আন্দোলনকারীদের চরম সহিংসতার নিন্দা ল্যামের

হংকংয়ে বিক্ষুব্ধ জনতার প্রতিবাদের তীব্র নিন্দা জানান ক্যারি ল্যাম। ছবি: বিবিসি।
হংকংয়ে বিক্ষুব্ধ জনতার প্রতিবাদের তীব্র নিন্দা জানান ক্যারি ল্যাম। ছবি: বিবিসি।

বিক্ষুব্ধ জনতার চরম সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছেন হংকংয়ের নেতা ক্যারি ল্যাম। গতকাল সোমবার রাতে ওই অঞ্চলের সংসদ ঘিরে প্রতিবাদের ঝড় তুলে ভাঙচুর চালায় আন্দোলনকারীরা।

মূল প্রতিবাদ থেকে সরে এসে কয়েকজন আন্দোলনকারী গতকাল রাতে বেশ কয়েক ঘণ্টা আইনসভা কাউন্সিল (লেগকো) দখল করে রাখে। তাদের সমর্থন দেয় উপস্থিত হাজারো জনতা। অনুপ্রবেশকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ। ভোর হওয়ার আগে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে এ ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানান হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম।

ক্যারি ল্যাম বলেন, এ ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এতে অনেকেরই আহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। পুলিশ কমিশনার লো ওয়াই-চাংয়ের পাশে বসে তিনি বলেন, ‘যারা লেগকোতে অনুপ্রবেশ করেছে, আমরা তাদের এ কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। হংকংয়ে আইনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নেই।’

গতকাল ছিল হংকংকে ব্রিটেনের কাছ থেকে চীনা শাসনের কাছে হস্তান্তরের ২২ বছর পূর্তি। এ উপলক্ষে গতকাল শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের পরিকল্পনা করা হয়। সাধারণত প্রতিবছর বার্ষিক গণতন্ত্রকামী মিছিলের আয়োজন করে দিনটি উদ্‌যাপন করা হয়। তবে বিতর্কিত অপরাধী প্রত্যর্পণ আইনকে কেন্দ্র করে এ বছর অস্থিরতা বিরাজ করছে হংকংয়ে। নতুন এ আইন অনুযায়ী চীন চাইলে সন্দেহভাজন অপরাধীদের নিজ ভূখণ্ডে নিয়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারবে।

দুপুরের দিকে মূল বিক্ষোভ থেকে সরে আসে অনেক আন্দোলনকারী। সোজা লেগকোর দিকে পা বাড়ায় তারা। বাড়িটি ঘেরাও করে ফেলে। একটু দূর থেকে তাদের কার্যকলাপ দেখছিল শতাধিক জনতা। একপর্যায়ে ভবনের কাচের সদর দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে আন্দোলনকারীরা। ভেতরে ঢুকে তারা হংকংয়ের কেন্দ্রীয় চেম্বারে থাকা প্রতীকের অবমাননা করে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক পতাকা উত্তোলন করে, দেয়ালজুড়ে রং ছিটিয়ে নিজেদের বার্তা লেখে, আসবাবপত্র ভাঙচুর করে।

মধ্যরাতে প্রতিবাদকারীরা ভবনের বাইরে প্লাস্টিকের হেলমেট পরে, ছাতা নাড়িয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় দাঙ্গা পুলিশ এসে তাদের লাঠিপেটা করে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে গণমাধ্যম এবং পুলিশ ছাড়া বাকি সবাই রাস্তা খালি করতে বাধ্য হয়।

এ ঘটনার পর ক্যারি ল্যামের সংবাদ সম্মেলনে উচ্চ স্বরে প্রশ্ন ছুড়তে থাকেন সাংবাদিকেরা। তাঁরা বলেন, জনগণের এই প্রতিক্রিয়ার জন্য ল্যামই দায়ী।

ল্যাম তা অস্বীকার করে সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আজকে যা ঘটেছে, এর নিন্দা জানাতে গোটা সম্প্রদায় আমাদের সমর্থন জানাবে আশা করছি। খুব দ্রুত সমাজকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’

যে আইন নিয়ে এ আন্দোলন, সেখানে বলা হয়েছে, বেইজিং, ম্যাকাও ও তাইওয়ান থেকে পালিয়ে আসা কোনো অপরাধীকে ফেরত চাইলে তাকে ফেরত দিতে হবে; বিশেষত যেসব অপরাধীর বিরুদ্ধে হত্যা ও ধর্ষণের মতো অভিযোগ রয়েছে। তবে হংকংয়ের কর্তৃপক্ষ বলছে, এ আইন নিয়ে এত দুর্ভাবনার কিছু নেই। কারণ, এ অপরাধী প্রত্যর্পণ অনুরোধে সাড়া দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি হংকংয়ের বিচার বিভাগই নেবে। এ আইনের ফলে চীনা বিচারব্যবস্থার অধীনে অন্যায্যভাবে আটক ও বিচারের মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যাবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।