যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়া আরও সৃজনশীল হতে পারে

যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়াকে সৃজনশীল উপায় মাথায় নিয়ে বৈঠকে আসার পরামর্শ দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়াকে সৃজনশীল উপায় মাথায় নিয়ে বৈঠকে আসার পরামর্শ দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। ছবি: রয়টার্স

পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পুনরায় আলোচনায় বসলে উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই ‘আরও কিছুটা সৃজনশীল’ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। গতকাল সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়।

‘দ্য শন হ্যানিটি শো’ নামের এক রেডিও সাক্ষাৎকারে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে পরমাণুবিষয়ক আলোচনা নিয়ে কথা বলেন পম্পেও। তবে এ আলোচনা কবে শুরু হতে পারে, সে ব্যাপারে কিছু জানাননি তিনি। জুন মাসের শেষনদিকে তিনি বলেছিলেন, জুলাই মাসের যেকোনো সময় আলোচনা শুরু হতে পারে। খুব সম্ভবত আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের ভেতর দুই দেশের মধ্যে তৃতীয় দফা বৈঠক শুরু হবে বলে আভাস দিয়েছেন পম্পেও।

গত মাসে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান কিম জং-উনের সঙ্গে দেখা করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আলোচনা চলাকালে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে উত্তর কোরিয়ায় পা রাখেন তিনি। দুই কোরিয়ার সীমান্তে পানমুনজমের অসামরিকায়িত অঞ্চলে ট্রাম্প-কিম সাক্ষাৎ হয়। উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশের পর কিমের সঙ্গে হাত মেলান এবং কিছু সময় সেখানেই তাঁর সঙ্গে কথা বলেন ট্রাম্প। এরপর কিমকে সঙ্গে নিয়ে ফেরেন দক্ষিণ কোরিয়ায়। পানমুনজমে ট্রাম্প-কিম তৃতীয় বৈঠক হয়। এর আগে কোরীয় উপদ্বীপে পারমাণবিক উত্তেজনার মধ্যেই গত বছরের জুনে সিঙ্গাপুরে এবং গত ফেব্রুয়ারিতে ভিয়েতনামের হ্যানয়ে দুই নেতার বৈঠক হয়। তবে ওই দুই বৈঠক ছিল পূর্বনির্ধারিত এবং পরিকল্পিত। সে তুলনায় এবারের বৈঠকটির আয়োজন করা হয়েছে সংক্ষিপ্ত সময়ে।

জি-২০ সম্মেলন শেষে দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়ার সময় টুইটারে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, কিমের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হতে পারে। কিমও সে আহ্বানে সাড়া দিয়েছিলেন। দুই কোরিয়ার সীমান্তে দাঁড়িয়ে কুশলবিনিময়ের সময় কিমের কাছে ট্রাম্প জানতে চান, ‘আমি কি উত্তর কোরিয়ায় যেতে সীমান্ত অতিক্রম করতে পারি?’ উত্তরে কিম বলেন, ‘এটা করলে আমি সম্মানিত হব।’ উত্তর কোরিয়ার মাটিতে পা রেখে ট্রাম্প বলেন, বিশ্বের জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক দিন। এ সময় ট্রাম্পকে পিয়ংইয়ং সফরের আমন্ত্রণ জানান কিম। বৈঠক শেষে দক্ষিণ কোরিয়ার ওসান বিমানঘাঁটিতে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেখানে তিনি বলেন, পারমাণবিক চুক্তির বিষয়ে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আবার আলোচনা শুরু হবে।

পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে তিন দফা মিলিত হয়েছেন ট্রাম্প ও কিম—আলোচনায় বসেছেন দুবার। এর আগে ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে সর্বসম্মত কোনো চুক্তি ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র-উত্তর কোরিয়া দ্বিতীয় দফার বৈঠক ভেস্তে যায়। গত ফেব্রুয়ারিতে এ বৈঠক ফলপ্রসূ না হওয়ার জন্য উত্তর কোরিয়াকে দায়ী করেছে ওয়াশিংটন। ওই সময় সীমিত পরিসরে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি বিলোপে উত্তর কোরিয়ার প্রস্তাব মেনে নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। তবে পিয়ংইয়ং বলছে, তারা কেবল কিছু পদক্ষেপ শিথিল করার দাবি জানিয়েছিল।

গতকালের রেডিও সাক্ষাৎকারে পম্পেও বলেন, ‘আমি আশা করছি, প্রথমবার তাদের মাথায় আসেনি এমন সব পরিকল্পনা নিয়েই এবার বৈঠকে হাজির হবে উত্তর কোরিয়ার প্রতিনিধিরা। আমরাও আরও কিছুটা সৃজনশীল হব বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রেসিডেন্ট এখনো তাঁর উদ্দেশ্যে অটল আছেন। উত্তর কোরিয়াকে এমনভাবে চূড়ান্ত পরমাণু শক্তিচ্যুত করা হবে, যাতে আমরা বিষয়টি যাচাই করতে পারি। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করতেই আলোচনা এগোবে।’

দৃশ্যত কিমের সঙ্গে ট্রাম্পের এই সৌজন্য সাক্ষাৎ দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নের পথ তৈরি করেছে বলে মনে হলেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা ভিন্ন কথা জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, দুই পক্ষের কেউ নিজেদের অবস্থান থেকে একচুল ছাড় দিতে রাজি নয়। তাঁদের সর্বসম্মতভাবে পরমাণু শক্তিচ্যুত বিষয়টির একটি সংজ্ঞা দাঁড় করাতে হবে। উত্তর কোরিয়া বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পরমাণু শক্তিচ্যুতকরণ কর্মসূচিতে জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়াকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

ওয়াশিংটন দাবি জানিয়েছে, পিয়ংইয়ংকে একতরফাভাবেই পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পারমাণবিক অস্ত্র ছেড়ে না দেওয়া পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে না যুক্তরাষ্ট্র।

ফেব্রুয়ারির বৈঠক সামনে রেখে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন অন্তর্বর্তী কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র, যার মধ্যে মানবিক সাহায্য বাড়ানো বা সংযোগ কার্যালয় গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে বৈঠকে উত্তর কোরিয়া যখন বড় পরিসরে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়ার শর্তে ইয়ংবিয়নের পারমাণবিক চুল্লি কমপ্লেক্স ধ্বংস করার প্রস্তাব দেয়, তাতে সম্মত হয়নি যুক্তরাষ্ট্র।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং পিয়ংইয়ংয়ের সঙ্গে লেনদেনের ক্ষেত্রে নমনীয়তা প্রদর্শন এবং দেশটির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা বলার পর গতকাল এ মন্তব্য করেন পম্পেও।