ছিল ভূমিপুত্রদের স্বার্থরক্ষা।

এখানে ধুতি মানে হিন্দু বাঙালি। লুঙ্গি মুসলিম। আর গামছা হলো অসমিয়াদের গামুসা। বাঙালি–অধ্যুষিত বরাক উপত্যকাতেও এবারের ভোটকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ধুতি আর লুঙ্গির লড়াইতে। প্রথম আলোকে বিজেপি বিধায়ক শিলাদিত্য দেব সাফ বললেন, ‘আসামকে আরেকটা পূর্ব পাকিস্তান বানাতে দেওয়া যায় না। লুঙ্গিকে আটকাতে হবে।’ তিনি অবশ্য ধুতির পক্ষে। কিন্তু তাঁর দলেরই নেতা হীমন্ত ব্রক্ষ্মপুত্র উপত্যকায় ‘ধুতি’কেও আক্রমণ করছেন। গামুসা বা খিলঞ্জিয়া ভোট ব্যাংকই তাঁর লক্ষ্য।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় কংগ্রেসও পুরোদমে বিজেপির তোলা ইস্যুতেই পথে নেমেছে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়া তো বলেই ফেললেন, ‘সংখ্যালঘুরা তো (মুসলিম) আমাদের সঙ্গে আছেনই। তাঁরাই চাইছেন আমরা যাতে হিন্দুদের আস্থা জয় করে বিজেপিকে পরাস্ত করি। কারণ ওঁরা বুঝেছেন, বিজেপি এলে সর্বনাশ।’ আসামে ২০১১-এর আদমশুমারি অনুযায়ী ৩৪ দশমিক ২২ শতাংশ মুসলিম বসবাস করেন। হিন্দু বাঙালি আছেন ১৮ শতাংশ। তাই বিজেপির টার্গেট হিন্দু ভোট। কিন্তু তাঁরাও সতর্ক খিলঞ্জিয়াদের সমর্থন ধরে রাখতে।

সর্বভারতীয় মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী সুশ্মিতা দেব ভোটে লড়ছেন শিলচর থেকে। তাঁর কথা, ‘বিজেপির দ্বিচারিতা স্পষ্ট। ব্রক্ষ্মপুত্র পারে গিয়ে তারা ধুতি-লুঙ্গিকে আক্রমণ করছে। আর বরাকে এসে তাদের গামুসা ছেড়ে ধুতি গলাবার চেষ্টা মানুষ বুঝে ফেলেছেন। খোদ মোদিজিই তো অসমিয়া ভজনা করলেন শিলচরে। তাই মানুষ এবার উচিত শিক্ষা দেবে।’ বিজেপি বুঝে গিয়েছে মুসলিম ভোটের বড় অংশই এবার কংগ্রেসই পাবে। তাই হিন্দু ভোট একত্র করতে মরিয়া বিজেপি।

জাতপাতের এই রাজনীতির পাশাপাশি উড়ছে টাকা। নির্বাচন ঘোষণার দিন থেকে এখন পর্যন্ত উত্তর পূর্ব ভারত থেকে ৭ কোটি ৩৩ লাখ রুপি কালো টাকা উদ্ধার হয়েছে। আসামে কাল বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় ৫টি আসনে ভোট। ১১ এপ্রিল আরও ৫টি কেন্দ্রে ভোট হয়ে গিয়েছে। বাকি ৪টি আসনে ভোট হবে ২৩ এপ্রিল। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয়েছে অভূতপূর্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা। কংগ্রেস ও বিজেপি উভয় শিবিরেরই দাবি, তারা জিতছে। ভোটে কংগ্রেস একা লড়লেও বিজেপি তাদের জোট শরিক অসম গণপরিষদকে তিনটি ও বড়োল্যান্ড পিপলস পার্টিকে একটি আসন ছেড়ে দিয়েছে। এ ছাড়াও লড়াইতে আছে এআইইউডিএফ। গতবার তারা তিনটি কেন্দ্রে জয়ী হয়। কংগ্রেসও জেতে তিনটি আসনে। বিজেপি পায় সাতটি আসন। অপর আসনটি নির্দলের দখলে যায়।