ধর্মের নামে বাড়ছে বিভাজন: অমর্ত্য সেন

যাদবপুরে আলোচনা সভায় অংশ নেন অমর্ত্য সেন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি।
যাদবপুরে আলোচনা সভায় অংশ নেন অমর্ত্য সেন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি।

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক অমর্ত্য সেন বলেছেন, ধর্মের নামে ভারতে এখন বিভাজন বাড়ছে। জোর করে বুলি আওড়ানোর চেষ্টা, মারধরের রাজনীতি চলছে। এমন পরিস্থিতিতে এখন দেশে প্রয়োজন মানবাধিকার শিক্ষার। গতকাল শুক্রবার বিকেলে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গান্ধী মিলনায়তনে আয়োজিত ‘স্বাধীনতা–পরবর্তী কলকাতা’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। অমর্ত্য সেনের একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানটি সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক পার্থ চ্যাটার্জি।

আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘ধর্ম নিয়ে ভারতবর্ষে এখন নতুন করে পার্থক্য তৈরি হচ্ছে। ভারতের সংবিধানে বিভিন্ন ধর্মের যে স্থান, তাতে ধর্ম নিয়ে পার্থক্য থাকা উচিত নয়। কিন্তু যখন শুনি একজন রিকশাওয়ালাকে রিকশা থামিয়ে একটি বুলি আওড়াতে বলা হয়, সেই বুলি না আওড়ালে তাঁর মাথায় লাঠির বাড়ি পড়ে, তিনি রক্তাক্ত হন, তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে, তখন খুব খারাপ লাগে। কলকাতার ঐতিহ্য অনুসারে এটা কাম্য নয়। তাই এখন ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা মোকাবিলায় মানবাধিকার শিক্ষার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। ছোট থেকে শিশুদের সঙ্গে এই শিক্ষার পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।’

অমর্ত্য সেন বলেন, ‘জয় শ্রীরাম ধ্বনি এখন প্রহারের মন্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলায় এসব ইদানীংকালে আমদানি। বঙ্গ সংস্কৃতিতে এ ধরনের স্লোগানের কোনো জায়গা ছিল না। আজ যখন শুনি, বিশেষ বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত, শঙ্কিত হয়ে এই কলকাতা শহরের রাস্তায় বের হন, তখন আমার এই গর্বের শহরকে চিনতে পারি না।’

বক্তৃতা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘জয় শ্রীরাম এবং রামনবমীর সঙ্গে বাঙালির কোনো যোগ নেই। এখানে যোগ দুর্গাপুজোর সঙ্গে। নতুন এই রাজনীতি আমদানির পেছনে রয়েছে বিভেদের রাজনীতি।’

গতকাল বিকেলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচনায় যোগ দেওয়ার আগে তিনি কলকাতার শিশির মঞ্চ প্রেক্ষাগৃহে প্রতীচী আয়োজিত আরেকটি সেমিনারে যোগ দেন। যাদবপুরের আলোচনায় তিনি কলকাতার জীবনের স্মৃতিচারণা করেন।

মূল আলোচনায় বাংলাদেশের অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করে অমর্ত্য সেন বলেন, একাত্তরে বাংলাদেশের নারী শিক্ষার হার যেখানে ছিল মাত্র ২০ শতাংশ, সেই বাংলাদেশ আজ নারী শিক্ষায় পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতকে টেক্কা দিচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন এগিয়ে রয়েছে শিশুমৃত্যুর হার রোধেও। মাইক্রো ফিন্যান্সের বাংলাদেশ গোটা বিশ্বে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পশ্চিমবঙ্গের ‘বন্ধন ব্যাংক’ এই নিয়ে কাজ শুরু করলেও তারা সেভাবে সাফল্য পায়নি। বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে।