বরিস কি অঘটন এড়াতে পারবেন?

বরিস-জনসন
বরিস-জনসন

‘বেশ বিধ্বংসী বোলিং হচ্ছে। কিন্তু আমি এখনো ক্রিজে আছি। সন্দেহবাদীদের নিশ্চিত করতে চাই, আমি বাউন্সারে ভীত হব না, রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতেও খেলব না। সজোরে আঘাত পেয়ে বল মাঠের চারদিকে গড়াবে। এটাই আমার স্টাইল।’ যুক্তরাজ্যের আয়রন লেডি খ্যাত প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার পদত্যাগে বাধ্য হওয়ার একদিন আগে (১২ নভেম্বর, ১৯৯০) ক্রিকেটীয় উপমা টেনে এমন জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।

পরদিন (১৩ নভেম্বর) পদত্যাগী উপপ্রধানমন্ত্রী জেওফরি হাউ পাল্টা বক্তব্যে বললেন, ‘বিষয়টি বরং এমন যে, আপনার ওপেনিং ব্যাটসম্যানদের ক্রিজে পাঠালেন আর সঙ্গে সঙ্গেই বোল্ড হয়ে ফিরল। কেননা খেলা শুরুর আগেই দলের ক্যাপটেন তাঁদের ব্যাট ভেঙে দিয়েছেন।’

ঠিক ওই সময়টির অপেক্ষায় ছিলেন ১৯৮৬ সালে থ্যাচারের সঙ্গে বিরোধের জেরে মন্ত্রিসভা ত্যাগ করা মাইকেল হেসেলটাইন। সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেসেলটাইন ১৪ নভেম্বর থ্যাচারের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেন। পদত্যাগে বাধ্য হন যুক্তরাজ্যের ইতিহাসের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। কনজারভেটিভ দলে প্রভাবশালী মাইকেল হেসেলটাইনকে মনে করা হচ্ছিল ‘অপেক্ষমাণ প্রধানমন্ত্রী’। কিন্তু অপেক্ষার অবসান হলেও হেসেলটাইন শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি।

তিন দশক আগের ওই নির্বাচনের সঙ্গে এবারের ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের বেশ মিল। এখনো কনজারভেটিভ দল ক্ষমতায়। নেতৃত্বে দেশটির দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী, ব্রেক্সিট নিয়ে গৃহবিবাদের জের ধরে যাঁকে চলে যেতে হচ্ছে। থেরেসার উত্তরসূরি নির্বাচনে আলোচিত প্রার্থী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। যিনি ব্রেক্সিট নিয়ে বিরোধের জেরে ২০১৮ সালে থেরেসার মন্ত্রিসভা ছাড়েন। দাপুটে রাজনীতিক বরিসকেও দেশটির ‘অপেক্ষমাণ প্রধানমন্ত্রী’ বলে ভাবা হচ্ছে বেশ আগ থেকেই।

তবে কি মাইকেল হ্যাসেলটাইনের সঙ্গে বরিসের সবকিছু মিলে যাচ্ছে? এ প্রশ্নকে ঘিরেই এখন যত কৌতূহল। কেননা মার্গারেট থ্যাচারের উত্তরসূরি নির্বাচনে প্রথম ব্যালটে এগিয়ে ছিলেন হেসেলটাইন। কিন্তু দ্বিতীয় ব্যালটে হুট করে প্রতিযোগিতায় নাম লেখানো তৎকালীন চ্যান্সেলর জন মেজর থেকে পিছিয়ে পড়েন তিনি। প্রভাবশালী ও দাপুটে হেসেলটাইন হেরে যান অনেকটা আনকোরা জন মেজরের কাছে। যদিও নির্বাচন পদ্ধতি তখন কিছুটা ভিন্ন ছিল।

এবার বরিস জনসন বিপুল ভোটের ব্যবধানে চূড়ান্ত দুইয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট কোনো হাঁকডাক ছাড়াই প্রতিযোগিতায় এসেছেন। হান্টের শান্ত ভাব, হিসাবী বক্তব্য এবং পরিস্থিতি বুঝে আক্রমণাত্মক হওয়ার ভঙ্গি ইতিমধ্যে আলাদা নজর কাটতে শুরু করেছে। অন্যদিকে হুট-হাট কথা বলা, যখন-তখন হাস্যরসে মাতা বরিস জনসন নেতা হিসেবে কতটা ‘সিরিয়াস’ সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বরিসের বান্ধবী-কাণ্ড সহ ব্যক্তিগত মনোভাব নিয়ে নানা সমালোচনা।

ওয়েস্টমিনস্টারের রাজনীতি নিয়ে সবাই যা ভাবে, তার উল্টোটা হওয়ার নজির আছে আরও অনেক। ২০১৬ সালের ব্রেক্সিট গণভোটের কথাই ধরুন। কে ভেবেছিল বিচ্ছেদপন্থীদের জয় হবে? অথবা ২০১৭ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচন। কেবল বিরোধী লেবার দলকে কোণঠাসা করতে প্রধানমন্ত্রী মে কোনো প্রয়োজন ছাড়াই ওই নির্বাচন দিয়েছিলেন। সবগুলো জরিপ ক্ষমতাসীনদের বড় বিজয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। কিন্তু ফলাফলে দেখা গেল—লেবার দল নয়, বরং ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দল সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে।

ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের চলমান নেতা ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে বরিস জনসন দাপটের সঙ্গে এগিয়ে আছেন। কিন্তু তিনি অঘটন এড়াতে পারেন কি না সেটাই দেখার বিষয়।