দিল্লি দখলের লড়াই আজ

নরেন্দ্র মোদি, রাহুল গান্ধী, কেজরিওয়াল
নরেন্দ্র মোদি, রাহুল গান্ধী, কেজরিওয়াল

আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, দু-এক দিনের মধ্যে রাজধানী দিল্লির তাপমাত্রা কম হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। হবেই বা কী করে? আজ রোববার যে দিল্লির সাত লোকসভা আসনের ভোট

হব হব করেও দিল্লিতে কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টির (আপ) মধ্যে এবার আসন ভাগাভাগি হলো না। ফলে অনিবার্য হয়ে গেল এই দুই দলের সঙ্গে শাসক বিজেপির ত্রিমুখী লড়াই। কোন আসনে কে কার কত ভোট কাটবে এবং ভোট কাটাকাটির সেই লড়াইয়ে কে পাস করবে কেই-বা ফেল, তা নিয়ে অব্যাহত তুমুল জল্পনা। সেই জল্পনার মধ্যে গত শুক্রবার আম আদমি পার্টির দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়ে দিলেন, নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর দলের হাতে আরও একবার দেশের শাসনভার উঠলে তার জন্য একজনই দায়ী থাকবেন। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী

কেন দায়ী থাকবেন রাহুল? সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তা ব্যাখ্যা করে কেজরিওয়াল বলেছেন, উত্তর প্রদেশে কংগ্রেস ক্ষতি করছে সমাজবাদী-বহুজন সমাজ পার্টির জোটকে, কেরালায় বামপন্থীদের, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস, অন্ধ্র প্রদেশে তেলেগু দেশম পার্টি এবং দিল্লিতে আম আদমি পার্টিকে। এই রাজ্যগুলোয় জোটে না গিয়ে কংগ্রেস সুবিধা করে দিয়েছে বিজেপিকে। ফলে নরেন্দ্র মোদি দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এলে তার জন্য রাহুলই হবেন সম্পূর্ণ দায়ী।

দিল্লিতে জোট না হওয়ার জন্য মাত্র দুদিন আগে রাহুল দায়ী করেছিলেন কেজরিওয়ালকে। বলেছিলেন, জোট নিয়ে কথা দিয়েও শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে এসেছিলেন কেজরিওয়াল। দিল্লির ৭ আসনের মধ্যে আপকে ৪টি আসন ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছিলেন তিনি। রাজি ছিলেন কেজরিওয়ালও। অথচ শেষ মুহূর্তে দিল্লির সঙ্গে হরিয়ানার ১০ ও চণ্ডীগড় আসনটি জুড়ে তিনি অনড় হয়ে থাকেন।

পাঁচ বছর আগে দিল্লির ৭টি আসনই দখল করেছিল বিজেপি। এবার জোট হলে ওই ৭টি আসনের একটাও বিজেপির পক্ষে জেতা কঠিন হতো। কিন্তু তা না হওয়ায় সাত কেন্দ্রেই এবার লড়াই জমজমাট। তিন দলই সেরা প্রার্থী দিয়ে ভোটারদের পছন্দ কঠিন করে দিয়েছে। যদিও বিজেপির দৃঢ় বিশ্বাস, ত্রিমুখী লড়াই তাদের পক্ষে ‘স্কোর লাইন’ আরও একবার ৭-০ করে দেবে।

বিনা যুদ্ধে সূচ্যগ্র মেদিনী ছেড়ে না দেওয়ার লক্ষ্যে কংগ্রেস আসরে নামিয়েছে পরপর তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী অশীতিপর শীলা দীক্ষিতকে। উত্তর-পূর্ব দিল্লি কেন্দ্রে শীলার বিরুদ্ধ প্রার্থী গতবারের জয়ী বিজেপির মনোজ তিওয়ারি এবং আপ-এর দিলীপ পান্ডে। চাঁদনি চক কেন্দ্রে গতবারের জয়ী বিজেপির হর্ষবর্ধনকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন কংগ্রেসের জয়প্রকাশ আগরওয়াল। এই কেন্দ্রে আপ প্রার্থী পঙ্কজ গুপ্ত। পূর্ব দিল্লির গতবারের জয়ী প্রার্থী মহেশ গিরিকে এবার বিজেপি টিকিট দেয়নি।

প্রার্থী করেছে সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীরকে। তাঁর চ্যালেঞ্জার কংগ্রেসের অরবিন্দ সিং লাভলি ও আপ-এর আতিশি। ক্ষুরধার লড়াই নতুন দিল্লি কেন্দ্রেও। বিজেপির মহিলা সাংসদ মীনাক্ষী লেখির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন কংগ্রেসের সাবেক মন্ত্রী অজয় মাকেন এবং আপ-এর ব্রিজেশ গোয়েল। উত্তর-পশ্চিম দিল্লি থেকে গতবার জিতেছিলেন বিজেপির উদিত রাজ। এই দলিত নেতাকে বিজেপি এবার টিকিট দেয়নি। দলত্যাগ করে তিনি যোগ দিয়েছেন কংগ্রেসে। তবে এই কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী রাজেশ লিলোটিয়া। রয়েছেন আপ-এর গুগ্গন সিং। বিজেপি প্রার্থী করেছে পাঞ্জাবি গায়ক হংসরাজ হংসকে। পশ্চিম দিল্লির বিজেপি প্রার্থী গতবারের জয়ী পরবেশ ভার্মা। তাঁর বাবা সাহেব সিং ভার্মা ছিলেন বিজেপির বড় নেতা। একটা সময় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীও হয়েছিলেন। তাঁর চ্যালেঞ্জার কংগ্রেসের বহু যুদ্ধের সৈনিক মহাবল মিশ্র, আপ-এর বরবীর সিং জাখর। দক্ষিণ দিল্লির লড়াইও জমকালো। বিজেপির সাংসদ রমেশ বিধুরির বিপক্ষে কংগ্রেসের প্রার্থী পদকজয়ী পেশাদার বক্সার বিজেন্দ্র সিং। আম আদমি পার্টির মুখপাত্র রাঘব চাডঢা তৃতীয় প্রার্থী।

সারা দেশের মতো রাজধানী দিল্লিতেও বিজেপির একমাত্র নির্বাচনী মুখ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর ভাবমূর্তিতে ভর দিয়েই বিজেপি আবার সাত আসন জিততে মরিয়া। ঐতিহ্যগতভাবেই রাজধানীতে উদ্বাস্তুদের মধ্যে বিজেপির একটা প্রভাব রয়েছে। মূলত দোকানদার এই অংশ বরাবর বিজেপিকে সমর্থন জানিয়ে এসেছে। কিন্তু এবার ভোটে বড় ইস্যু বিভিন্ন এলাকায় বেআইনি দোকান-ব্যবসা ‘সিল’ করে দেওয়া। সিলিং অভিযান এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া দোকান-ব্যবসার আজও সুরাহা না হওয়া ব্যবসায়ী সমাজকে ক্ষুব্ধ রেখেছে। আর একটা বড় ইস্যু দূষণ। দিল্লির পুলিশ এবং জমি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন। এ কারণে কেজরিওয়াল সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের লড়াই অব্যাহত। আম আদমি পার্টি এবারও জানিয়েছে, ক্ষমতায় এলে দিল্লির জন্য পূর্ণ রাজ্যের অধিকার তারা আদায় করবে।

ভোটের এই শেষ বেলায় কংগ্রেসকে আক্রমণের ধার ও ভার বিজেপি হঠাৎই বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রয়াত রাজীব গান্ধীকে ‘এক নম্বরের ভ্রষ্টাচারী’ আখ্যা দেওয়ার পর বলেছেন, ১৯৮৪ সালের শিখ দাঙ্গার নির্দেশ রাজীব দিয়েছিলেন এবং তা সমর্থনও করেছিলেন। এ নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত। উজ্জীবিত কংগ্রেস কার ভোট বেশি টানবে তার ওপরই নির্ভর করছে রাজধানীর সাত আসনের ফল। ষষ্ঠ পর্যায়ের ভোটের দুই দিন আগে উত্তপ্ত রাজধানী তাই উত্তেজনায় খইফোটা ফুটছে।