ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বাইরে বিক্ষোভ

ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। ফাইল ছবি
ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। ফাইল ছবি

যৌন নিগ্রহের অভিযোগ থেকে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে অব্যাহতি দেওয়ার পরদিনই সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে বিক্ষোভ দেখালেন একদল আইনজীবীর সঙ্গে সমাজকর্মীরা। তাঁদের হাতে ছিল পোস্টার, যার একটিতে লেখা ছিল ‘সুপ্রিম ইনজাস্টিস’। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন সর্বোচ্চ আদালতেরই এক নারী কর্মী। ১৯ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের ২২ জন বিচারপতির কাছে এক হলফনামায় তিনি জানান, জুনিয়র কোর্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে প্রধান বিচারপতির বাড়িতে কর্মরত অবস্থায় তিনি যৌন হেনস্তার শিকার হন। প্রতিবাদ করলে তাঁর চাকরি যায়।

অভিযোগ ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই প্রধান বিচারপতি তা অস্বীকার করেন। তিন বলেন, প্রধান বিচারপতি ও বিচার ব্যবস্থাকে চাপে রাখার জন্য এটা এক চক্রান্ত। তিন বিচারপতির এক বেঞ্চ গঠন করে অভিযোগের তদন্তের নির্দেশ দেন তিনি। সেই বেঞ্চ গত সোমবার প্রধান বিচারপতিকে ‘ক্লিন চিট’ দেন। বলেন, অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এই প্রতিবেদনের পরই মঙ্গলবার বিক্ষোভ দেখান আইনজীবীদের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি সংগঠনের নারী ও পুরুষ সদস্যরা।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, যেভাবে ও যে প্রক্রিয়ায় প্রধান বিচারপতিকে নির্দোষ বলা হলো, তা সমর্থনযোগ্য নয়। তদন্ত হওয়া উচিত ছিল নিরপেক্ষ। ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া উইমেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যানি রাজা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনিই তদন্ত কমিটি তৈরি করে দিচ্ছেন। এটা কী করে সমর্থনীয় হতে পারে?

ন্যায়বিচার পাবেন না বলে অভিযোগকারী নারী বিচার প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। অভিযোগ ভিত্তিহীন জানানোর পর গত সোমবার তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে অন্যায় করা হলো। এর ফলে তিনি দেশের বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা হারানোর মুখে এসে দাঁড়িয়েছেন।

বিচারপতি এস এ বোবদে, বিচারপতি ইন্দিরা ব্যানার্জি ও বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রা তাঁদের প্রতিবেদনে বলেছেন, ওই প্রতিবেদন গোপনীয়। সরকারের হাতে তা দেওয়া যাবে না। এর ফলে অভিযোগকারী নারীও তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাবেন না। এর প্রতিবাদ করে সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাট বলেছেন, এটা ন্যায়বিচার হলো না। অভিযোগকারী তদন্ত কমিটির সামনে তিনবার হাজিরা দেওয়ার পর সরে দাঁড়ান। অভিযোগ, তাঁকে আইনজীবী সঙ্গে নিয়ে যেতেও দেওয়া হয়নি। সরে দাঁড়ানোর পর তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি ভয়াবহ। ন্যায় বিচার পাব না ধরেই নিয়েছিলাম।’ এই প্রতিবেদনর পরবর্তী করণীয় বিষয় নিয়ে তিনি আইনগত পরামর্শ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

ভারতের সুপ্রিম কোর্টের কোনো প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে এই প্রথম যৌন হেনস্তার অভিযোগ উঠল। এই ধরনের অভিযোগ তদন্ত করার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের যে নির্দেশ রয়েছে, এ ক্ষেত্রে তা কেন অনুসরণ করা হলো না, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।