সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের পথে এবার গজলডোবা

জলডোবায় তিস্তা বাঁধ। ফাইল ছবি
জলডোবায় তিস্তা বাঁধ। ফাইল ছবি

সিঙ্গুরের পথ ধরে জলপাইগুড়ি জেলার গজলডোবায় শুরু হয়েছে জমি অধিগ্রহণবিরোধী আন্দোলন। গজলডোবা তিস্তা নদীর পারের একটি এলাকা। গজলডোবায় সিকিম থেকে তিস্তা নদী এসে সমতলে নেমেছে। এখানে তৈরি হয়েছে তিস্তা বাঁধ। তৈরি হচ্ছে একটি পর্যটন কেন্দ্র। রাজ্য সরকার এ পর্যটন প্রকল্পের নাম দিয়েছে ‘ভোরের আলো’। এখানে গড়া হবে হোটেল, আবাসিক এলাকা, হেলিপ্যাড, পার্ক ইত্যাদি। ইতিমধ্যে হেলিপ্যাডের জন্য ২ দশমিক ৪৬ একর জমি অধিগ্রহণের নোটিশ দিয়েছে রাজ্য পর্যটন দপ্তর। এ ছাড়া আরও ৬০০ একর জমি অধিগ্রহণ করে গড়া হবে ‘ভোরের আলো’ পর্যটনশিল্পের নানা প্রকল্প।

সরকারের এ ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হয়েছে গজলডোবার ওই অঞ্চলের জমির মালিকেরা। তাঁরা অভিযোগ তুলছেন, এ জমি সাবেক বামফ্রন্ট সরকার গরিব চাষিদের পাট্টা দিয়েছিল। জমিতে তারা কোনোভাবে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে দেবেন না।

জমি রক্ষার দাবিতে গজলডোবায় আন্দোলন শুরু করেছেন কৃষকেরা। এতে নেতৃত্বে দিচ্ছেন বিজেপির কৃষাণ ও খেতমজুর মোর্চা। তারা বলছে, তিন ফসলি উর্বর জমিকে তারা কিছুতেই অধিগ্রহণ করতে দেবে না। এ কারণে বিপাকে পড়ে গেছে রাজ্য সরকার।

গতকাল শুক্রবার গজলডোবা এলাকায় প্রকল্পের অগ্রগতি দেখতে যান রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। তাঁকে দেখে এলাকার কৃষকেরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। স্লোগান দেন ‘গো-ব্যাক মন্ত্রী’। কালো পতাকা দেখান।

মন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দিলে বিক্ষুব্ধ কৃষকেরা ঘোষণা দেন, সরকারকে লিখিতভাবে আলোচনার বিষয়বস্তু জানিয়ে কৃষকদের চিঠি দিতে হবে। তবে তাঁরা কোনোক্রমেই ওই জমিতে পর্যটন প্রকল্প বা হেলিপ্যাড তৈরি করতে দেবেন না।

গজলডোবার এ আন্দোলন সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম আন্দোলনের কথা মনে করিয়ে দেয়। ২০০৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সিঙ্গুরে ৯৯৭ একর ফসলি জমি অধিগ্রহণ করতে চেয়েছিল টাটা গোষ্ঠী। সস্তায় ন্যানো গাড়ি তৈরির কারখানা গড়ার জন্য তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার টাটাকে ৯৯৭ একর জমি লিজ দিয়েছিল। জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে তীব্র অধিগ্রহণবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পাশাপাশি ওই সময় পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামে রসায়ন শিল্পাঞ্চল গড়ার জন্য ১৪ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করার উদ্যোগ নেয় রাজ্য সরকার। সেখানেও গড়ে ওঠে আন্দোলন।

মমতার তীব্র আন্দোলনের মুখে পড়ে টাটা গোষ্ঠী সিঙ্গুরে তাদের প্রস্তাবিত ন্যানো গাড়ির কারখানা সিঙ্গুর থেকে গুজরাটের সানন্দে নিয়ে যায়। এ জমি নিয়ে টাটাদের দায়ের করা মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সেই জমি ফিরিয়ে দেওয়া হয় কৃষকদের।

সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনে বিজয়ের জেরে মমতা ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে প্রচুর জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্ষমতায় আসেন। হটিয়ে দেন বামফ্রন্টের ৩৪ বছর শাসনকে। সিঙ্গুর হয়ে ওঠে মমতার বিজয়ের সূতিকাগার।