আবার সীমান্তে এলে যুক্তরাষ্ট্রকে কঠোর জবাব দেবে ইরান

তেহরানের সংসদ অধিবেশনে নেন স্পিকার আলী লারিজানি। ছবি: রয়টার্স।
তেহরানের সংসদ অধিবেশনে নেন স্পিকার আলী লারিজানি। ছবি: রয়টার্স।

আবারও সীমান্তে প্রবেশ করলে যুক্তরাষ্ট্রকে কঠোর জবাব দেওয়া হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছে ইরান। সংসদের স্পিকার আলী লারিজানির বরাতে আজ বৃহস্পতিবার আধা সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিমের এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়েছে। মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করার পর থেকে তেহরানের সঙ্গে দেশটির চলমান সংকটের মাত্রা বেড়ে গেছে।

লারিজানি গতকাল বুধবার বলেছেন, ‘ইরানের সীমানায় কোনো ধরনের আগ্রাসন মেনে নেওয়া হবে না। ড্রোন হামলার শিকার হয়ে এ ব্যাপারে ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করল যুক্তরাষ্ট্র। এ ধরনের ভুল আবার করলে আমাদের পক্ষ থেকে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।’

ইরানের দাবি, মানবহীন ড্রোনটি তাদের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছিল। ওয়াশিংটন অবশ্য এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। এর প্রতিশোধ নিতে বিমান হামলার আদেশ দিয়েও অসংখ্য মানুষের জীবনের হুমকি থাকায় শেষ মুহূর্তে তা প্রত্যাহার করে নেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে তেহরানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। গতকাল বুধবার ট্রাম্প বলেছেন, ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে খুব দ্রুতই যুদ্ধ শুরু হতে পারে। তবে সামরিক সংঘর্ষ এড়াতে পরবর্তীতে এ অবস্থান থেকে সরে আসেন তিনি।

ইরানের নিউইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার কেন্দ্র (সিএইচআরআই) জানায়, সারা বিশ্ব জুড়ে ইরানের ১১৬ জন মানবাধিকার কর্মী এবং দল তেহরানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সামরিক সংঘর্ষের বিধ্বংসী ফলাফলের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। কর্মী, আইনজীবী এবং সাংবাদিকদের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ লাখো সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন করে তুলবে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। এর জের ধরে প্রতিবেশী দেশগুলোতেও সহিংস সাম্প্রদায়িক বেসামরিক দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে।

২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ছয়টি দেশের করা পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র গত বছর নিজেদের প্রত্যাহার করে ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ওই ঘটনা থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পারমাণবিক চুক্তিতে সই করা অন্য পাঁচটি দেশ যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীনের হস্তক্ষেপ চায় ইরান। ইরান মার্কিন স্বার্থে হামলা করতে পারে—নিজ দেশের এমন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত মাসে ইরানকে লক্ষ্য করে মধ্যপ্রাচ্যে রণসাজে সজ্জিত হয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে গত মে মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চারটি ট্যাংকারে হামলা এবং জুন মাসে ওমান উপসাগরীয় এলাকায় জাপান ও নরওয়ের মালিকানাধীন দুটি তেলবাহী ট্যাংকারে হামলার ঘটনায় ইরানকে দায়ী করে মধ্যপ্রাচ্যে আরও এক হাজার সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার মার্কিন সামরিক ড্রোন ভূপাতিত করার ঘটনায় পরদিন ইরানে পাল্টা হামলা চালানোর সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়ার পরও শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করেন ট্রাম্প।

তেহরানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনা আরও উসকে দিতে ট্রাম্প গত সোমবার ইরানের প্রধান সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিসহ দেশটির শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘জঘন্য ও নির্বোধ’ বলে উল্লেখ করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি।