কাশ্মীরিদের মনে গভীর ক্ষত: ল্যানসেট

কাশ্মীরের শ্রীনগরে কড়া নিরাপত্তা। ছবি: এএফপি
কাশ্মীরের শ্রীনগরে কড়া নিরাপত্তা। ছবি: এএফপি

বছরের পর বছর একধরনের সহিংস পরিবেশে রয়েছে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের জনগণ। যুক্তরাজ্যভিত্তিক জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট বলছে, এতে কাশ্মীরের জনগণ মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তাদের মনে গভীর ক্ষত তৈরি হচ্ছে।

ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দানকারী ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল নিয়ে গত শনিবার ল্যানসেট ‘কাশ্মীরের ভবিষ্যৎ ঘিরে ভয় ও অনিশ্চয়তা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন বলছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলছেন নতুন সিদ্ধান্তে কাশ্মীরের পরিস্থিতি বদলাবে। ল্যানসেট বলছে, কাশ্মীরবাসীর মনের গভীর ক্ষত নিরাময়ও জরুরি।

ল্যানসেট বলছে, কাশ্মীরের সাধারণ জনগণ গণবিক্ষোভ, রাষ্ট্র অনুমোদিত সেনা অভিযান, পুলিশ ও বিদ্রোহীদের মধ্যে গোলাগুলি, বনধ এবং কারফিউয়ের চক্রে আটকে গেছে। এই পরিস্থিতি কাশ্মীরের জনগণের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলেছে। মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাশ্মীরিদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। তাদের মনস্তাত্ত্বিক সংকটের বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিয়েছে।

আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইদআউট বর্ডারস (এমএসএফ) ১৯৮৯ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে সংঘর্ষে কাশ্মীরের ক্ষতিগ্রস্ত দুটি গ্রামীণ জেলায় সমীক্ষা চালায়। এমএসএফ বলছে, কাশ্মীরের প্রায় অর্ধেক জনগণ কদাচিৎ নিজেদের নিরাপদ ভাবতে পারে। প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন চোখের সামনে মানুষকে মরতে দেখেছে। এতে আশ্চর্যের কিছু নেই যে, এই অঞ্চলের মানুষেরা উদ্বেগ এবং মানসিক অসুস্থতার (পোস্ট-ট্রম্যাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার পিটিএসডি) শিকার।

এমএসএফের এই সমীক্ষার বরাত দিয়ে ল্যানসেট বলছে, পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে হতাশা, উদ্বেগ ও পিটিএসডি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। প্রায় ৩০ ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক কাশ্মীরি তামাক সেবন করে। তবে বহুদিনের অস্থিরতা সত্ত্বেও কাশ্মীরিদের গড় আয়ু এখনো ভারতবাসীর সার্বিক গড় আয়ুর চেয়ে বেশি। পুরুষদের ক্ষেত্রে ৬৮ দশমিক ৩ বছর, নারীদের ক্ষেত্রে ৭১ দশমিক ৮ বছর। ল্যানসেট ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সিদ্ধান্তকে বিতর্কিত বলেছে।

কাশ্মীর ইস্যুতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার এক প্রতিবেদন গত মাসে প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন বলছে, ১৯৮৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত কাশ্মীরে বহু মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সীমান্তে গোলাগুলি, যৌন সহিংসতা, মানুষকে নিখোঁজ করে দেওয়া। জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সরকারি বাহিনীর অব্যাহত অভিযানের কথা বলা হয়েছে। তবে ভারত পাকিস্তান দুই দেশই ওই সময়ের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।