আরব বসন্তে প্রতিবাদ, তরুণকে ফাঁসি দেবে সৌদি আরব

আরব বসন্তের এক র‌্যালির নেতৃত্ব দেওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে মৃতদণ্ড হতে চলেছে মুর্তাজা কুরেইরিস নামের তরুণের। বর্তমানে সৌদি কারাগারে রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে তাঁকে রাখা হয়েছে। তার ফাঁসি কার্যকর হলে সৌদি আরবের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী কারও মৃতুদণ্ড দেওয়া হবে।

মুর্তাজা কুরেইরিসের বাড়ি সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলে। র‌্যালিতে অংশ নেওয়ার সময় তার বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সে সময় সৌদি সরকার অল্প বয়সী বালকদের জড়ো হওয়ার এ বিষয়টি ‘পর্যবেক্ষণ’ করে। ওই বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে তিন বছর পর মুর্তাজাকে গ্রেপ্তার করে সৌদি পুলিশ। তখন মুর্তাজার বয়স ছিল ১৩। ৫ বছর ধরে কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে তাকে।

মুর্তাজা কুরেইরিসকে মৃত্যুদণ্ড দিতে যাচ্ছে সৌদি। ছবি: সিএনএন
মুর্তাজা কুরেইরিসকে মৃত্যুদণ্ড দিতে যাচ্ছে সৌদি। ছবি: সিএনএন

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে আরব বসন্তে উত্তাল কয়েকটি দেশ। সৌদি রাজতন্ত্রের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের দাবিতে ওই সময় দেশজুড়ে বিক্ষোভের সূচনা হয়। এরই অংশ হিসেবে মুর্তাজা কুরেইরিস বন্ধুদের নিয়ে সাইকেল নিয়ে রাজপথে নামে। ৩০ জন বন্ধুর দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছিল মুর্তাজা কুরেইরিস। সে চিৎকার করে বলছে, ‘সৌদিতে সবাই মানবাধিকার পরিস্থিতি সমুন্নত দেখতে চায়।’ মুর্তাজা কুরেইরিসের দুঃসাহস সৌদি কর্তৃপক্ষের নজর এড়ায়নি।

২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় সৌদি রাজতন্ত্রের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের দাবিতে বন্ধুদের নিয়ে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয় মুর্তাজা কুরেইরিস। ছবি: সিএনএন
২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় সৌদি রাজতন্ত্রের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্রের দাবিতে বন্ধুদের নিয়ে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেয় মুর্তাজা কুরেইরিস। ছবি: সিএনএন

মুর্তাজা কুরেইরিসের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের অভিযোগ, ২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় সৌদিতে গণতন্ত্রের দাবিতে বন্ধুবান্ধব জড়ো করে বিক্ষোভে নেমেছিল মুর্তাজা। এক সাইকেল র‌্যালিতে অংশ নিয়ে সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিল তারা। মুর্তাজা কুরেইরিস ‘সন্ত্রাসী গ্রুপ’ নিয়ন্ত্রণ করছে। যে অপরাধের শাস্তি শিরশ্ছেদ বা ফাঁসির মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মুর্তাজার ভাই আলী কুরেইরিস মোটরসাইকেলেযোগে সৌদির পূর্বাঞ্চলীয় শহর আওয়ামিয়ার এক থানায় পেট্রলবোমা ছুড়ে মারেন। সে সময় তার সঙ্গে মুর্তাজাও ছিল। এ ঘটনার ৩ বছর পর মুর্তাজা কুরেইরিসকে বাহরাইন সীমান্তে গ্রেপ্তার করে সৌদি আরব। ওই দিন পরিবারের সঙ্গে সৌদি ছেড়ে প্রতিবেশী বাহরাইনে পালিয়ে যাচ্ছিল মুর্তাজা।

এ ছাড়া বিক্ষোভের সময় সহিংসতা, নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর পেট্রলবোমা হামলায় সহযোগিতা, ভাইয়ের জানাজার সময় পদযাত্রা বের করার অভিযোগও আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সিএনএনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সৌদি রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় মুর্তাজা কুরেইরিসের বড় ভাই আলী কুরেইরিসকে ২০১২ সালে হত্যা করে সৌদি আরবের পুলিশ। জোর করে কুরেইরিসের কাছ থেকে অপরাধের স্বীকারোক্তি সৌদি সরকার আদায় করে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সাইকেল নিয়ে রাজপথে মুর্তাজা কুরেইরিস। ৩০ জন বন্ধুর দলটির নেতৃত্বে কুরেইরিস। ওই দিন চিৎকার করে সে বলেছে, ‘সৌদিতে সবাই মানবাধিকার পরিস্থিতি সমুন্নত দেখতে চায়।’  ছবি: সিএনএন
সাইকেল নিয়ে রাজপথে মুর্তাজা কুরেইরিস। ৩০ জন বন্ধুর দলটির নেতৃত্বে কুরেইরিস। ওই দিন চিৎকার করে সে বলেছে, ‘সৌদিতে সবাই মানবাধিকার পরিস্থিতি সমুন্নত দেখতে চায়।’ ছবি: সিএনএন

চলতি বছরের এপ্রিলে সৌদি আরব প্রায় ৩৭ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।

আরব বসন্তের ঘটনায় যদি সৌদি কর্তৃপক্ষ কুরেইরিসকে ফাঁসির দণ্ড দেয়, তাহলে সে হবে ২০১৯ সালে সৌদিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া চতুর্থ কিশোর, যাদের বয়স ১৯–এর ঘরে। এপ্রিলে বাকি তিনজনকে (৩০ জনের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া) একই অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।