প্রেসিডেন্ট হিসেবে আজ শপথ নিচ্ছেন সেই কৌতুকাভিনেতা

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আজ শপথ নিতে যাচ্ছেন ভলোদিমের জিলেনস্কি। ছবি: রয়টার্স
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আজ শপথ নিতে যাচ্ছেন ভলোদিমের জিলেনস্কি। ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী কৌতুকাভিনেতা ভলোদিমের জিলেনস্কি আজ সোমবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিচ্ছেন। তাঁর হাত ধরে যুদ্ধবিপর্যস্ত ও অর্থনৈতিক সংকটে থাকা দেশটি নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।

গত ২১ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট পিত্রো পরাশেনকাকে হারিয়ে নির্বাচনে জয়ী হন ভলোদিমের জিলেনস্কি (৪১)। এর আগে ১ এপ্রিল নির্বাচনের প্রথম ধাপে এগিয়ে থেকে চমক সৃষ্টি করেন তিনি। প্রথম ধাপের নির্বাচনে রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ এই অভিনেতা নির্বাচনী বুথফেরত সমীক্ষায় (এক্সিট পোল) সবচেয়ে বেশি ভোটে জিতেন। ওই সময় থেকেই জেলেনস্কিকে নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি হয়।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাতটায় শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হবে। প্রথা অনুসারে জেলেনস্কি দেশটির সংবিধানের কপির ওপর হাত রেখে শপথ নেবেন। পাশাপাশি বাইবেলের ওপর হাত রেখেও শপথ নেওয়ার কথা রয়েছে। এরপর জাতির উদ্দেশে তিনি ভাষণ দেবেন। ওই ভাষণে দেশ নিয়ে তাঁর ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানাতে পারেন।

জেলেনস্কি প্রেসিডেন্ট হওয়ার মধ্য দিয়ে তাঁর অভিনীত একটি চরিত্রকেই বাস্তবে রূপ দিলেন। দেশটিতে প্রচারিত ব্যঙ্গাত্মক টিভি শো ‘সার্ভেন্ট অব দ্য পিপল’-এ তাঁর ভূমিকা ছিল একজন সাধারণ ব্যক্তির, যিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশটির প্রেসিডেন্ট হন। তাঁর সেই চরিত্রই যেন বাস্তবে এসে ধরা দিল। এই নির্বাচনে জন্য ব্যাপকভাবে কোনো প্রচারে অংশ নিতে দেখা যায়নি জেলেনস্কিকে। কোনো সমাবেশ করেননি। অল্প কিছু সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তবে তিনি অত্যন্ত সরব ছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। তাঁর শক্ত কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ নেই। শুধু নতুন ও ভিন্ন কিছু করার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে নামেন।

গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর যখন প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন এই কৌতুক অভিনেতা, তখন খুব কম লোকই তা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিল। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের পর ২১ এপ্রিল চূড়ান্ত পর্বে ৭৩ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে পরাশেনকাকে হারিয়ে তিনি জয়ী হন।

পরাশেনকা পাঁচ বছর ইউক্রেনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর সময়ে মস্কোপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে দেশটির পূর্বাঞ্চলের সশস্ত্র সংঘাতে ১৩ হাজারের মতো মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

জেলেনস্কির সমর্থকেরা নতুন এই রাজনীতিককে এক ঝটকা সতেজ বাতাস হিসেবে দেখছেন। তবে সমালোচকদের মতে, তিনি বিদায়ী প্রেসিডেন্ট পরাশেনকার শক্তিশালী প্রতিপক্ষের পাপেট। চূড়ান্ত পর্বের ভোটের আগে এক বিতর্কে দুই সন্তানের জনক জিলেনস্কি বলেছিলেন, ‘আমি রাজনীতিক নই। আমি শুধু একজন সাধারণ মানুষ, এসেছি এই সিস্টেম ভাঙার জন্য।’

চূড়ান্ত পর্বে জয়ের পর জেলেনস্কি ব্যবসায়ী ও সামরিক নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে ২১ শতকের মানসিকতা রয়েছে, এমন ‘স্বচ্ছ’ লোকজনকে নিযুক্ত করবেন।