২২ বছর ধরে 'ভূতের শহরে' একা থাকেন তিনি!

‘ভুতুড়ে’ শহর সেরো গোর্দো।
‘ভুতুড়ে’ শহর সেরো গোর্দো।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার জনশূন্য এক শহর সেরো গোর্দো। জনমানবহীন হওয়ায় লোকমুখে শহরটি পরিচিত ‘ভূতের শহর’ হিসেবে। অথচ এই শহরেই কি না ২২ বছর ধরে একাকী বাস করছেন রবার্ট লুইস ডেমারাইস নামের এক ব্যক্তি!

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আক্ষরিক অর্থেই জনশূন্য এ শহরে পরিবার ছেড়ে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বাস করছেন ৭০ বছর বয়সী সাবেক স্কুলশিক্ষক ডেমারাইস। হারিয়ে যাওয়া রুপার খনির খোঁজে ‘ভুতুড়ে’ এ শহরে বাস করছেন তিনি।

শিক্ষকতা করার সময় মাঝে মাঝেই ছুটি কাটাতে দুর্গম এ শহরে যেতেন ডেমারাইস। কিন্তু একপর্যায়ে খনি সন্ধানের নেশা পেয়ে বসে তাঁকে। সে কারণে শহরের কোলাহল ছেড়ে পাহাড়বেষ্টিত এ শহরে একেবারেই বসতবাড়ি গেড়েছেন তিনি। শুরুতে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন স্ত্রীকেও। কিন্তু সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮ হাজার ২০০ ফুট উঁচু এ শহরে মানিয়ে নিতে পারেননি তাঁর স্ত্রী। ফলাফল, শহরের একমাত্র বাসিন্দা এখন ডেমারাইসই।

স্প্যানিশ ভাষায় সেরো গোর্দো শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় মোটা পাহাড়। অসংখ্য পাহাড়ে ঘেরা এ শহরটি অনেক আগে থেকেই রুপার মজুতের জন্য বিখ্যাত। এক সময় ক্যালিফোর্নিয়ার সবচেয়ে বেশি রুপা মিলত এ শহরেই। ডেমারাইসের দাবি, এ শহরের রুপা দিয়েই সমৃদ্ধ হয়েছে লস অ্যাঞ্জেলেস। আস্তে আস্তে বিলীন হতে থাকে এ শহরের রুপা। কিন্তু বেশ কয়েকবার ভ্রমণে গিয়ে ডেমারাইসের মনে হয়েছে, ভালোভাবে খুঁজলে এখনো এ শহরে রুপার অস্তিত্ব পাওয়া সম্ভব। আর সে কারণেই দীর্ঘ ২২ বছরে এখানে রুপার খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

লক্ষ্যে পুরোপুরি সফল না হলেও একেবারে নিরাশও হতে হয়নি তাঁকে। অল্প সময়ের মধ্যেই বড় একটি রুপার খনির সন্ধান পাবেন বলেও আশাবাদী তিনি। ডেমারাইস বলেছেন, ‘আশা করছি খনিটির সন্ধান পেয়ে যাব। এই উদ্দেশ্যেই তো এখানে বাস করছি আমি। ২২ বছর ধরে এক ঠেলাগাড়ির সমান রুপা সংগ্রহ করেছি আমি।’

নির্জন এ শহরে থেকেই উপার্জনের ব্যবস্থা করে নিয়েছেন ডেমারাইস। সেরো গোর্দোতে ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছে ৫ থেকে ২০ ডলারে একেক টুকরো অপরিশোধিত রুপা বিক্রি করেন তিনি। ঘুরতে আসা পর্যটকদের গাইড হিসেবে শহরটি ঘুরিয়ে দেখানোর কাজও করে থাকেন তিনি। ঘুরিয়ে দেখানোর সময় ১৮৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এ শহরের সুদীর্ঘ ইতিহাসও শোনান পর্যটকদের।

পাহাড়বেষ্টিত এ শহরে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেও নেই পানির প্রাকৃতিক কোনো উৎস। যে কারণে কীলার নামের নিকটস্থ এক শহর থেকে লরি ভর্তি করে পানি আনতে হয় তাঁকে।

এত বছর ধরে শহরের আনাচে কানাচে খনি খুঁজে বেড়ানোর পর এবার মাটির নিচে গিয়ে রুপার খনি খুঁজতে চান তিনি। কিন্তু শহরটির বর্তমান মালিক যে দুজন, সেই ব্রেন্ট আন্ডারউড ও জন বিয়ার এ প্রস্তাবে সম্মত হননি। গত বছরের জুলাইয়ে প্রায় ১৪ লাখ ডলার দিয়ে শহরটি কিনে নেন তাঁরা। ডেমারাইসের মতো তাঁরাও মনে করেন, এ শহরে হারানো রুপার খনি খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। তবে মাটির নিচে রুপার খনি খুঁজতে যাওয়া ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ বলে এ ব্যাপারে সম্মত হচ্ছেন না তাঁরা।

বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আন্ডারউড ও বিয়ার বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে এক দিন এই শহরে হারানো রুপার খনি অবশ্যই খুঁজে পাওয়া যাবে। পাহাড়ঘেরা এই শহর থেকে অন্তত ৫০০ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের রুপা এরই মধ্যে আহরণ করা হয়ে গেছে। শোনা যায়, আরও ৫০০ মিলিয়ন সমমূল্যের রুপা এই শহরে লুকিয়ে আছে।’