জাপানে সন্দেহভাজন হামলাকারীর নাম প্রকাশ করল পুলিশ

অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া জাপানের কিয়োটো অ্যানিমেশন স্টুডিও। ছবি: রয়টার্স
অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া জাপানের কিয়োটো অ্যানিমেশন স্টুডিও। ছবি: রয়টার্স

জাপানের কিয়োটোয় অ্যানিমেশন স্টুডিওতে নাশকতায় অন্তত ৩৩ জন নিহতের ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেছে পুলিশ। শিনজি আওবা নামের সন্দেহভাজন সেই ব্যক্তি আপাতত হাসপাতালে পুলিশের হেফাজতে আছেন। পর্যাপ্ত চিকিৎসার পর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে জাপানের পুলিশ।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিয়োটো অ্যানিমেশন নামের ওই স্টুডিওতে আগুন লাগানোর ঘটনায় শিনজি আওবাকেই মূল সন্দেহভাজন হিসেবে শনাক্ত করেছে জাপানের পুলিশ। আগুন লাগানোর কিছুক্ষণ আগে সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তিকে কাছের একটি পেট্রল স্টেশন থেকে দুই কন্টেইনার ভর্তি করে পেট্রল নিতে দেখা গেছে সিসিটিভি ফুটেজে। পুলিশ বলছে, ভবনের ভেতরে ঢুকে দাহ্য জ্বালানি ছড়িয়ে দেওয়ার আগে শিনজি আওবা চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘মরো!’

অ্যানিমেশন স্টুডিওর সঙ্গে শিনজি আওবার সম্পর্ক কী, কিংবা কেন এ ঘটনা ঘটালেন তিনি—সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত নয় পুলিশ। তবে আওবাকে গ্রেপ্তারের সময় যারা উপস্থিত ছিলেন তাঁরা বলছেন, গ্রেপ্তারের সময় বেশ ক্ষিপ্ত ছিলেন আওবা। অ্যানিমেশন স্টুডিওটি তাঁর নিজস্ব ভাবনা চুরি করেছে—গ্রেপ্তার আওবাকে এমন অভিযোগও করতে শুনেছেন কেউ কেউ।

অ্যানিমেশন স্টুডিওটির প্রেসিডেন্ট বলেছেন, সম্প্রতি হুমকি সংবলিত কয়েকটি চিঠি তিনি পেয়েছিলেন। কিন্তু এ ঘটনার সঙ্গে ওই চিঠিগুলোর কোনো সম্পর্ক আছে কি না—সে বিষয়ে তাঁর কোনো ধারণা নেই।

নাশকতায় নিহতদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন এক ব্যক্তি। ছবি: এএফপি
নাশকতায় নিহতদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন এক ব্যক্তি। ছবি: এএফপি

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় নিহতদের স্মরণে আজ শুক্রবার কিয়োটো অ্যানিমেশন ভবনের নিচে প্রার্থনাসভার আয়োজন করা হয়। নিহতদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন জাপানের মানুষেরা। ৭৮ বছর বয়সী সাচিকো কোনিশি বলেছেন, ‘ওই তরুণ ছেলে-মেয়েগুলো আমার নাতি-নাতনির বয়সী ছিল! আমার নিজের নাতি-নাতনি যদি এ ঘটনায় মারা যেত, তাহলে আমি বেঁচে থাকতে পারতাম না।’

এদিকে আহত ও নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে অর্থ সংগ্রহ শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ১৩ লাখ মার্কিন ডলার সংগ্রহ করা হয়েছে।

১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত কিয়োটো অ্যানিমেশন গ্রাহক ও ভক্তদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। ‘কে-অন’ এবং ‘দ্য মেলানকোলি অব হারুহি সুজুমিয়া’ নামের জনপ্রিয় অ্যানিমেশন অনুষ্ঠান তৈরি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

গত বৃহস্পতিবার সকালে এক ব্যক্তি কিয়োটো অ্যানিমেশনের ভবনে ঢুকে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। ঘটনাটি ‘অত্যন্ত ভীতিকর’ উল্লেখ করে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। জাপানের পুলিশ জানিয়েছিল, তারা ঘটনাস্থল থেকে একটি ছুরি উদ্ধার করেছে। স্থানীয় প্রতিবেদকেরা জানিয়েছেন, পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা স্টুডিওর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। শান্ত ও নিরাপদ দেশ হিসেবে পরিচিত জাপানে গত দশকের অন্যতম নৃশংস ঘটনা এটি।