হংকংয়ে চীনবিরোধী বিক্ষোভ থামছে না

অপরাধী প্রত্যর্পণ আইনের প্রতিবাদে হংকংয়ে আন্দোলন চলছেই। রোববার হংকংয়ের শা তিন এলাকায় বিক্ষোভকারীরা। ১৪ জুলাই, হংকং। ছবি: রয়টার্স।
অপরাধী প্রত্যর্পণ আইনের প্রতিবাদে হংকংয়ে আন্দোলন চলছেই। রোববার হংকংয়ের শা তিন এলাকায় বিক্ষোভকারীরা। ১৪ জুলাই, হংকং। ছবি: রয়টার্স।

বিতর্কিত অপরাধী প্রত্যর্পণ আইন নিয়ে বিক্ষুব্ধ হংকং শান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। আজ রোববারও হংকংয়ের সড়কগুলো বিক্ষোভকারীদের স্লোগানে ছিল মুখর। চীনের কাছে অপরাধী প্রত্যর্পণ আইনকে কেন্দ্র করে গত মাসে রাস্তায় নেমে আসে দেশটির বিক্ষুব্ধ মানুষ। তারা এ আইনকে তাদের স্বাধীনতা হরণ হিসেবে দেখছে।

মার্চের শেষ দিন শুরু হওয়া এ আন্দোলনের তীব্রতা কমার বদলে দিন দিন বাড়ছে। রোববার ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যেও বিক্ষোভকারীদের কিছুমাত্র হতোদ্যম হতে দেখা যায়নি। হংকং ও চীনের মূল ভূখণ্ডের মধ্যবর্তী শহর শা তিনে এ দিন বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। চীনা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ওপরও চড়াও হয় কিছু বিক্ষোভকারী। এতে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের খণ্ড খণ্ড সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।

চীনের কাছে অপরাধী প্রত্যর্পণ আইনকে হংকংয়ের জনগণ সরাসরি তাদের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখেছে। বয়স্ক নাগরিকেরা এ আইনকে দেখছেন হংকংয়ের কাছে করা চীনের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ হিসেবেও। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া হংকংয়ের ৭৩ বছর বয়সী নাগরিক জেনি কাওয়ান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘এই সময়ে চীনের ওপর বিশ্বাস রাখা খুব কঠিন। আর এ কারণেই তারা বেরিয়ে এসেছে। তারা কি ৫০ বছরের প্রতিশ্রুতি দেয়নি, কিন্তু কী হলো? আমরা পরিবর্তনটি দেখছি।’

সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ ১৯৯৭ সালে চীনের কাছে হস্তান্তরের পর চীন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তাদের এক দেশ দুই নীতির আওতায় হংকং অন্তত ৫০ বছরের জন্য স্বাধীনতা ভোগ করবে। প্রশাসনিক বিষয়গুলো চীনের ওপর ন্যস্ত থাকলেও, হংকং এই স্বাধীনতা ভোগ করবে স্বায়ত্তশাসনের পথ ধরে। কিন্তু সম্প্রতি গুরুতর অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের চীন চাইলে বিচারের জন্য মূল ভূমিতে হস্তান্তর করার বিধান রেখে একটি আইন পাস করে হংকং সরকার। অপরাধী প্রত্যর্পণ আইন নামে পরিচিত এ আইনকে হংকংয়ের নাগরিকেরা চীনের আধিপত্য বিস্তারের কৌশল হিসেবে দেখছে। এ আইনের প্রতিবাদে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। কিন্তু তখন বিষয়টি এতটা গুরুত্ব পায়নি সারা বিশ্বে। কিন্তু গত ৯ জুন যখন কয়েক লাখ মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে, তখনই সবাই নড়েচড়ে বসে। এরপর থেকে টানা আন্দোলন চলছে, যার শক্তি সময়ের সঙ্গে বেড়েছে।

তবে আন্দোলনের শুরু থেকেই হংকংয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে চীন। আন্দোলনের শুরুতে হংকংয়ের কর্তৃপক্ষও আইনটিকে ‘অত গুরুতর নয়’ বলে উল্লেখ করে। কিন্তু আন্দোলন তীব্র হলে তারা আইনটি নতুন করে পর্যালোচনার কথা জানায়। হংকংয়ের নেতা ক্যারি ল্যাম জানান, ওই আইন এখন মৃত। তাই আন্দোলনের কোনো মানে হয় না। কিন্তু আন্দোলনকারীরা বলছেন, আইনটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল না করা পর্যন্ত তাঁরা কিছু মানবেন না।

এদিকে হংকংয়ের আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করলে বিষয়টি বাইরের ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করে বিবৃতি আসে চীন থেকে। চীনের ভাষ্য, বাণিজ্যযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে চীনকে অস্থির করে তুলতেই সাজানো এ আন্দোলন। শুরুতে বিষয়টিকে ফাঁকা বুলি মনে হলেও রোববারের বিক্ষোভে কয়েকজন অংশগ্রহণকারীকে ‘হংকংকে স্বাধীন কর’ ধরনের স্লোগান–সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করতে দেখা যায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশে লেখা এসব প্ল্যাকার্ডের কারণে আন্দোলনকে ঘিরে নতুন প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ ধরনের প্ল্যাকার্ড যুক্তরাষ্ট্র কিংবা চীন যেকোনো পক্ষের লোকদের পক্ষেই বহন করা সম্ভব। ফলে শুধু এটিকে দিয়ে আন্দোলনটি বিচার করতে যাওয়া ভুল হবে।