চন্দ্রযান-২-এর প্রধান বিজ্ঞানীর জুতা কেনারও সামর্থ্য ছিল না

এক প্রান্তিক কৃষক পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন ড. কে শিবন। তাঁর পরিবার এতটাই হতদরিদ্র ছিল যে কলেজে যাওয়ার আগ পর্যন্ত চটি–জুতা ছিল না তাঁর। ছবি: রয়টার্স।
এক প্রান্তিক কৃষক পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন ড. কে শিবন। তাঁর পরিবার এতটাই হতদরিদ্র ছিল যে কলেজে যাওয়ার আগ পর্যন্ত চটি–জুতা ছিল না তাঁর। ছবি: রয়টার্স।

বিশ্বের ডাকসাইটে বিজ্ঞানীদের নামের সঙ্গে উচ্চারিত হয় ড. কে শিবনের নাম। ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের (ইসরো) প্রধান বিজ্ঞানী তিনি। ছিলেন ভারতের চাঁদে অভিযান প্রকল্প চন্দ্রযান-২-এর প্রধান। তবে সাফল্যের এতটা ধাপ পেরোতে শিবনকে পাড়ি দিতে হয়েছে বহু চড়াই–উতরাই। সম্প্রতি এনডিটিভিকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এই বিজ্ঞানী। সেখানে উঠে এসেছে শৈশব আর কৈশোরে দারিদ্র্যের সঙ্গে শিবনের এক কঠোর লড়াইয়ের চিত্র।

এনডিটিভিকে শিবন জানান, তামিলনাড়ুর এক প্রান্তিক কৃষক পরিবারে জন্ম তাঁর। পরিবার এতটাই হতদরিদ্র ছিল যে কলেজে যাওয়ার আগে চটি–জুতা পর্যন্ত ছিল না শিবনের। খালি পায়ে ও আধপেটা খেয়ে স্কুলে যেতে হয়েছে তাঁর।

শিবন বলেন ‘(জীবনে) কী পেলাম তা নিয়ে কখনো মাথা ঘামাইনি। বরং আগামী দিনে কী পেতে পারি? সব সময় এই চিন্তাই তাড়িয়ে বেড়াত। তাই স্কুলে পড়ার পাশাপাশি বাবার সঙ্গে খেতে চাষ কাজ করতে কোনো দিন লজ্জা লাগেনি। বিরক্তও হইনি।’

এই বিজ্ঞানী বলেন,‘কৃষিকাজের পাশাপাশি সংসার চালাতে বাবা ফলের দোকান দিয়েছিলেন। যখন আমের মৌসুম আসত, আমি বাবার সঙ্গে বসে আম বিক্রি করতাম। এতে টাকা খরচ করে বাবাকে আর অতিরিক্ত লোক রাখা লাগত না।’

শিবন বলেন, ‘প্রথম জুতা পায়ে দিই কলেজে ভর্তি হওয়ার পর। এর আগে খালি পায়েই স্কুলে ও বাবার দোকানে যাতায়াত করতাম। জুতার পাশাপাশি স্কুল-কলেজে পরে যাওয়ার মতো প্যান্টেরও অভাব ছিল। তাই বেশির ভাগ সময় ধুতি পরে যেতাম।’

শিবনের আক্ষেপের গল্পটা এখানেই শেষ নয়। টাকার অভাবে ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারেননি তিনি। সেই সব দিনের কথা মনে করে এই বিজ্ঞানী বলেন, ‘সবাই ভালো কলেজ দেখে ভর্তি হয়। তবে আমি পারিনি। আমার প্রথম ও একমাত্র শর্ত ছিল, যে কলেজ বাড়ির কাছে হবে সেটাতে ভর্তি হব। যেন কলেজ থেকে ফিরে বাবার দোকানে বসতে পারি।’

শিক্ষাজীবন শেষ করে চাকরির জন্যও নতুন এক যুদ্ধের মুখোমুখি হতে হয় শিবনের। তিনি বলেন, ‘পড়া শেষে চাকরির জন্য অনেক ঘুরতে হয়েছে। কারণ, সে সময় অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের চাকরির বাজার একেবারেই কম ছিল। মাত্র দুটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ ছিল। চাকরি পাওয়ার জন৵ আবারও পড়া শুরু করি আমি।’

চন্দ্রযান-২ প্রকল্প ব্যর্থ হওয়ার আক্ষেপটা বেশ পোড়াচ্ছে এই বিজ্ঞানীকে। আক্ষেপ থেকেই তাই জীবনের কাছে পোড় খাওয়া শিবন বলেন, ‘আমি স্যাটেলাইট সেন্টারে যোগ দিতে চেয়েছিলাম, তার পরিবর্তে বিক্রম সারাভাই সেন্টারে দায়িত্ব পেলাম। সারাভাই সেন্টারে যোগ দেওয়ার পর সেখানে অ্যারোডাইনামিকস দলে কাজ করতে চেয়েছিলাম। সেটার পরিবর্তে অন্য একটা দলে যোগ দিতে হলো। যখনই আমি পছন্দের কিছু করতে চেয়েছি, আমাকে নিরাশ হতে হয়েছে।’