থাই রাজার অভিষেক শুরু

শুরু হয়েছে রাজা রামা এক্সের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠান। ছবি: এএফপি।
শুরু হয়েছে রাজা রামা এক্সের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠান। ছবি: এএফপি।

থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্নের অভিষেক অনুষ্ঠান আজ শনিবার সকালে শুরু হয়েছে। সকাল ১০টা ৯ মিনিটের শুভক্ষণে তিন দিনব্যাপী এই উৎসব উদ্বোধন করা হয়। হিন্দু ও বৌদ্ধ রীতি অনুযায়ী জাঁকালোভাবে আয়োজিত এ অভিষেক অনুষ্ঠানকে ঘিরে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।

আজ সিংহাসনে বসলে মহা ভাজিরালংকর্ন (৬৬) হবেন চকরি রাজবংশের দশম রাজা। তিনি রাজা রামা এক্স নামেও পরিচিত। ১৭৮২ সাল থেকে দেশটিতে রাজত্ব করছে চকরি রাজবংশ।

বার্তা সংস্থা এএফপি ও বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, বাবার মৃত্যুর দুই বছর পর সিংহাসনে বসতে যাচ্ছেন রাজা রামা এক্স। থাই সেনাবাহিনী ঘিরে রেখেছে উৎসবের কেন্দ্রস্থল। পেছনের জানালা দিয়ে হলের মূল আনুষ্ঠানিকতা দেখার অনুমতি মিলেছে সাধারণ মানুষের।

এই অভিষেক অনুষ্ঠান থাইল্যান্ডের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোয় সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে। গ্র্যান্ড প্যালেস কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরীণ মন্দিরে এক কাঁধ খোলা ঐতিহ্যবাহী সাদা গাউন পরেন রাজা রামা এক্স। থাইল্যান্ডের বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করা পবিত্র জল দিয়ে তাঁর মুখ মুছে দেওয়া হয়।

এ সময় বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা মন্ত্র পাঠ করেন। শিঙা ও বাঁশি বাজিয়ে মুহূর্তটিকে স্মরণীয় করে রাখা হয়। প্রথা ভেঙে হিন্দু ব্রাহ্মণরাও এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এর মাধ্যমে প্রতীকী অর্থে সাধারণ মানুষ থেকে স্বর্গীয় এক পুরুষে পরিণত হলেন নতুন রাজা।

এরপর নয় স্তরবিশিষ্ট ছাতার নিচে আসন গ্রহণ করবেন রাজা রামা এক্স। সেখানে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হবে বিজয়ের মুকুট। ৭ দশমিক ৩ কেজি সোনা দিয়ে মোড়ানো মুকুটটির শীর্ষে রয়েছে ভারত থেকে আনা হীরা।

থাইল্যান্ডের বেশির ভাগ মানুষ প্রথমবারের মতো অভিষেক অনুষ্ঠানের সাক্ষী হতে যাচ্ছেন। ১৯৫০ সালে মহা ভাজিরালংকর্নের বাবা রাজা ভূমিবল আদুলাদেজ সিংহাসনে আরোহণের পর প্রথমবারের মতো এমন কোনো অনুষ্ঠান আয়োজিত হচ্ছে। আজ সকাল থেকেই রাজ্যাভিষেকের ছবি তুলছেন ১৬ বছর বয়সী জাকারিন কার্ডচক। এই স্বেচ্ছাসেবী বলে, ‘আমি উত্তেজিত, এমন একটি অনুষ্ঠানের অংশ হতে পেরে ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। ক্যামেরায় মানুষের আবেগ বন্দী করতে এসেছি আজ।’

রাজপ্রাসাদসংলগ্ন সড়কে দেশবাসীর পাশাপাশি উৎসুক পর্যটকদের ভিড়ও দেখা যাচ্ছে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভূমিবলকে দেশটির ঐক্যের প্রবাদপুরুষ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল রাজ্যটিতে তিনি ছিলেন শান্তির প্রতীক। তাঁর ছেলে ভাজিরালংকর্ন থাই জনতার মধ্যে তেমন একটা পরিচিত নন।

ভীষণ রকম আত্মকেন্দ্রিক এবং চতুর্থবার বিবাহিত ভাজিরালংকর্ন বিশ্বের অন্যতম সম্পদশালী সাম্রাজ্য এবং রাজনৈতিক সংকটে জর্জরিত রাজ্যের উত্তরাধিকারী হলেন।

৭০ বছর সিংহাসনে থাকার পর ২০১৬ সালের অক্টোবরে মহা ভাজিরালংকর্নের বাবা রাজা ভূমিবল আদুলাদেজ মারা যান। আদুলাদেজের মৃত্যুর ৫০ দিন পর নতুন রাজা হিসেবে ওই সময়ের যুবরাজ মহা ভাজিরালংকর্নের নাম ঘোষণা করা হয়। দেশটির পার্লামেন্টের আমন্ত্রণে রাজসিংহাসনে বসতে সম্মত হন মহা ভাজিরালংকর্ন।