বিধি মেনে ডি-ক্যাম্প তৈরির নির্দেশ

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রক্ষা সংগঠন যাতে বিরূপ প্রশ্ন তুলতে না পারে, আসামে অনাগরিকদের জন্য বন্দিশালা তৈরির সময় তা বিবেচনায় রাখতে হবে। আসাম সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এই রাজ্যে যে বন্দিশালাগুলো ‘ডিটেনশন ক্যাম্প’ হিসেবে গণ্য হচ্ছে, সেগুলোর মান মোটেই প্রশ্নাতীত নয়। সেই কারণে নতুন বন্দিশালা তৈরির সময় বিশেষ নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তৈরি (এনআরসি) নিয়ে দেশজোড়া বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতেই এই নির্দেশ। গত ৩১ আগস্ট প্রকাশিত চূড়ান্ত তালিকায় স্থান হয়নি রাজ্যের ১৯ লাখেরও বেশি মানুষের। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল তাদের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর বিষয়টি গড়াবে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরেই নির্ধারিত হবে রাজ্যে মোট অনাগরিকের সংখ্যা কত। সংখ্যাটি যা–ই হোক, তাদের স্থান হবে বন্দিশালা অথবা ডিটেনশন ক্যাম্প বা ডি–ক্যাম্পে। সেই ডি–ক্যাম্প যাতে বাসযোগ্য হয়, সেই নির্দেশই রাজ্যকে দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে গোটা রাজ্যে ছয়টি ডি–ক্যাম্প রয়েছে। এই শিবিরগুলোর অবস্থিতি বিভিন্ন জেলখানা বা সংশোধনাগারের অভ্যন্তরে। নানা ধরনের অপরাধীদের পাশাপাশি এই জেলখানাগুলোয় সন্দেহভাজন অনাগরিকদের থাকতে হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক স্তরে নানা কথা শোনা গেছে। প্রশ্ন তুলেছে মানবাধিকার রক্ষা সংগঠনগুলোও। গোয়ালপাড়ার মাটিয়ায় বিশাল ফাঁকা জায়গায় যে বন্দিশালা গড়ে তোলা হচ্ছে, তা তৈরির সময় অনাগরিকদের সুবিধা ও স্বাচ্ছন্দ্যের ওপর বিশেষ নজর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় তরফে এই পরামর্শ দিয়ে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক রীতি ও নিয়ম মেনেই যেন ওই বন্দিশালা তৈরি করা হয়। এমনভাবে তা করতে হবে, যাতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার রক্ষা সংগঠনগুলো কোনো বিরূপ মন্তব্য না করতে পারে। দেখতে হবে ভারতের ভাবমূর্তি যাতে কোনোভাবে নষ্ট না হয়।

আসামের রাজধানী গুয়াহাটি থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে গোয়ালপাড়া জেলার মাটিয়ায় তৈরি করা হচ্ছে এই বন্দিশালা যেখানে ৩ হাজার অনাগরিক বসবাস করতে পারবেন। এই ধরনের ১০টি ডি–ক্যাম্প খোলা হবে বরপেটা, কামরূপ, ডিমা, হাসাও, নগাঁও, করিমগঞ্জ, লখিবাড়ি, শোণিতপুর, নলবাড়ি ও শিবসাগরে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খরচ হবে কমবেশি এক হাজার কোটি রুপি। প্রতিটি ডি–ক্যাম্পে রাখতে হবে স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং বিনোদনের ব্যবস্থা।

এনআরসির চূড়ান্ত পর্যায় শেষ হলে ১৯ লাখ প্রশ্নবিদ্ধ মানুষের মধ্যে কতজন নাগরিক বলে গণ্য হবে এবং কতজন অনাগরিক, সেই আন্দাজ রাজ্য বা কেন্দ্র কোনো সরকারের কাছেই স্পষ্ট নয়। সংখ্যাটা কয়েক লাখও যদি হয়, তা হলে সেই মানুষদের সবার কোথায় ঠাঁই হবে, কেউ জানে না। বর্তমানে ছয়টি সংশোধনাগারে রয়েছে এক হাজারের কিছু কম মানুষ। মাটিয়ার ডি–ক্যাম্পে ঠাঁই হবে তিন হাজারের। বাকি ১০টিতে নাহয় আরও ৩০ হাজার। অনাগরিকের সংখ্যা কয়েক লাখ হলে? কোথায় রাখা হবে এত মানুষকে? এই প্রশ্নের কোনো উত্তর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা রাজ্য সরকারের কাছে নেই।

কেন্দ্রীয় সরকার আপাতত দেশের ভাবমূর্তি রক্ষায় বেশি চিন্তিত। এনআরসি নিয়ে বিদেশি সংবাদমাধ্যমে অস্বস্তিকর খবর প্রকাশের পর বিদেশি সাংবাদিকদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া আসাম প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এনআরসি নিয়ে আসামবাসীদের উদ্বেগের খবর ঠেকানো যাচ্ছে না। রাজ্যের প্রচারমাধ্যম মারফত সেসব খবর ছড়িয়ে পড়ছে দেশে ও বিদেশে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার তাতে বিব্রত ও ব্যতিব্যস্ত।