নতুন বরের সব আশা শেষ

মিরওয়াইস এলমি। ছবি: রয়টার্স
মিরওয়াইস এলমি। ছবি: রয়টার্স

মিরওয়াইস এলমির জন্য দিনটি ছিল বিশেষ। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছিলেন। খুব খুশি ছিলেন। এক মুহূর্তে যেন সব তছনছ হয়ে গেল। সব আশা হারিয়ে গেল। নতুন স্বপ্নটা ভেঙে গেল। গত শনিবার আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে এলমির বিয়ের অনুষ্ঠানেই আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৬৩ জন নিহত হন। ওই হামলায় নিহত হয়েছেন এলমির ভাই, বন্ধু ও কাছের মানুষেরা।

কাবুলের পশ্চিমাঞ্চলে বিশাল হলঘরে চলছিল বিয়ের অনুষ্ঠান। সাধারণত আফগানিস্তানে বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোয় শত শত অতিথি উপস্থিত থাকেন। অতিথিরা বড় কোনো হলঘরে সমবেত হন। সে রকমই এই অনুষ্ঠানেও ছিল অসংখ্য অতিথি। নারী ও পুরুষ অতিথিদের জন্য ছিল আলাদা বসার ব্যবস্থা। হঠাৎ করেই পুরুষদের বসার স্থানে বিস্ফোরণ ঘটে। লুটিয়ে পড়ে অসংখ্য মানুষ।

আফগানিস্তানের গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন শোকবিহ্বল এলমি। কিছুক্ষণ আগেও যাঁরা হাসছিলেন, শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলেন, হঠাৎ করে সেসব মানুষের নেই হয়ে যাওয়া যেন মেনেই নিতে পারছেন না তিনি। বলেন, ‘আমার পরিবার, আমার স্ত্রী হতবিহ্বল হয়ে গেছেন। তাঁরা কথাও বলতে পারছেন না। আমার স্ত্রী কিছুক্ষণ পরপর জ্ঞান হারাচ্ছেন। আমার সব আশা হারিয়ে গেছে। ভাই হারিয়েছি, বন্ধু হারিয়েছি, আত্মীয়দের হারিয়েছি। আর কোনো দিনই জীবনের আনন্দ খুঁজে পাব না।’

বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মানসিকভাবে ভেঙে পড়া মিরওয়াইস এলমি জানান, নিহত আপনজনদের জানাজায় যাওয়ার শক্তিও তাঁর নেই। তিনি বলেন, ‘আমার খুব দুর্বল লাগছে। আমি জানি, আফগানদের জন্য এটাই শেষ নয়, এ রকমটা চলতেই থাকবে।’

এলমির শ্বশুর জানান, ওই বিস্ফোরণে তাঁর পরিবারের ১৪ সদস্য নিহত হয়েছেন।

হাসপাতালে চিকিৎসারত ওই বিয়ের এক অতিথি মুনির আহমেদ জানান, সব অতিথি নাচছিলেন। আনন্দ করছিলেন। হঠাৎ করেই বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণের পরে পুরো হলঘরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। সবাই চিৎকার করছিলেন এবং প্রিয়জনের জন্য কাঁদছিলেন।

আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। হামলায় ৬৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১৮০ জন।

আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি এই হামলাকে বর্বরোচিত বলেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, তালেবান জঙ্গিরাই এমন ঘটনার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় যুক্ত তালেবানরা এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ঘানি এক টুইটে জানান, এই পরিস্থিতিতে জরুরি নিরাপত্তাবিষয়ক বৈঠক ডেকেছেন তিনি।