ইরানের জন্য নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফাইল ছবি

টান টান উত্তেজনার মধ্যে ইরানের জন্য নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সবশেষ উপসাগরীয় এলাকায় তেলবাহী ট্যাংকারে হামলা ও ড্রোন ভূপাতিত করার ঘটনায় ইরানকে দায়ী করে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে নিষেধাজ্ঞাগুলো কী ধরনের, সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানাননি। এদিকে ইরান তেলবাহী ট্যাংকারে হামলার কথা অস্বীকার করলেও মার্কিন সামরিক ড্রোনের আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে তা ভূপাতিত করার কথা স্বীকার করেছে।

২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ছয়টি দেশের করা পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র গত বছর নিজেদের প্রত্যাহার করে ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ওই ঘটনা থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পারমাণবিক চুক্তিতে সই করা অন্য পাঁচটি দেশ যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীনের হস্তক্ষেপ চায় চীন। ইরান মার্কিন স্বার্থে হামলা করতে পারে—নিজ দেশের এমন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত মাসে ইরানকে লক্ষ্য করে মধ্যপ্রাচ্যে রণসাজে সজ্জিত হয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে গত মে মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চারটি ট্যাংকারে হামলা এবং জুন মাসে ওমান উপসাগরীয় এলাকায় জাপান ও নরওয়ের মালিকানাধীন দুটি তেলবাহী ট্যাংকারে হামলার ঘটনায় ইরানকে দায়ী করে মধ্যপ্রাচ্যে আরও এক হাজার সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার মার্কিন সামরিক ড্রোন ভূপাতিত করার ঘটনায় পরদিন ইরানে পাল্টা হামলা চালানোর সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়ার পরও শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করেন ট্রাম্প।

বিবিসি অনলাইন ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল শনিবার বলেছেন, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ইরানকে দমাতে নতুন করে আরও ‘বড়’ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছেন তিনি। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছি। এ ব্যাপারে আমরা দ্রুত কাজ করছি।’

ট্রাম্প বলেন, ‘ইরান যদি সমৃদ্ধ জাতি হতে চায়...তা ঠিক আছে। কিন্তু তাঁরা কখনো তা করতে যাবে না। যদি তারা কোনো কিছু নিয়ে ভেবে থাকে, তা হলো পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে পারমাণবিক অস্ত্রে সমৃদ্ধ হওয়া।’ ওই সময় ২০১৬ সালে নিজের নির্বাচনী স্লোগান তুলে এনে তিনি বলেন, ‘চলুন, ইরানকে আবার মহৎ বানাই।’ তাঁর মূল স্লোগানটি ছিল, ‘চলুন, আমেরিকাকে আবার মহৎ বানাই’। পরে এক টুইটে ট্রাম্প বলেন, কাল সোমবার অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি কার্যকর হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের চলমান নিষেধাজ্ঞার মধ্যে ইরান এখন অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। ২০১৫ সালে ছয়টি পরাশক্তির সঙ্গে ঐতিহাসিক চুক্তি অনুসারে ইরান পারমাণবিক উন্নয়ন কর্মসূচি কমিয়ে আনে। দেশটি ইউরেনিয়াম সীমিত রাখার ব্যাপারেও সম্মত হয়। ইউরেনিয়াম পারমাণবিক চুল্লি ও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এসব পদক্ষেপের বিনিময়ে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ওই সব দেশ। তবে গত বছর ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করে নেন। ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদেশগুলোকেও ইরান থেকে তেল কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের চাপ দেয়। এতে অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়ে ইরান। কারণ, ইরানের অর্থনীতি তেলের ওপর নির্ভরশীল। এ কারণে দেশটি চুক্তি ভঙ্গ করে ইউরেনিয়ামের মজুত বাড়ানোর হুমকি দিয়েছে। ইরান জানিয়েছে, চুক্তিতে সই করা অন্য দেশগুলো মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আগামী ৮ জুলাইয়ের মধ্যে তাঁরা নিজেদের ইউরেনিয়াম মজুত রাখার সীমাও লঙ্ঘন করবে।

এই পরিস্থিতির মধ্যে মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করার ঘটনা নতুন করে ক্ষুব্ধ করে তোলে যুক্তরাষ্ট্রকে। ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড জানায়, হরমুজ প্রণালির কাছে ইরানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক ড্রোন বৃহস্পতিবার ভোরে তারা ভূপাতিত করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ নাকচ করে বলেছে, আন্তর্জাতিক সীমার মধ্যেই অবৈধভাবে তাদের ড্রোনটি ভূপতিত করেছে ইরান। ট্রাম্পও দাবি করেন, ড্রোনটি আন্তর্জাতিক আকাশসীমা থেকে ধ্বংস করেছে ইরান। তবে ইরানের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগাছি বলেন, মার্কিন ড্রোনের আকাশসীমা লঙ্ঘনের ‘শক্ত প্রমাণ’ রয়েছে। ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আমির আলী হাজিজাদেহ বলেছেন, ‘ড্রোনের ঠিক পাশেই ৩৫ যাত্রী নিয়ে মার্কিন আরেকটি সামরিক উড়োজাহাজ যাচ্ছিল। চাইলে আমরা সেটিকেও ভূপতিত করতে পারতাম। কিন্তু করিনি।’

গত শুক্রবার ইরানে পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নিয়েও পরে তা বাতিল করার কারণ তুলে ধরে ট্রাম্প বলেন, সাধারণ মানুষের প্রাণ রক্ষায় তিনি ইরানে হামলা করা থেকে সরে এসেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা হামলায় ১৫০ জনের প্রাণহানি ঘটতে পারত।

এর আগে ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ নয়, সমঝোতার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এ মাসের শুরুতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও শর্তহীন আলোচনার প্রস্তাব দেন। তবে এটাকে ‘শব্দ নিয়ে খেলা’ উল্লেখ করে আলোচনার প্রস্তাব বাতিল করে ইরান। ফলে, এ সংকট সহজে মিটবে না বলেই মনে হচ্ছে। এর মধ্যে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপে ট্রাম্পের ঘোষণা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমিয়ে আনার পথ আরও রুদ্ধ করে দিল।