কাশ্মীরে ফোন ও ইন্টারনেট সেবা আংশিকভাবে চালু

কাশ্মীরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বসবাসকারী রাজ্যের নাগরিকেরা এ কদিন তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
কাশ্মীরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বসবাসকারী রাজ্যের নাগরিকেরা এ কদিন তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরে টানা পাঁচ দিনের জোরদার নিরাপত্তা শেষে আজ শুক্রবার সকালে ফোন এবং ইন্টারনেট সেবা আংশিকভাবে চালু করা হয়েছে। শুক্রবারের জুমার নামাজের সুবিধার্থে চলাচলের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাও শিথিল করা হয়েছে। আজ শুক্রবার ভারতের সংবাদভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভির প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়।

কেন্দ্রের বিশেষ মর্যাদার অবসান ঘটিয়ে রাজ্যটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার সিদ্ধান্তের পর যেকোনো ঝামেলা এড়াতে হাজার হাজার নিরাপত্তাকর্মী কাশ্মীর উপত্যকাজুড়ে অবস্থান করছেন।

শ্রীনগর জামে মসজিদের ফটকগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এতে নগরীর প্রধান মসজিদে জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল। তবে অভ্যন্তরীণ ছোট ছোট মসজিদে নামাজ পড়ার অনুমতি দেওয়া হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ আদেশ নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা বলেছেন, কোনো বিপত্তি ছাড়া নামাজ অনুষ্ঠিত হলে বিধিনিষেধের কড়াকড়ি আরও কমে যেতে পারে।

জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি, ওমর আবদুল্লাহসহ প্রায় ৪০০ রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে সরকার। প্রতিবাদ বা সমাবেশ এড়াতে এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক গতকাল বৃহস্পতিবার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আশ্বাস দিয়েছেন, চলতি সপ্তাহের জুমার নামাজ ও ঈদ উদ্‌যাপনের জন্য বিধিনিষেধ নমনীয় করা হবে।

জাতির উদ্দেশে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দেওয়া ভাষণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, সরকার কাশ্মীরে ঈদ উদ্‌যাপনের প্রয়োজনীয় অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। এমনকি যারা আসন্ন ঈদ পালনে জম্মু-কাশ্মীরে যেতে ইচ্ছুক, সরকার তাদেরও সহযোগিতা করছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বসবাসকারী রাজ্যের নাগরিকেরা এ কদিন তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।

সংবিধানের ৩৭০ ধারায় জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। পররাষ্ট্র, যোগাযোগ ও প্রতিরক্ষা ছাড়া বাকি সব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ওই রাজ্যকে দেওয়া হয়েছিল। তাদের আলাদা পতাকা ছিল। প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ছিল সংবিধান। কালে কালে সব হারিয়ে অবশিষ্ট ছিল সাংবিধানিক ধারা ও কিছু বিশেষ ক্ষমতা। এবার তা-ও গেল। সরকারি প্রস্তাব বিল আকারে পেশও করা হয়েছে। এ সপ্তাহে রাষ্ট্রপতির নির্দেশ জারির মধ্য দিয়ে মোদির সরকার বাতিল করে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা, যা জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা দিয়েছিল।

ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের ৭০ বছরের বিশেষ মর্যাদা গত সোমবার বাতিল করে নরেন্দ্র মোদির সরকার। রাষ্ট্রপতির নির্দেশ জারির মধ্য দিয়ে বাতিল হয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা। একই সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যকে দুই টুকরা করে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য থেকে লাদাখকে বের করে তৈরি করা হয়েছে নতুন এক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, যার কোনো বিধানসভা থাকবে না। জম্মু-কাশ্মীরের পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদাও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে তার পরিচিতি হবে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে। তবে তার বিধানসভা থাকবে। দুই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পরিচালনা করবেন দুই লেফটেন্যান্ট গভর্নর। এরপর থেকেই জম্মু-কাশ্মীর প্রসঙ্গে উত্তাল হয়ে আছে ভারত, পাকিস্তানসহ আন্তর্জাতিক মহল।

নিরাপত্তা জোরদার করায় জনগণের দুর্ভোগের কথা স্বীকার করেন মোদি। তিনি বলেন, সংবিধানের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ স্বজনপ্রীতি, সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতা ছাড়া কিছুই দিতে পারেনি। এই বিচ্ছিন্নতা ও সন্ত্রাসবাদের কারণে গত তিন দশকে কাশ্মীর অঞ্চলে ৪২ হাজার নিরীহ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। তবে ৩৭০ ধারা রদ করায় স্থানীয় লোকজন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।

কাশ্মীরে কারফিউ জাতীয় বিধিনিষেধ সত্ত্বেও বেশির ভাগ কাশ্মীরি পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপনে আকাশপথে শ্রীনগর যাচ্ছেন।