জাপান সফরে আনন্দভ্রমণের ওপর গুরুত্ব দেবেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে তিন দিনের জাপান সফরে শনিবার টোকিও এসে পৌঁছাবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনের সঙ্গে বাণিজ্যবিরোধকে কেন্দ্র করে পরিবেশ উত্তপ্ত হওয়ার মুখে রাজনৈতিক কিংবা বাণিজ্যিক দেনদরবার থেকে কিছুটা দূরে থেকে জাপান সফরকালে স্রেফ আনন্দে কয়েকটি দিন কাটানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ফলে সফরের নির্ধারিত অনুষ্ঠানসূচির অনেকটা জুড়ে রাখা হয়েছে স্বাগতিক দেশের আতিথেয়তা ও বিনোদনের নানা আয়োজন।

জাপানে এসে পৌঁছার এক দিন পর রোববার সকালে জাপানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গলফ খেলায় যোগ দেবেন ট্রাম্প। এরপর দুজনে তাঁরা সস্ত্রীক জাপানি মল্লযুদ্ধ সুমো দেখতে যাবেন এবং রাতে টোকিওর এক বনেদি রেস্তোরাঁয় তাঁরা খাবার খাবেন।

সোমবার ট্রাম্প জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হবেন। বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে বাণিজ্য, উত্তর কোরিয়া নিয়ে উদ্ভূত সমস্যা ও নিরাপত্তার বিষয়াবলি অন্তর্ভুক্ত থাকলেও তাৎপর্যপূর্ণ কোনো ফল কোনো পক্ষই প্রত্যাশা করছে না। এমনকি যৌথ কোনো বিবৃতি প্রচারিত না–ও হতে পারে বলে জাপানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন। তবে শীর্ষ বৈঠকের পর যৌথ এক সংবাদ সম্মেলনে দুই নেতা উপস্থিত হবেন। সোমবার সন্ধ্যায় ট্রাম্প এবং ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া জাপানের নতুন সম্রাট নারুহিতো ও সম্রাজ্ঞী মাসাকোর দেওয়া নৈশভোজে যোগ দেবেন। সম্রাট নারুহিতো ১ মে সিংহাসনে আরোহণ করার পর ট্রাম্প হবেন জাপানের নতুন সম্রাটের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা প্রথম বিদেশি নেতা।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই সফরে সংসদে ভাষণ দেওয়া অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়নি এবং আনুষ্ঠানিক শীর্ষ বৈঠকের বাইরে অন্য কোথাও তিনি বক্তব্য দেবেন না। তবে সফরের শেষ দিন ২৮ মে সকালে টোকিওর পাশের ইয়োকুসাকা শহরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সপ্তম নৌবহরের ঘাঁটি পরিদর্শন করবেন এবং মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্য ও কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন।

পর্যবেক্ষকেরা মনে করছেন, চীনের সঙ্গে উত্তপ্ত বাণিজ্যবিরোধ চলতে থাকায় বিতর্কিত রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক বিষয়াবলির উত্থাপন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এড়িয়ে যেতে চাইছেন। এ ছাড়া আগামী মাসের শেষ দিকে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে আবারও তাঁর জাপানে আসা নির্ধারিত থাকায় জটিল বিষয়াবলির আলোচনা সেখানে তিনি সেরে নিতে চাইছেন। ফলে জাপানে এই রাষ্ট্রীয় সফরকে অনেকটা তিনি আনন্দভ্রমণ হিসেবে নিচ্ছেন। এটা হবে দায়িত্ব গ্রহণের পর জাপানে ট্রাম্পের দ্বিতীয় সফর। এর আগে ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে সরকারি সফরে ট্রম্প জাপানে এসেছিলেন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁর স্বভাবসুলভ চপলতায় বরাবরের মতো টুইট বার্তায় বেফাঁস কিছু মন্তব্য করে বসেন কি না, তা নিয়ে কিছুটা উদ্বেগ আছে জাপানের। গত বছর যেমন টুইট বার্তায় ট্রাম্প বলেছিলেন, জাপানের নতুন সম্রাটের আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পেয়ে তিনি সম্মানিত বোধ করছেন। যদিও বিষয়টি তখন পর্যন্ত ছিল আলোচনার পর্যায়ে এবং আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত তখনো নেওয়া হয়নি।

এ ছাড়া চলতি বছরে এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প বলেন, উত্তর কোরিয়া সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার কারণে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য তাঁর নাম সুপারিশ করেছেন। জাপানের প্রধানমন্ত্রীর জন্য এটা এক বিড়ম্বনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সংসদে বিরোধীদলীয় সদস্যরা এ নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করলে তিনি অবশ্য সরাসরি তা এড়িয়ে গিয়েছিলেন।