নারদ দুর্নীতি মামলার অভিযোগপত্র সেপ্টেম্বরে

কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম ও সৌগত রায়। ছবি: প্রথম আলো
কাকলি ঘোষ দস্তিদার, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম ও সৌগত রায়। ছবি: প্রথম আলো

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের চাঞ্চল্যকর নারদ দুর্নীতি মামলার অভিযোগপত্র সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দেওয়া হচ্ছে। ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইয়ের এই অভিযোগপত্রে দুই মন্ত্রী ও তিন সাংসদের নাম আসতে পারে বলে জানা গেছে। দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাজ্য বিধানসভার স্পিকার এবং তিন সাংসদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে লোকসভার স্পিকারের কাছে অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছে সিবিআই।

২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ১৪ মার্চ পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের একদল নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়কের অর্থ গ্রহণের এক চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করে দিল্লির নারদ নিউজ ডটকম নামের একটি ওয়েব পোর্টাল স্ট্রিং অপারেশনের মাধ্যমে। তারা ওই দিন দাবি করে, তাদের হাতে রয়েছে এ–সংক্রান্ত ৫২ ঘণ্টার ফুটেজ।

১৪ মার্চ বিকেলে সেই ভিডিও কলকাতার রাজ্য বিজেপির কার্যালয়ে ফাঁস করে বিজেপি। এই তথ্য ফাঁসের পর সেদিন বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থ নাথ সিং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ দাবি করেছিলেন। অন্যদিকে বিরোধীদলীয় নেতা ও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছিলেন।

স্ট্রিং অপারেশনের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক নেতা, মন্ত্রীর ঘরে ঘরে, হাতে হাতে পৌঁছে যাচ্ছে টাকা। যাঁদের বিরুদ্ধে অর্থ গ্রহণের অভিযোগ আসে তাঁরা হলেন মুকুল রায় (সাবেক রেলমন্ত্রী, ২০ লাখ টাকা), সুব্রত মুখোপাধ্যায় (পঞ্চায়েত মন্ত্রী, ৫ লাখ টাকা), সুলতান আহমেদ (তৃণমূল সাংসদ, ৫ লাখ টাকা), সৌগত রায় (তৃণমূল সাংসদ, ৫ লাখ টাকা), শুভেন্দু অধিকারী (তৃণমূল সাংসদ, ৫ লাখ টাকা), কাকলি ঘোষ দস্তিদার (তৃণমূল সাংসদ, ৫ লাখ টাকা), প্রসূন ব্যানার্জি (তৃণমূল সাংসদ, ৫ লাখ টাকা), শোভন চ্যাটার্জি (কলকাতার মেয়র, ৪ লাখ টাকা), মদন মিত্র (সাবেক পরিবহনমন্ত্রী, ৫ লাখ টাকা), ইকবাল আহমেদ (তৃণমূল সাংসদ, ৫ লাখ টাকা), ফিরহাদ হাকিম (পুর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী, ৫ লাখ টাকা) ও মহম্মদ আহমেদ মির্জা (জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা, ৫ লাখ টাকা)। এরপর আরেকটি স্ট্রিং অপারেশনে তৃণমূলের আরও তিন নেতা জড়িত থাকার তথ্য ফাঁস করে ওই নারদ পোর্টাল।

এসব তথ্য ফাঁসের পর সেদিন সাবেক তৃণমূল সাংসদ ও বর্তমান বিজেপির নেতা মুকুল রায় বলেছিলেন, ভোটের আগে তৃণমূলের বিরুদ্ধে এ এক বড় ষড়যন্ত্র।

নারদ দুর্নীতি মামলায় প্রথম পর্যায়ের অভিযোগপত্র দেওয়ার জন্য সিবিআই প্রস্তুতি নিয়েছে। তারা এই দীর্ঘ সময়ে ওই সব নেতার বিরুদ্ধে ঘুষ বা অর্থ গ্রহণের নানা তথ্য সংগ্রহ করেছে।
তবে যতটুকু জানা যাচ্ছে, তাতে মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া না–ও হতে পারে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বিজেপির নেতা মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত তথ্য–প্রমাণ মেলেনি। আর সাংসদ সুলতান আহমেদ তদন্তের সময় মারা যাওয়ায় তাঁর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

সিবিআইর মামলা প্রসঙ্গে তৃণমূলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বিভিন্ন দুর্নীতি মামলায় তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের ফাঁসানো হচ্ছে। এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।

অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা ও কংগ্রেস বিধায়ক আবদুল মান্নান প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা এক চিঠিতে বলেছেন, সারদা ও নারদকাণ্ডে অভিযুক্ত যাঁরা এখন বিজেপিতে যোগদান করেছেন, তাঁদের যেন ছেড়ে দেওয়া না হয়।

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বাম পরিষদীয় দলের নেতা সিপিএমের বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, সারদা ও নারদ কেলেঙ্কারিতে যাঁরা জড়িত, তাঁদের একদিন না একদিন জেলে যেতেই হবে।