মোদি আনলেন 'গ্রিন বাজেট'!

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করে দেশটির অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন জানালেন, চলতি অর্থবছরেই ভারত তিন লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠবে। ছবি: রয়টার্স
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করে দেশটির অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন জানালেন, চলতি অর্থবছরেই ভারত তিন লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠবে। ছবি: রয়টার্স

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করে দেশটির অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন জানালেন, চলতি অর্থবছরেই ভারত তিন লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠবে। বিশ্ব অর্থনীতির নিরিখে ভারতের স্থান হবে তৃতীয়। বাজেটের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, একবিংশ শতকে ভারতের উন্নয়নের গতিকে এই বাজেট ত্বরান্বিত করবে। বাজেটের থিম হলো ‘গাঁও, গরিব ও কিষান’। প্রধানমন্ত্রীর কথায় যা কিনা ‘গ্রিন বাজেট’।

আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশের অর্থনীতির বহর পাঁচ লাখ কোটি ডলার করে তোলার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। নির্মলা সীতারমনের পেশ করা বাজেট সেই লক্ষ্য পূরণের প্রথম ধাপ বলে মনে করা হচ্ছে। বাজেট পেশের পর মোদি বলেন, দেশীয় উদ্যোগকে এই বাজেট আরও শক্তিশালী করবে, দেশের নারীদের দেশ গঠনের কাজে উৎসাহিত করবে এবং পরিকাঠামোর উন্নয়নের পাশাপাশি সার্বিক কর কাঠামোকে সরল করে তুলবে, যাতে আরও বেশি মানুষ কর দিতে আগ্রহী হন।

নির্মলা নতুন সরকারে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন। দেশের পূর্ণ সময়ের প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী হিসেবে আজ শুক্রবার তিনি বাজেট পেশ করলেন। এত বছর ধরে বাজেট পেশের দিন ঘন মেরুন রঙের চামড়ার ব্রিফকেস নিয়ে অর্থমন্ত্রীরা লোকসভায় ঢুকতেন। সেই প্রথারও ব্যতিক্রম ঘটালেন নির্মলা। ব্রিফকেসের বদলে তাঁর হাতে ছিল লাল ফাইল। এই চমকটুকু ছাড়া তাঁর বাজেটে আর এমন কোনো বিষয় ছিল না, যাতে সাধারণ মানুষ তাৎক্ষণিক তৃপ্তি পেতে পারেন। মধ্যবিত্তদের জন্যও ছিল না তৃপ্তিদায়ক কোনো প্রস্তাব। বরং পেট্রল-ডিজেলের ওপর লিটারপ্রতি ২ রুপি বিশেষ সেস ও শুল্ক বসানো হয়েছে। কিছুদিন ধরে ডলারের তুলনায় রুপির বিনিময়মূল্য স্থিতিশীল হওয়ায় এই বাড়তি আদায়। ডিজেলের দাম বাড়ানোর ফলে সার্বিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটবে। তাতে কষ্ট হবে সাধারণ মানুষের।

মধ্যবিত্তদের আয়করের বোঝা নির্মলা বাড়াননি। আয়কর কাঠামোয় কোনো বদল ঘটানোও হচ্ছে না। ফলে বছরে আয় ৫ লাখ রুপির বেশি হলেই তা করযোগ্য থাকবে। পাশাপাশি আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার নিয়মকানুনও শিথিল করা হয়েছে। শুধু আধার কার্ড থাকলেই এখন থেকে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা যাবে। নির্মলা বলেছেন, দেশের ১২০ কোটি মানুষের কাছে আধার কার্ড পৌঁছে গেছে। কিন্তু বাজেট বক্তৃতায় যে তথ্য দাখিল করেছেন তাতে দেখা যাচ্ছে, ১৩০ কোটি মানুষের দেশে কর দেন সাড়ে ৮ কোটি মানুষেরও কম!

অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য অবকাঠামো নির্মাণের ওপর বাজেটে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। পাঁচ বছরে দেশে ১ লাখ ২৫ হাজার কিলোমিটার রাস্তার উন্নতি ঘটানো হবে, খরচ করবে সাড়ে ১১ বিলিয়ন ডলারের বেশি। রেল অবকাঠামোর উন্নতিতে আগামী ১১ বছরে মোট খরচ করা হবে ৭২ বিলিয়ন ডলার। খরচের জোগান দিতে বাড়তি আয় কোথা থেকে আসবে, তার ইঙ্গিতও অর্থমন্ত্রী দিয়েছেন। রাজস্ব আদায়ে ধনীদের ওপর বসানো হয়েছে বাড়তি কর। বছরে ২ থেকে ৫ কোটি রুপি পর্যন্ত যাঁদের আয়, তাঁদের এবার সারচার্জ বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। বার্ষিক রোজগার ৭ কোটি ছাড়িয়ে গেলে সারচার্জের পরিমাণ বেড়ে হবে ৭ শতাংশ। সোনা কেনার প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। বাজেটে সোনা ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর অন্তশুল্ক বাড়িয়ে সাড়ে ১২ শতাংশ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। কোষাগার ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রাও কমানো হয়েছে, সাড়ে ৩ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ ধার্য হয়েছে।

বাজেটের থিম ‘গাঁও, গরিব ও কিষাণ’ হলেও নির্দিষ্টভাবে গ্রামীণ উন্নয়নে তেমন কোনো দিশা বাজেটে নেই। নির্মলার আশ্বাস, কৃষির উন্নয়নে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো হবে। আগামী পাঁচ বছরে গ্রামভিত্তিক বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের লক্ষ্য কী, সেই খতিয়ানও অর্থমন্ত্রী দিয়েছেন। যদিও নতুন কোনো প্রকল্পের ঘোষণা সেখানে নেই।