দুর্নীতির অভিযোগকে ষড়যন্ত্র বলছেন জ্যাকব জুমা

দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা। ছবি: রয়টার্স
দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা। ছবি: রয়টার্স

দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা তাঁর বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। আজ সোমবার প্রথমবারের মতো তদন্ত কমিশনের সামনে হাজির হন জুমা। তিনি দাবি করেন, তাঁকে রাজনীতির ময়দান থেকে সরিয়ে দিতেই এ ধরনের অভিযোগ তোলা হয়েছে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন জ্যাকব জুমা। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাঁর প্রশাসনের লোকেরা যখন ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতি করছিল, তখন তিনি চোখ বুঁজে ছিলেন। এসব অভিযোগ তদন্তে বিচারপতি রে জোন্ডোর নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করা হয়। সোমবার এই কমিশনের সামনে জ্যাকব জুমা প্রথমবারের মতো হাজির হন।

এদিকে জুমার বিদায়ের পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন তাঁর সহকারী সিরিল রামাফোসা। রামাফোসা প্রেসিডেন্ট পদে বসেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে দুর্নীতি মুক্ত করার ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে জ্যাকব জুমার নয় বছরের শাসনামলকে তিনি ‘নিষ্ফলা’ হিসেবেও আখ্যা দেন।

এ সম্পর্কিত বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, জ্যাকব জুমার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের মূলে রয়েছে তাঁর সঙ্গে বিতর্কিত গুপ্ত’ পরিবারের সম্পর্ক। এই পরিবারের বিরুদ্ধে দেশটির মন্ত্রিসভা গঠনে প্রভাব বিস্তারসহ দুর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া আরেক বিতর্কিত পরিবার ‘ওয়াটসন’-এর মালিকানাধীন বোসাসা নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগও রয়েছে জুমার বিরুদ্ধে। অবশ্য জুমাসহ সংশ্লিষ্ট দুই পরিবারই তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে।

সোমবার সাক্ষ্য দিতে গিয়ে আগের মতোই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জ্যাকব জুমা। সাবেক এ রাষ্ট্রপতি বলেন, বিদেশি কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা গত এক দশক ধরেই তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত লোকেদের রাজা আখ্যা দিয়ে আমার নামে কুৎসা রটানো হচ্ছে। আমার নামে আরও অনেক কথাই বলা হচ্ছে, যা আমি কখনো করিনি। গুপ্ত পরিবারের হাতে আমি দেশ তুলে দিয়েছি, কিংবা দেশকে নিলামে তুলেছি এমন সব অভিযোগই মিথ্যা। আমি কি জোহানেসবার্গকে নিলামে তুলেছি?’

জ্যাকব জুমা সব অভিযোগ অস্বীকার করলেও গুপ্ত পরিবারের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সম্পর্ক অস্বীকার করেননি। তিন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভাইয়ের এ পরিবারের সঙ্গে জুমা পরিবারের সম্পর্ক এতটাই গাঢ় ছিল যে, এক সময় দুটি পরিবারকে একসঙ্গে ‘জুপ্তা’ বলা হতো। গুপ্ত পরিবারের মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানি জুমার শাসনামলে সরকারি বড় বড় প্রকল্পের কাজ পেত। এ ক্ষেত্রে তারা বলা যায় একচ্ছত্র ছিল। এমনকি তাদের প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে জ্যাকব জুমার ছেলে দুদুজানেকেও নিয়োগ দিয়েছিল তারা। দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণ এই নিয়োগকে জুমার প্রতি গুপ্ত পরিবারের কৃতজ্ঞতার নিদর্শন হিসেবে দেখে। সরকারি গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্তেও গুপ্ত পরিবারের ছিল ব্যাপক প্রভাব। অনেক সময় তারাই বলে দিত কোন সিদ্ধান্ত কীভাবে নিতে হবে। আর এই নির্দেশনা অমান্য করলে সরকারি কর্মকর্তাদের পদচ্যুতিও ঘটত।