বরিসকে ঠেকাতে মরিয়া বিরোধীরা

বরিস জনসন
বরিস জনসন

প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে চুক্তি ছাড়াই যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ ঘটানোর যে বেপরোয়া পথ বেছে নিয়েছেন, তা ঠেকাতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন বিরোধীরা। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন রাজনীতিকও এতে যোগ দিয়েছেন।

গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী বরিসের অনুরোধে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত পার্লামেন্ট স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, পার্লামেন্টকে পাশ কাটিয়ে চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদ ঘটাতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

বৃহস্পতিবার রাতে সরকারি দলের অংশীদার ডিইউপি ছাড়া পার্লামেন্টের বাকি বিরোধী দলগুলো এক যৌথ বিবৃতিতে অবিলম্বে পার্লামেন্ট স্থগিতের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানায়। অথবা সিদ্ধান্তটি পার্লামেন্টে ভোটে দেওয়ার আহ্বান জানায়।

গ্রীষ্মের ছুটি শেষে আগামী মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু হবে। এরপর ১০ সেপ্টেম্বর সরকার পার্লামেন্ট স্থগিত করার আগেই চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদ ঠেকাতে আইন প্রণয়নের কৌশল নিয়েছে বিরোধী দলগুলো। এ জন্য প্রয়োজনে রাতভর অধিবেশন কিংবা আগামী শনি ও রবিবার (সাপ্তাহিক ছুটির দিন) অধিবেশন চালু রাখার বিষয়টি বিবেচনা করছে।

বিরোধী দল ও লেবার নেতা জেরেমি করবিন বলেন, মঙ্গলবারই পার্লামেন্ট স্থগিতের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে প্রস্তাব উত্থাপন করবেন। প্রয়োজনে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে বলে জানান তিনি।

ক্ষমতাসীন দলের আইনপ্রণেতা ও সদ্য সাবেক বিচারবিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড গোক বিরোধীদের উদ্যোগে সমর্থন দিয়ে বলেছেন, যা করার পার্লামেন্ট স্থগিত হওয়ার আগেই করতে হবে। আর প্রবীণ রাজনীতিক কেন ক্লেয়ার্ক বলেন, তিনি করবিনের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে কাজ করতে রাজি। সদ্য সাবেক চ্যান্সেলর ফিলিপ হ্যামন্ড এবং অলিভার লেটউইনসহ কনজারভেটিভ দলের আরও বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতা চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদ ঠেকাতে বিরোধীদের প্রকাশ্যে সমর্থন দিচ্ছেন। এ ছাড়া বরিসের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন হাউস অব লর্ডসের হুইপ জর্জ ইয়ং এবং স্কটল্যান্ডের কনজারভেটিভ দলের প্রধান রুথ ডেভিডসন।

এদিকে ব্রেক্সিটবিরোধী প্রচারক জিনা মিলার পার্লামেন্ট স্থগিতের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে জুডিশিয়াল রিভিউর যে আবেদন করেছেন, সেটি আমলে নিয়েছেন আদালত। শিগগির বিষয়টি নিয়ে শুনানি হবে। সাবেক কনজারভেটিভ দলীয় প্রধানমন্ত্রী জন মেজর এ আইনি লড়াইয়ে জিনা মিলারের সঙ্গে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।

তবে একই বিষয়ে ভিন্ন এক মামলায় ব্রেক্সিটবিরোধী ৭৫ জন আইনপ্রণেতা স্কটল্যান্ড আদালতে পার্লামেন্ট স্থগিতের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা চেয়েছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।

সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাজপথের বিক্ষোভও অব্যাহত আছে। করবিন-সমর্থিত মোমেনটাম গ্রুপ আগামীকাল শনিবার দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়ার জন্য সমর্থকদের প্রতি তাঁরা আহ্বান জানিয়েছে।

তুমুল বিরোধিতা সত্ত্বেও আগামী ৩১ অক্টোবর বিচ্ছেদ কার্যকরে অটল প্রধানমন্ত্রী বরিস। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ইইউর সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনে চেষ্টার ত্রুটি রাখা হবে না। তবে চুক্তি না হলেও নির্ধারিত দিনেই বিচ্ছেদ ঘটবে।

আর হাউস অব কমন্সের নেতা ও কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী জেকব রিচ মগ বিরোধীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, ‘তাঁরা ভালো করেই জানেন দুটি উপায়ে তাঁরা নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারেন। এক. সরকার পরিবর্তন করা। দুই. আইন পরিবর্তন করা। এর কোনোটি করার সাহস ও সামর্থ্য যদি তাঁদের না থাকে তবে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী আগামী ৩১ অক্টোবর বিচ্ছেদ ঘটে যাবে।’