তিন নারী ও এক পুরুষের চতুর্মুখী লড়াই

রূপালী বিশ্বাস, রমা বিশ্বাস। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
রূপালী বিশ্বাস, রমা বিশ্বাস। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গে লোকসভার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আসন রানাঘাট। তফসিলি সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত আসনটিতে আছে হিন্দু সম্প্রদায়ের পবিত্র তীর্থভূমি নবদ্বীপ ধাম। এই আসনেই এবার চতুর্মুখী লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছেন তিন নারী ও এক পুরুষ প্রার্থী।

রানাঘাটে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া চার প্রার্থীর মধ্যে তিন নারী এসেছেন একই সম্প্রদায় থেকে। তিনজনেরই পদবি বিশ্বাস। তাঁরা হলেন তৃণমূলের রূপালী বিশ্বাস, সিপিএমের রমা বিশ্বাস ও কংগ্রেসের মিনতি বিশ্বাস। আসনটিতে বিজেপির রয়েছে এক পুরুষ প্রার্থী। তিনি জগন্নাথ সরকার। তিনি বর্তমানে বিজেপির উত্তর নদীয়া জেলার সভাপতি।

রানাঘাট আসনে অবশ্য মতুয়া সম্প্রদায়ের অনেক মানুষের বসবাস। এখানকার ভোট নিয়ন্ত্রণে মতুয়ারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আসনটিতে তৃণমূল প্রার্থী রূপালী এলাকার কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা আসনের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাসের বিধবা স্ত্রী। সত্যজিৎ সম্প্রতি এলাকার একটি পুজোর উদ্বোধন করতে গিয়ে দুষ্কৃতকারীদের হাতে খুন হন। তাঁর মৃত্যুর পর রূপালীর পাশে এসে দাঁড়ান তৃণমূল নেত্রী। লোকসভা আসনের প্রার্থী হতে চাইলে বয়স অন্তত ২৫ বছর হওয়া প্রয়োজন। মনোনয়নপত্র দাখিলের কিছুদিন আগে ২৫ বছরে পা দিয়ে সেই শর্ত পূরণ করেন রূপালী।

রূপালীর মনে সংশয় থাকলেও মুখ্যমন্ত্রী দলীয় প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণার দিন জানিয়ে দেন, নদীয়ার রানাঘাটে এবার প্রার্থী করা হয়েছে নিহত সত্যজিৎ বিশ্বাসের স্ত্রীকে। দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে দলীয় নেতারা রূপালীর সঙ্গে প্রচারে নেমে পড়েন। রূপালী বিশ্বাসের জন্য এই আসনের তৃণমূল সাংসদ তাপস মণ্ডলকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তৃণমূলের বিশ্বাস, রূপালীকে প্রার্থী করে তারা সহানুভূতির হাওয়ায় উতরে যাবে। এই অঙ্ক কষে রূপালীকে নিয়ে প্রচারে নামেন তৃণমূলের নেতারা। রূপালীও স্বামীর ছবিকে সামনে রেখে জোর প্রচার চালাচ্ছেন।

আসনটিতে আরেক শক্তিশালী প্রার্থী বামফ্রন্টের শরিক সিপিএমের রমা বিশ্বাস। তিনি বর্তমানে নদীয়া জেলার দক্ষিণ রানাঘাটের সিপিএমের বিধায়ক। বামপন্থী পরিবারের সদস্য রমার বাবাও ছিলেন কমিউনিস্ট নেতা। রানাঘাটের আসনটি একসময় বামপন্থীদের দখলে থাকলেও মমতা ক্ষমতায় এসে তাদের হটিয়ে দেয়। ২০১৪ সালের সবশেষ লোকসভা নির্বাচনে এই আসনে দ্বিতীয় হয়েছিল সিপিএম।

আসনটিতে এবার জোর লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন কংগ্রেসের প্রার্থী মিনতি বিশ্বাস। কংগ্রেসের একনিষ্ঠ কর্মী ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী মিনতি বলেছেন, এই আসনে তিনিই এবার জিতবেন। কারণ, মানুষ আর সিপিএম বা শাসক দল তৃণমূলকে ভোট দেবেন না। মানুষ এবার ভোট দেবে কংগ্রেসকে। কংগ্রেস ভারতবর্ষের এমন একটি দল, যারা ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের পতাকা এখনো তুলে ধরে রেখেছে।

আর বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার তো বলেই ফেলেছেন, তৃণমূলের দিন শেষ। রাজ্যজুড়ে চলছে মোদি-ঝড়। সেই ঝড়ে অন্যান্য দল উড়ে যাবে। এই আসনে জিতবে বিজেপিই।

ফলে, এবার এই রানাঘাট আসনে চতুর্মুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ২৯ এপ্রিল চতুর্থ দফার নির্বাচনে এই আসনে ভোট গ্রহণ করা হবে।