চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট ঠেকাতে তোড়জোড়

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ছবি: এএফপি
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ছবি: এএফপি

পরিণতি যা–ই হোক, আগামী ৩১ অক্টোবর প্রয়োজনে চুক্তি ছাড়াই ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট) কার্যকর করতে অটল যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। কিন্তু সংসদে বিরোধী দলগুলোর পাশাপাশি ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের অনেক আইনপ্রণেতা চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদ (নো ডিল ব্রেক্সিট) ঠেকাতে উঠেপড়ে লেগেছেন। আস্থা ভোটে হারিয়ে বরিস জনসনকে বিদায় করতেও একমত বিরোধীরা। কিন্তু বরিস জনসনকে বিদায় করার পর প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা নিয়ে চলছে তুমুল বিতর্ক।

বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, বরিসকে আস্থা ভোটে পরাজিত করলে তাঁকেই অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী করতে হবে। সর্বদলীয় আইনপ্রণেতাদের সমর্থন চেয়ে করবিন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর কাজ হবে উপযুক্ত সময়ের জন্য ব্রেক্সিট পিছিয়ে দেওয়া ও এরপর সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করা। করবিন বলেন, কনজারভেটিভ দল ব্রেক্সিট পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। একমাত্র সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে এর সমাধান হতে পারে।

কিন্তু ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের বিদ্রোহীরা বামপন্থী করবিনকে প্রধানমন্ত্রী মানতে নারাজ। ব্রেক্সিটবিরোধী লিবারেল ডেমোক্র্যাটস দলের নেতা জো সুইনসনও করবিনকে প্রধানমন্ত্রী করার বিরোধী। জেরেমি করবিনকে ‘বিভাজন সৃষ্টিকারী’ বলে আখ্যায়িত করেন সুইনসন। তিনি কনজারভেটিভ দলীয় প্রবীণ আইনপ্রণেতা কেন ক্লেয়ার্ক কিংবা লেবার পার্টির সাবেক নেতা হ্যারিয়েট হারমেনকে প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব করেন। বামপন্থী করবিনের আদর্শগত অবস্থান নিয়ে গৃহবিবাদে লিপ্ত লেবার আইনপ্রণেতাদের একটি অংশও করবিনের বিরুদ্ধে সরব।

তবে করবিনের অনুসারী শ্যাডো চ্যান্সেলর জন ম্যাকডোনাল্ড বলেছেন, বরিসকে আস্থা ভোটে সরানোর পর করবিন অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হবেন, এটি কোনো সমঝোতার বিষয় নয়। তিনি বলেন, বরিসকে পরাজিত করার আলামত স্পষ্ট হলেই সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব আনবে লেবার পার্টি।

গ্রীষ্মের ছুটি থাকায় যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টের কার্যক্রম আগামী ৩ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়ার কথা। তবে গত রোববার প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা এক চিঠিতে সর্বদলীয় শতাধিক আইনপ্রণেতা দ্রুত পার্লামেন্টের অধিবেশন চালুর দাবি জানিয়েছেন। চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের পরিণতি নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে তাঁরা বলেন, গণতান্ত্রিক রীতিতে বিশ্বাসী যেকোনো নেতা এমন পরিস্থিতিতে পার্লামেন্টের ভূমিকা উপেক্ষা করতে পারেন না।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের মন্ত্রিসভায় ছিলেন এমন আইনপ্রণেতারা বরিসের ‘নো ডিল’ বিচ্ছেদ ঠেকাতে বিরোধীদের সঙ্গে এককাট্টা। ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির (ডিইউপি) সমর্থনসহ মাত্র একজনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আছে কনজারভেটিভ দল। ফলে ক্ষমতাসীন দলের মাত্র একজন আইনপ্রণেতার বিরুদ্ধাচরণ আস্থা ভোটে সরকারের পতন ঘটাতে যথেষ্ট। গুঞ্জন ছড়িয়েছে, আস্থা ভোটে হারলে বরিস জনসন ৩১ অক্টোবরের পরে সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঠিক করবেন। আর ইইউর সঙ্গে বিদ্যমান চুক্তি অনুযায়ী ৩১ অক্টোবর আপনা-আপনি বিচ্ছেদ ঘটে যাবে।

নিয়ম অনুযায়ী আস্থা ভোটে সরকার পরাজিত হলে বিরোধীরা নতুন সরকার গঠনের জন্য দুই সপ্তাহ সময় পাবেন। কিন্তু সেই সরকার গঠনে সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন মিলবে কি না, তা নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ।

প্রধানমন্ত্রী বরিস নিজ দলের বিদ্রোহীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, পার্লামেন্ট বিচ্ছেদ আটকে দিতে সক্ষম হবে প্রতীয়মান হলে ইইউ যুক্তরাজ্যের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী চুক্তিতে রাজি হবে না। নতুন চুক্তিতে রাজি হওয়ার আগ পর্যন্ত ইইউর সঙ্গে আলোচনা না করার কৌশল নিয়েছিলেন বরিস। কিন্তু চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে তিনি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েলে মাখোঁ এবং জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন।

এদিকে গত রোববার দ্য টাইমসের খবরে ফাঁস হওয়া সরকারি এক নথিতে চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের ধ্বংসাত্মক পরিণতির কথা উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদ হলে যুক্তরাজ্যে খাদ্য ও ওষুধের ঘাটতির পাশাপাশি জন–অসন্তোষ দেখা দিতে পারে।

তবে চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদ প্রস্তুতির দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী মাইকেল গোভ দাবি করেন, ওই নথিতে সর্বোচ্চ খারাপ পরিণতির কথা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বরিস দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এসব ধকল মোকাবিলায় বড় ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।