মোদির দ্বিতীয় ইনিংস নিয়ে নানা জল্পনা

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি দ্বিতীয় দফায় শপথ নেবেন ৩০ মে। এর আগে আজ শনিবার বিজেপি সংসদীয় দলের বৈঠকে তিনি নেতা নির্বাচিত হবেন। এরপর নির্বাচিত হবেন এনডিএর নেতা হিসেবে। ওই বৈঠকের পর মোদি যাবেন রাষ্ট্রপতি ভবনে। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে দেখা করে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের দাবি জানাবেন। শপথ অনুষ্ঠানে বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হবে কি না, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে বিদায়ী মন্ত্রিসভার শেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে নির্বাচনী সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী সবাইকে অভিনন্দন জানান। বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে লোকসভা ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব গৃহীত হয়। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী মোদি রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে মন্ত্রিপরিষদের পদত্যাগপত্র তাঁর হাতে তুলে দেন। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ রাতে বিদায়ী মন্ত্রিসভার সদস্যদের নৈশভোজে আপ্যায়িত করেন।

দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের আগে মোদি দুটি ছোট সফর করবেন। ২৭ মে যাবেন নিজ রাজ্য গুজরাট। মায়ের সঙ্গে দেখা করে তাঁর আশীর্বাদ নেবেন। পরদিন যাবেন নির্বাচনী ক্ষেত্র বারানসি, নির্বাচকদের ধন্যবাদ জানাতে।

নির্বাচনী সাফল্যের পর গতকাল শুক্রবার সকালে মোদি যান বর্ষীয়ান নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি ও মুরলি মনোহর যোশির সঙ্গে দেখা করতে। দুই প্রবীণ মার্গদর্শকের সরকারি বাসভবনে গিয়ে তিনি তাঁদের শ্রদ্ধা জানান এবং আগামী দিনের জন্য আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলের সভাপতি অমিত শাহ। ওই বৈঠকের খবর টুইট করে মোদি বলেন, গুরুজনদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের আশীর্বাদ নেওয়াই ভারতীয় জনতা পার্টির পরম্পরা। আদভানি সম্পর্কে তিনি বলেন, বিজেপির আজকের সাফল্য তাঁর মতো মহান ব্যক্তিদেরই অবদান। অক্লান্ত পরিশ্রম করে তাঁরাই এই দল গড়ে তুলেছেন। যোশি সম্পর্কে তিনি লেখেন, ‘দেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতিতে তাঁর অবদান অসামান্য। দলের বহু সংগঠককেও তিনি তৈরি করেছেন, যাঁদের মধ্যে আমিও একজন।’

রাজধানীতে এ মুহূর্তের জল্পনা আগামী মন্ত্রিসভার বহর ও চরিত্র নিয়ে। সবচেয়ে বড় জল্পনা যাঁকে ঘিরে, তিনি দলের এই অভূতপূর্ব সাফল্যের অন্যতম কারিগর, অমিত শাহ। গান্ধীনগর থেকে এই প্রথম তিনি নির্বাচিত হলেন লোকসভায়। সবার বিশ্বাস, নতুন মন্ত্রিসভায় তিনি গুরুদায়িত্ব পাচ্ছেন। কোন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র নাকি প্রতিরক্ষা, আলোচনা চলছে তা নিয়ে। এই আলোচনার খেই ধরেই উঠে আসছে অন্য প্রশ্নগুলো। বিদায়ী মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন রাজনাথ সিং। তাঁকে তাহলে কোন মন্ত্রণালয়ে আনা হবে? অমিত শাহ মন্ত্রী হলে দলের সভাপতিই বা তাহলে কে হবেন? রাজনাথ সিং অথবা নিতিন গড়কড়ি? এই দায়িত্ব তাঁরা দুজনেই আগে পালন করেছেন। নাকি নতুন সভাপতি হতে পারেন বিদায়ী স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নাড্ডা? প্রশ্নের শেষ নেই।

>গুরুদায়িত্ব পাচ্ছেন অমিত শাহ
কংগ্রেসে হতাশা
রাহুল ইস্তফা দিলেও দল গ্রহণ করবে না।

প্রবল আলোচনায় রয়েছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও। দুজনেই অসুস্থ, কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে। কেউই এবার ভোটে দাঁড়াননি। অরুণ জেটলির অনুপস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেছেন পীযূষ গোয়েল। তাঁকেই পূর্ণ সময়ের জন্য এই মন্ত্রণালয়ে এনে অরুণ জেটলিকে হালকা কোনো দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। অসুস্থতার জন্যই সুষমা খুব বেশি দৌড়ঝাঁপ করতে পারেন না। তাঁকে সরানো হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাকে করা হবে চলছে সেই জল্পনাও। এবারের ভোটের ‘জায়ান্ট কিলার’ অবশ্যই স্মৃতি ইরানি। আমেথিতে রাহুল গান্ধীকে হারিয়ে তিনি সবাইকে চমকে দিয়েছেন। এর পুরস্কার মোদি তাঁকে দেবেন বলেই ধারণা। বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের পরিবর্তে গুরুত্বপূর্ণ কোনো দায়িত্ব তিনি পেতে চলেছেন।

অর্থ, প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র—এই চারটিই প্রথম সারির মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীসহ এই চার মন্ত্রীই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটির সদস্য। এই চার মন্ত্রণালয় অবশ্যই মোদি নিজের দলের কাছেই রাখবেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও মনে করা হচ্ছে, শিবসেনা ও সংযুক্ত জনতা দলসহ অন্য শরিকদেরও তিনি অবহেলা করবেন না। এ বছরের শেষ দিকে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও ঝাড়খন্ড বিধানসভার নির্বাচন। সেদিকে নজর রেখেই মন্ত্রিসভার বহর ঠিক করা হবে। মন্ত্রণালয় নিয়ে গতবার শিবসেনার সঙ্গে বিজেপির খুব মন-কষাকষি হয়েছিল। এবার তা যাতে না হয়, সেদিকে অবশ্যই মোদির নজর থাকবে।

একই রকম নজরে থাকবে পশ্চিমবঙ্গ। এ রাজ্যে ভোট ২০২১ সালে। কিন্তু যে অভাবিত সাফল্য বিজেপি এবার পেয়েছে, তাতে অবশ্যই এই রাজ্যকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ মেদিনীপুর থেকে জিতেছেন। তিনি, আসানসোল থেকে দ্বিতীয়বার জয়ী বাবুল সুপ্রিয় নাকি এই জয়ের অন্যতম কারিগর মুকুল রায়—কে প্রাধান্য পাবেন তা নিয়ে চলছে আলোচনা।

এদিকে অশান্তি বাড়ছে কংগ্রেসে। আজ বসছে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক। সেই বৈঠকে নির্বাচনী বিপর্যয়ের ময়নাতদন্ত হবে। তার আগেই শুরু হয়েছে পদত্যাগের হিড়িক। বিপর্যয়ের দায়িত্ব ঘাড়ে নিয়ে উত্তর প্রদেশ সভাপতির পদ ছেড়ে দিয়েছেন রাজ বব্বর। একই পথে হেঁটেছেন ওডিশার কংগ্রেস সভাপতি নিরঞ্জন পট্টনায়ক এবং কর্ণাটকে দলের প্রচারের দায়িত্বপ্রাপ্ত এইচ কে পাতিল। রাহুল গান্ধীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ব্যর্থতার দায় ঘাড়ে নিয়ে তিনি ইস্তফা দিচ্ছেন কি না। জবাবে তিনি বলেছিলেন, সেটা তাঁর ও ওয়ার্কিং কমিটির বিষয়। দলীয় সূত্রের খবর, রাহুল ইস্তফা দিলেও ওয়ার্কিং কমিটি তা গ্রহণ করবে না।