জাতীয়তাবাদী উত্থান হলেও নিয়ন্ত্রণ এখনো ইইউপন্থীদের হাতেই

নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী দলগুলোর উত্থান হলেও নিয়ন্ত্রণ এখনো ইইউর সপক্ষের দলগুলোর হাতেই। ছবি: রয়টার্স
নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী দলগুলোর উত্থান হলেও নিয়ন্ত্রণ এখনো ইইউর সপক্ষের দলগুলোর হাতেই। ছবি: রয়টার্স

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পার্লামেন্টের নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী দলগুলোর উত্থান হলেও নিয়ন্ত্রণ এখনো ইইউর সপক্ষের দলগুলোর হাতেই। আজ সোমবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইইউ নিয়ে সংশয়ে ভোগা দলগুলো প্রথমবারের মতো মোট আসনের এক-চতুর্থাংশে জয় পেয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এখনো নিয়ন্ত্রণ রয়েছে উদারবাদী দলগুলোর হাতেই।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, গতকাল রোববার ইতালি, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও পোল্যান্ডে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থী ও জাতীয়তাবাদী দলগুলো শীর্ষ স্থান দখল করলেও ইইউ আইনসভার হিসেব বদলে দেওয়ার মতো কিছু করতে পারেনি। মূলত রাশিয়া ও চীনের প্রভাব বৃদ্ধি এবং অননুমেয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের এই সময়ে ইউরোপের একসঙ্গে থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরতে সমর্থ হওয়ার কারণেই জাতীয়তাবাদী উত্থানের মধ্যেও আইনসভার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে রাখতে পেরেছেন উদারবাদীরা। আজ সোমবার প্রকাশিত ফল অনুযায়ী, মোট ৭৫১ আসনের মধ্যে সমাজতন্ত্রী, গ্রিন পার্টি, উদারবাদী ও রক্ষণশীল দলগুলো পেয়েছে ৫০৭ আসন। ফলে নিয়ন্ত্রণ এখনো ইইউর সপক্ষের দলগুলোর হাতেই রয়েছে।
ইইউভুক্ত ২৮টি দেশে পাঁচ দিন ধরে গৃহীত ভোটে ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে। এই ভোটের মধ্য দিয়ে ভোটাররা এক নতুন বার্তা দিয়েছেন। মোটাদাগে ইইউর সপক্ষের শক্তিই নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থাকলেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয়েছে। সিএনএন জানাচ্ছে, নির্বাচনে সেন্টার-লেফট প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স ৭০টিরও বেশি আসন হারিয়েছে। সোশ্যালিস্ট অ্যান্ড ডেমোক্র্যাটস (এসঅ্যান্ডডি) ও ইউরোপিয়ান পিপলস পার্টির (ইপিপি) এ জোট এবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাচ্ছে। ফলে এসঅ্যান্ডডির মূল নেতা স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ও ইপিপি নেতা জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল দুর্বল অবস্থানে রয়েছেন। অন্যদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর নেতৃত্বাধীন উদার-মধ্যপন্থীদের জোট অ্যালায়েন্স অব লিবারেলস অ্যান্ড ডেমোক্র্যাটস ফর ইউরোপ (এএলডিইঅ্যান্ডআর) রয়েছে শক্তিশালী অবস্থানে। ফলে ইইউর গুরুত্বপূর্ণ পদের মনোনয়নের ক্ষেত্রে এ জোট এখন মুখ্য ভূমিকা রাখবে।
ফ্রান্সে কট্টর ডানপন্থীরা ভোটের হিসাবে এগিয়ে থাকলেও ২০১৪ সালের তুলনায় তাদের ভোট বরং কমেছে। ২০১৪ সালে কট্টর ডানপন্থীরা ২৪ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল। কিন্তু এবার এ ভোট ২৩ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে, যদিও তা এমানুয়েল মাখোঁর নেতৃত্বাধীন ফরাসি জোটের চেয়ে বেশি। এ ভোট হার ফ্রান্সের রাজনীতির দিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। কারণ, হলুদ জ্যাকেট আন্দোলন থেকে কট্টর ডানপন্থীদের যে ভীষণ উত্থানের আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তা এই ভোট হার প্রশ্নবিদ্ধ করে। এর অর্থ হচ্ছে, প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ফরাসি জনগণ আর আস্থা পাচ্ছে না। পুরো ইইউ নির্বাচনেই ইউরোপের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করছে।
তবে ইইউ আইনসভায় মোটাদাগে উদারপন্থীদের অবস্থান পোক্ত হওয়ায় পরিবেশবান্ধব আইনসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়ার পথ খুলে যাচ্ছে। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে বিনিয়োগকারীদের। বিশ্লেষকদের মতে, সত্যিই এ ধরনের অবস্থা তৈরি হলে বিনিয়োগ সরে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানবিরোধী যে আওয়াজ উঠছে ইউরোপজুড়ে, তা প্রতিরোধেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে ইইউপন্থী দলগুলো। তবে সার্বিকভাবে আইনসভায় কট্টরদের একটি উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধিত্ব থাকায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে কিছু জটিলতা তৈরি হতে পারে অভ্যন্তরীণ বিরোধিতার কারণে।