ইমরান খানের সফরের পরেই এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের প্রযুক্তিগত সহযোগিতার কথা ঘোষণা ডোনাল্ড ট্রাম্পের

পাকিস্তানকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কর্মসূচির প্রযুক্তিগত সহায়তার চুক্তি অনুমোদন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ছবি: রয়টার্স
পাকিস্তানকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কর্মসূচির প্রযুক্তিগত সহায়তার চুক্তি অনুমোদন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ছবি: রয়টার্স

পাকিস্তানকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কর্মসূচির প্রযুক্তিগত সহায়তার চুক্তি অনুমোদন করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল শুক্রবার মার্কিন প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসডিএ) এ তথ্য জানিয়েছে। এটিকে পাকিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন মোড় বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। বৈঠকের কয়েক দিন পরেই পাকিস্তানকে এফ-১৬ বিমানের জন্য সরঞ্জাম ও প্রকৌশলগত সহযোগিতার ঘোষণা দিল যুক্তরাষ্ট্র।

এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত সাহায্য চালিয়ে যাওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করা হয়েছিল পাকিস্তানের পক্ষ থেকে। যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইমরানের খানের বৈঠকেও বিষয়টি উঠেছিল। এরপরেই এ পদক্ষেপের কথা জানাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

স্পুটনিকের এক খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ১২৫ মিলিয়ন ডলারের ওই চুক্তির কথা জানিয়েছে পেন্টাগন। চুক্তির কথা জানানো হয়েছে মার্কিন কংগ্রেসকেও।

গত বছরের জানুয়ারিতে পাকিস্তানকে নিরাপত্তা খাতে সাহায্য বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। ওই নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল রয়েছে। তবে, তার মধ্যেই নতুন এই চুক্তির মাধ্যমে এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোকে প্রযুক্তিগত সহায়তার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ক্ষেত্রে অন্তত ৬০টি সংস্থাকে ওই যুদ্ধবিমান বিমানগুলো দেখভালের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এ বৈঠকের পরেই পাকিস্তানকে এফ-১৬ বিমানের সরঞ্জাম ও প্রকৌশলগত সহযোগিতার ঘোষণা দিল যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: এএফপি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এ বৈঠকের পরেই পাকিস্তানকে এফ-১৬ বিমানের সরঞ্জাম ও প্রকৌশলগত সহযোগিতার ঘোষণা দিল যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: এএফপি

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন মুখপাত্র পিটিআইকে বলেন, ২০১৮ সাল থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল তার কোনো পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু, প্রেসিডেন্টের কথামতো দু’দেশের সম্পর্কের কথা মাথায় রেখেই নিরাপত্তা সংক্রান্ত সাহায্য করা হবে। এ প্রস্তাবিত চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি ও জাতীয় সুরক্ষা বজায় থাকবে। মার্কিন প্রযুক্তিও সুরক্ষিত হবে।

পাকিস্তানকে এফ-১৬ বিমানে প্রযুক্তিগত সাহায্যের পাশাপাশি সামরিক পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান সি-১৭ নিয়ে ভারতকেও প্রযুক্তিগত সাহায্যের কথা জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এতে খরচ হবে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি ভারতী রুপি।

এ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় দেশটির আধা সামরিক সিআরপিএফের গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জনের বেশি জওয়ান নিহত হন। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদ এ হামলার দায় স্বীকার করে। এ ঘটনার ১২ দিন পর ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বালাকোটে বিমান হামলা চালায় ভারত। নয়াদিল্লির দাবি, ওই হামলায় পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ-ই-মুহাম্মদের বড় ঘাঁটি গুঁড়িয়ে গেছে। নিহত হয়েছে ৩০০ জঙ্গি। জঙ্গি ঘাঁটিতে আকাশপথে মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা চালায় ভারতীয় বিমানবাহিনী। কিন্তু ওই হামলায় এখন পর্যন্ত মাত্র একজনের আহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে বলে দাবি হামলাস্থল পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের বালাকোটের বাসিন্দাদের। এরপরই প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে চরম উত্তেজনা চলছে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জঙ্গিদের লাশ কই। তবে ইতালির এক সাংবাদিক দাবি করেছেন, ভারতের আঘাত হানা জায়গা থেকে কয়েকটি দেহ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

বালাকোটে বিমান হামলার পর ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান এফ-১৬ বিমান ব্যবহার করেছিল বলে অভিযোগ করে ভারত। তবে ওই অভিযোগ পাকিস্তান প্রত্যাখ্যান করে আসছিল। এরপরে ভারতীয় যুদ্ধবিমানের একজন পাইলটকে আটকের দাবি করে তাঁর ভিডিও প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। যদিও কিছুক্ষণ পরই সেই ভিডিও মুছে ফেলা হয়েছে। সেই ভিডিওতে একজন ব্যক্তিকে চোখ বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়। ভারতের পক্ষ থেকে একজন পাইলট নিখোঁজ হওয়ার কথা স্বীকার করা হয়েছে। ভারতের দুটি বিমান ভূপাতিত করে পাকিস্তান, আটক করে ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে। অবশ্য গত শুক্রবার ভারতীয় পাইলট অভিনন্দনকে ছেড়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরাজমান উত্তেজনা কমার লক্ষণ দেখা গেছে।