ইন্দোনেশিয়ার যে গ্রামে মা নেই

এলি সুসিয়াওয়াতির (২০) যখন ১১ বছর বয়স, তখন তাঁর মা সৌদি আরবে যান। এরপর আর মায়ের সঙ্গে দেখা হয়নি তাঁর। মুঠোফোনে মায়ের ছবি দেখাচ্ছেন এই তরুণী।  ছবি: বিবিসি
এলি সুসিয়াওয়াতির (২০) যখন ১১ বছর বয়স, তখন তাঁর মা সৌদি আরবে যান। এরপর আর মায়ের সঙ্গে দেখা হয়নি তাঁর। মুঠোফোনে মায়ের ছবি দেখাচ্ছেন এই তরুণী। ছবি: বিবিসি

গতকাল বিশ্বব্যাপী পালিত হয়েছে মা দিবস। এই মা দিবসে ইন্দোনেশিয়ার এমন কিছু গ্রামের কথা উঠে এসেছে, যেখানে শিশুরা ‘মা’ কী জিনিস, তা জানে না। দেশটির পূর্বাঞ্চলে লম্বোক দ্বীপে এসব গ্রামে প্রায় সব তরুণী মা–ই বিদেশে কাজ করতে গেছেন। বেশির ভাগ শিশুই সেখানে চাচি, ফুফু বা খালার কাছে থেকে বড় হচ্ছে।

স্থানীয় লোকজন এসব গ্রামের নাম দিয়েছেন ‘মা–হীন গ্রাম’। এটি শুধু চমকজাগানিয়া তথ্যই নয়, এর পেছনে আছে অনেক চোখের জল ও সংগ্রামের গল্প।

জীবিকার খোঁজে লম্বোক থেকে নারীরা বিদেশে যেতে শুরু করেন আশির দশকে। কেউ সৌদি আরব, কেউ মালয়েশিয়া বা কেউ সিঙ্গাপুর পাড়ি জমান। বেশির ভাগ নারীই সেসব দেশে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন। এই সংখ্যা এতই বেশি যে ইন্দোনেশিয়ার প্রবাসী শ্রমিকদের দুই-তৃতীয়াংশই এখন নারী।

এই প্রবাসী নারীদের দীর্ঘ সময় পরিবারের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। অনেকে অনেক বছর পর দেশে ফেরেন। কখনোবা কারও ফেরা হয় কফিনে করে লাশ হয়ে। কেউবা ফেরেন নিয়োগকারীর নির্যাতনের শিকার হয়ে। বেতন না পেয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হওয়া নারীর সংখ্যাও কম নয়। তারপরও বিদেশে যাওয়া নারীর সংখ্যায় কোনো কমতি নেই। বিদেশে শ্রমে-ঘামে উপার্জিত অর্থে দেশে তাঁদের পরিবারের উনুন জ্বলে। এই মায়েদের যুক্তি, ছেলেমেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই তাঁরা প্রবাসজীবন বেছে নিয়েছেন।

কখনো কখনো কোনো কোনো নারী প্রবাসে যৌন নির্যাতনের শিকার হন। কোলে সন্তান নিয়ে ফিরতে বাধ্য হন তাঁদের কেউ কেউ। ইন্দোনেশিয়ার স্থানীয় ভাষায় এসব শিশুকে বলা হয় ‘আনাক ওলেহ-ওলেহ’ বা ‘সুভেনির’ (স্মারক) শিশু। অভিবাসী অধিকারকর্মীরা বলেন, এসব স্মারক শিশুকে কলঙ্কের চিহ্ন মনে করে গ্রামে উত্ত্যক্ত করা খুব সাধারণ ঘটনা।

এমন এক স্মারক শিশু ফাতেমা (১৮)। তাঁর মা সৌদি আরব থেকে তাঁকে নিয়ে ফিরে এসেছিলেন লম্বোকে। ফাতেমাকে অনেকেই বলে, ‘তোমার শরীরে আরব রক্ত রয়েছে।’ দারিদ্র্যের কারণে ফাতেমার মা আবারও সৌদি আরবে কাজ করতে যেতে বাধ্য হয়েছেন।