কাশ্মীর নিয়ে মোদির বেপরোয়া জুয়া

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফাইল ছবি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ফাইল ছবি

ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একধরনের বেপরোয়া জুয়া। এর ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে বিরোধের পারদ আরও বাড়তে পারে। নতুন করে চাঙা হয়ে উঠতে পারে ওই এলাকায় বিদ্রোহ। এই বিদ্রোহ ইতিমধ্যে হাজারো মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। এই সতর্কবার্তা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

আগে জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা ছিল। এই মর্যাদা সেখানকার নাগরিকদের ভূমি এবং রাজ্যে সরকারি চাকরিতে বিশেষ অধিকার দিয়েছিল। কিন্তু এই মর্যাদা বাতিল এবং রাজ্য ভেঙে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করে গত মঙ্গলবার ভারতের লোকসভায় বিল পাস হয়েছে, যাকে মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদের বিস্তারের অবিশ্বাস্য পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার বলার চেষ্টা করছে, এর মধ্য দিয়ে ওই অঞ্চলে শান্তি এবং সাফল্য আসবে। কিন্তু সেখানে বিশাল আকারে সামরিক উপস্থিতিই ঝুঁকির বিষয়টি পরিষ্কারভাবে জানান দিচ্ছে। 

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে কাশ্মীরে হিন্দুরা উল্লাস করেছে। তারা দেখতে পাচ্ছে, নিরাপত্তার কারণে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে প্রায় ৩০ বছর ধরে চলা বিদ্রোহ দমে গেছে। বেশ কয়েক হাজার অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। মুঠোফোন নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কারফিউ জারি করা হয়েছে। তবে এর মধ্যেও বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভ হয়েছে। গুলি চালিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। 

এ প্রসঙ্গে সরকারের কাশ্মীরবিষয়ক উপদেষ্টা এবং ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান এ এস দৌলত বলেন, প্রধানমন্ত্রী আকস্মিকভাবে ক্ষমতা ব্যবহার করে যদি নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করেন, তবে দীর্ঘ মেয়াদে সহিংসতা ঠেকানো কঠিন হবে। তিনি বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত উদ্বেগ হলো, এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে এবং এর মধ্য দিয়ে সহিংসতা বাড়বে।’

ভারতীয় বাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডি এস হুদা একসময় কাশ্মীরে কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সরকারের এই সিদ্ধান্তের পর ‘ক্ষোভ, বিভেদ এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে’ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। 

নতুন করে সেনা মোতায়েনের আগেই কাশ্মীরে ভারতের প্রায় ৫ লাখ সেনা ছিল। ২০১৬ সালে কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামী নেতা বুরহান মুজাফফর ওয়ানি হত্যাকাণ্ডের পর জঙ্গি হামলার পরিমাণ খানিকটা বেড়েছিল। তবে জঙ্গি কার্যক্রম সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কমেছে। বর্তমানে কাশ্মীরের নাগরিকেরা বলছেন, কাশ্মীরিদের ক্ষোভে আগুন ঢেলে দিল সরকারের এই সিদ্ধান্ত। রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির মেয়ে ইলতিজা জাভেদ বলেন, কাশ্মীরের জনগণ এই সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না। বাকি জীবন বন্দিদশার মধ্যে কাটানো বাস্তবিক অর্থেই সম্ভব নয় জনগণের জন্য। 

ভারতের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে চ্যালেঞ্জ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক অঙ্কিত পান্ডে বলেন, ‘পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ আগ্রহের জায়গা কাশ্মীর। কারণ, দেশটির নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতিনির্ভর করে কাশ্মীরের ওপর। আমরা হয়তো দেখতে পাব, সেখানে উত্তেজনা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেবে পাকিস্তান। যদি পাকিস্তান এই পথে হাঁটে, তবে পরিস্থিতি খুব ভয়ংকর হবে।’