'অনুপ্রবেশ' নিয়ে মতান্তর, যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়নি

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ফাইল ছবি
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ফাইল ছবি

আসামের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) তৈরি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সরাসরি আলোচনা হয়েছে কি না, তা অনুচ্চারিত থাকলেও ‘সীমান্তে অনুপ্রবেশ’ ইস্যুতে দুই পক্ষের মতানৈক্য স্পষ্ট হয়েছে। সে কারণেই সপ্তম পর্যায়ের বৈঠক শেষে দুই দেশের তরফ থেকে যৌথ বিবৃতি প্রচার করার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি।

গত বুধবার সন্ধ্যায় ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নর্থ ব্লকে দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক ঘণ্টা নিজেদের মধ্যে একান্তে বৈঠক করেন। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের এটাই ছিল প্রথম মুখোমুখি আলাপ ও পরস্পরকে চেনাজানার সুযোগ। একান্ত আলোচনার পর দুই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যোগ দেন উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সচিবেরা। সেই বৈঠকও চলে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা। তারপর শুরু হয় প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকের শেষ ধাপ। মতান্তর দেখা দেয় সেখানেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দুই দেশের তৈরি করা খসড়া যৌথ বিবৃতিতে অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গ ছিল না। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে তা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য চাপ সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ অনুপ্রবেশের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছে, সব ধরনের অবৈধ কাজকর্ম বন্ধে সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতার ক্ষেত্রে দুই দেশ আগের সব নজির ভেঙে দিয়ে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে এবং তা দুই দেশ স্বীকারও করছে। প্রতি বৈঠকে সন্তোষ প্রকাশ
করেছে। এ অবস্থায় আলাদাভাবে অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গ রাখা অর্থহীন। এই মতান্তরের মীমাংসা না হওয়ায় দুই দেশ আলাদাভাবে বিবৃতি প্রচার করবে বলে ঠিক হয়।

বৈঠক শেষে বুধবার রাত সাড়ে ১১টার পর বাংলাদেশ যে বিবৃতি প্রচার করে, তাতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে অনুপ্রবেশের প্রসঙ্গ ও সেই সমস্যার সমাধানের উল্লেখ ছিল না। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআইকে যে তথ্য দেওয়া হয়, তাতে বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবৈধ প্রবেশের উল্লেখ করে বলা হয়, এই সমস্যার সমাধান করা দরকার।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সরকারি ওই বিবৃতিতে আপত্তি জানায় বাংলাদেশ। ভারতীয় অভিমত স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিতও হয়। কিন্তু সম্ভবত আপত্তির কারণে ওই রাতে ভারত সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোয় (পিআইবি) সরকারি বিবৃতিটি প্রচার করা হয়নি। দ্বিপক্ষীয় বিবৃতিটি পিআইবি প্রচার করে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টায়।

ভারতীয় প্রচারমাধ্যমের খবর ছিল, দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অমিত শাহ আসামের এনআরসি প্রসঙ্গ উত্থাপন করবেন এবং সমস্যার সমাধানের ওপর জোর দেবেন। আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে এক ঘণ্টার একান্ত বৈঠকে তা তিনি করেছেন কি না, এখনো অজানা। কারণ, ভারত থেকে সরকারিভাবে এনআরসি প্রসঙ্গে কিছু বলা হয়নি। বাংলাদেশও এ বিষয়ে নীরব। আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখাও করেননি। 

ভারতীয় সূত্র অনুযায়ী, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে অনুপ্রবেশের বিষয় উত্থাপন ও তার সমাধানের উল্লেখের মধ্য দিয়ে অমিত শাহ প্রকারান্তরে আসামের এনআরসি সমস্যা ও তার গুরুত্বকেই তুলে ধরতে চেয়েছেন। বাংলাদেশের বক্তব্য, অবৈধ যাওয়া-আসা সার্বিক সীমান্ত সমস্যারই একটা অঙ্গ। প্রতি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ বিষয়ে অগ্রগতি পর্যালোচনা হয়ে আসছে। এবারের বৈঠকেও তা হয়েছে এবং দুই দেশই সহযোগিতা নিয়ে সন্তুষ্ট। দুই দেশ সরকারিভাবে নিজস্ব অবস্থানে অনড় থাকায় সপ্তম পর্যায়ের বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা গেল না। 

ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র অনুযায়ী, অনুপ্রবেশ ও এনআরসির বিষয়ে অমিত শাহর মনোভাব অত্যন্ত কঠোর। আগামী অক্টোবর মাসের গোড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে ভারতের পক্ষ থেকে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে তোলা হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল সকালে দেখা করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। লোক কল্যাণ মার্গে সেই সাক্ষাৎকারের সময় তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী এবং সফররত বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের বিভাগীয় সচিবেরা।