প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে দোলাচল

প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। ছবি: রয়টার্স
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। ছবি: রয়টার্স

বারানসিতে প্রিয়াঙ্কাই কি তাহলে চ্যালেঞ্জার হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির? মোদির মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগের দিন এই প্রশ্নটাই বড় হয়ে উঠেছে। কাল শুক্রবার উত্তর প্রদেশের বারানসিতে মোদি তাঁর মনোনয়নপত্র পেশ করবেন। এই কেন্দ্রের ভোট শেষ পর্বে, ১৯ মে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ২৯ এপ্রিল।

কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কার জীবনের প্রথম নির্বাচনে মোদির মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা কতখানি, সে বিষয়ে কংগ্রেস সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, সম্ভাবনা ৫০ ভাগ। দলের শীর্ষ নেতারা বিষয়টি নিয়ে আজকালের মধ্যেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

এই নিয়ে জল্পনা অবশ্য বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে। নানা সময়ে নানাভাবে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারাও বিষয়টি নিয়ে আগ্রহ জাগিয়ে রেখেছেন।

প্রিয়াঙ্কা আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার দিন দলের সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, ‘আমরা ফ্রন্ট ফুটে খেলার জন্য নেমেছি। সেই খেলাটা টি-টোয়েন্টি নয়। টেস্ট ম্যাচ।’

প্রিয়াঙ্কা নিজেও এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছিলেন, ভোটে লড়তেই যদি হয়, তাহলে বারানসি নয় কেন?

এরপর প্রিয়াঙ্কা মোদির সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘বারানসিতে শুনেছি প্রধানমন্ত্রী নাকি পাঁচ বছরে একবারের জন্যও ওই কেন্দ্রে কোনো গ্রামে যাননি।’

এরপরই প্রিয়াঙ্কা বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি প্রস্তুত। দল বললেই লড়বেন।

সম্প্রতি রাহুল আবার বলেছেন, ‘একটু সাসপেন্স থাকা ভালো।’

সাসপেন্স শেষ হওয়ার সময় এসে গেছে। মোদির বিরুদ্ধে প্রিয়াঙ্কাকে দাঁড় করাতে হলে কংগ্রেসকে দু-এক দিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

দলে এই নিয়ে দুই ধরনের মত আছে। একটা মত হলো, জীবনের প্রথম ভোটে প্রিয়াঙ্কাকে এত বড় পরীক্ষার মুখে ফেলা উচিত হবে না। শোনা যায়, প্রিয়াঙ্কার মা সোনিয়া গান্ধীর অভিমতও নাকি এই। অন্য মত একেবারে ভিন্ন। রাহুল সেই মত পোষণ করেন। প্রিয়াঙ্কাকে বারানসিতে মোদির মুখোমুখি দাঁড় করালে দল শুধু চাঙা হয়েই উঠবে না, প্রধানমন্ত্রীর মোকাবিলা করতে তিনি যে ভীত নন, তা প্রমাণিত হবে। কংগ্রেস দেখাতে পারবে, মোদিকে হারাতে একমাত্র তারাই সাহসী। হারা–জেতাটা এই কেন্দ্রে গৌণ। মুখ্য হলো মোদির মুখোমুখি হয়ে মোকাবিলা করা।

প্রিয়াঙ্কা বারানসি থেকে দাঁড়ালে পূর্ব ভারতের এই কেন্দ্রের রাজনৈতিক সমীকরণও সম্পূর্ণ বদলে যেতে পারে। গতবার এই কেন্দ্রে মোদির মোকাবিলায় নেমেছিলেন আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। দুই লাখ ভোট তিনি পেয়েছিলেন। কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন অজয় রাই। তিনি তৃতীয় হয়েছিলেন। প্রিয়াঙ্কা চ্যালেঞ্জার হলে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টি প্রার্থী দেবে কি না, সেই প্রশ্নটাও বড় হয়ে উঠবে। আম আদমি পার্টির সঙ্গে দিল্লিতে কংগ্রেসের জোট এখনো হয়নি। বিজেপি বিরোধিতায় অন্যরা প্রিয়াঙ্কাকে সমর্থন করলে লড়াইটা হয়ে দাঁড়াবে ক্ষুরধার।

উত্তর প্রদেশে দলিত সমাজে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে ভীম সেনা। এই সংগঠনের নেতা চন্দ্রশেখর আজাদ ‘রাবণ’ বারানসি থেকে দাঁড়ানোর ঘোষণা করেছিলেন। দুই দিন আগে তিনি জানিয়েছেন, বারানসি থেকে ভোটে লড়বেন না। কেন হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত তা নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা। চন্দ্রশেখর আজাদ কয়েক দিন আগে অসুস্থ হয়ে মীরাটের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেই সময় প্রিয়াঙ্কা তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন। সেই থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে ভীম সেনার একটা রাজনৈতিক সম্পর্ক ও বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে। প্রিয়াঙ্কা দাঁড়াবেন আঁচ করেই কি তাহলে চন্দ্রশেখর আজাদ সরে গেলেন? এই প্রশ্ন উঠে গেছে।

এই রাজনৈতিক জল্পনার মধ্যেই ২১টা বিরোধী দল গতকাল বুধবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। তাদের আরজি, প্রতি বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তত ৫০ ভাগ ভিভিপ্যাট (ভোটার ভেরিফায়েবল পেপার অডিট ট্রেলস) মেশিন পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হোক। এর আগে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রতি বুথের ৫টি ভিভিপ্যাট মেশিন পরীক্ষা করার। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) কারচুপির অভিযোগ বন্ধে নির্বাচন কমিশন ভিভিপ্যাট মেশিন নিয়ে আসে। ইভিএমের সঙ্গে এই মেশিন যুক্ত থাকে।