ফেরদৌসের পর এবার নূরকে ভারত ত্যাগের নির্দেশ

গাজী আবদুন নূর। ছবি: সংগৃহীত
গাজী আবদুন নূর। ছবি: সংগৃহীত

লোকসভা নির্বাচনে একটি দলের প্রচারে যোগ দেওয়ার জেরে এবার অভিনেতা গাজী আবদুন নূরেরও ভিসার মেয়াদ বাড়ায়নি ভারত। আর তাই বেআইনিভাবে অবস্থান করার দায়ে গাজী আবদুন নূরকে অবিলম্বে দেশত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ভারতে বিজনেস ভিসা নিয়ে এসে লোকসভা নির্বাচনে একটি রাজনৈতিক দলের প্রচারে যোগ দেওয়ার জেরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত মঙ্গলবার বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদকে ভিসা বাতিল করে তাঁকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছিল।

আজ বৃহস্পতিবার গাজী আবদুন নূরের প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে। নূরের বিরুদ্ধেও অভিযোগ, তিনি এখানে দমদম কেন্দ্রের তৃণমূলের প্রার্থী সৌগত রায়ের একটি প্রচার মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন সাবেক মন্ত্রী মদন মিত্রের সঙ্গে। এ ঘটনার পর নূরের নাম প্রকাশ্যে চলে আসায় কলকাতার অভিবাসন দপ্তর নূরের ভিসা–সংক্রান্ত তথ্য তদন্ত শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার তাঁকে অবিলম্বে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। তদন্তে দেখা যায়, নূরের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তিনি ভিসার মেয়াদ বাড়াননি।

নূর কলকাতার জি-বাংলায় প্রচারিত ‘ করুণাময়ী রাণী রাসমণি’ সিরিয়ালের রাজা রাজচন্দ্রের ভূমিকায় অভিনয় করছিলেন। এর আগে ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার বাংলাদেশের চিত্রতারকা ফেরদৌস আহমেদের ভিসা বাতিল করে তাঁকে অবিলম্বে ভারত ছাড়ার নির্দেশ দিলে ফেরদৌস ফিরে যান বাংলাদেশে।

ফেরদৌসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি ভিসার শর্ত ভঙ্গ করে গত রোববার উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ আসনের তৃণমূলের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন। ফেরদৌসের ব্যবসায়ী ভিসার শর্ত ছিল, তিনি ভারতে এসে চলচ্চিত্রে শুটিং করতে পারবেন, বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন। সেই শর্ত ভেঙে তিনি একটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী প্রচারে যোগ দেন। তাঁর ভিসার মেয়াদ ছিল ২০২২ সাল পর্যন্ত। ১৪ এপ্রিল ফেরদৌস তৃণমূলের একটি নির্বাচনী প্রচার মিছিলে অংশ নেন।

এ ঘটনার কথা প্রকাশ্যে এলে বিজেপি তীব্র প্রতিবাদ করে। তারা প্রশ্ন তোলে, কীভাবে একজন বিদেশি ভারতের নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারেন? এরপর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় কলকাতার অভিবাসন দপ্তরে এবং বিদেশি নাগরিক নিবন্ধন অফিসে। পাশাপাশি রিপোর্ট চাওয়া হয় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের কাছেও। অভিবাসন দপ্তর থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফেরদৌসের ভিসা বাতিল করে তাঁকে অবিলম্বে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি তাঁকে ভারতে ‘কালো’ তালিকাভুক্ত করা হয়।

এ ঘটনার পর তীব্র প্রতিবাদ ওঠে বিজেপির পক্ষ থেকে। যদিও এর পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের এক নেতা ও সাবেক মন্ত্রী মদন মিত্র। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অকৃত্রিম বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তাই এটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে হয়েছে। এর জন্য নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোনো প্রশ্ন নেই।’

শুধু ফেরদৌস নন, একইভাবে ‘রাণী রাসমণি’ সিরিয়ালের রাজা রাজচন্দ্রের ভূমিকায় অভিনয় করা বাংলাদেশের শিল্পী গাজী আবদুন নূরও সাবেক মন্ত্রী মদন মিত্রের সঙ্গে কামারহাটিতে তৃণমূলের দমদম আসনের প্রার্থী সৌগত রায়ের নির্বাচনী প্রচারে নামেন। সৌগত রায়ের খোলা গাড়িতে তিনি রোড শোয়ে অংশ নেন। যদিও নূর বলেছেন, সাবেক মন্ত্রী মদন মিত্রর সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। তাঁর অনুরোধে তিনি প্রচার মিছিলে গেলেও তিনি কোনো ভাষণ দেননি। কোনো কথা বলেননি। শুধু সঙ্গে গিয়েছিলেন।