পাশ্চাত্য ধাঁচের পোশাকে সৌদি নারী বিপণিবিতানে

পাশ্চাত্য ধাঁচের পোশাক পরা সৌদি নারী মাশায়েল আল–জালুদ। রাজধানী রিয়াদে।  এএফপি
পাশ্চাত্য ধাঁচের পোশাক পরা সৌদি নারী মাশায়েল আল–জালুদ। রাজধানী রিয়াদে। এএফপি

পায়ে উঁচু জুতা, গায়ে পাশ্চাত্য ধাঁচের দৃষ্টিনন্দন পোশাক। চুলগুলো খোলা। চকচকে মোজাইকের ওপর দিয়ে একজন নারী যখন হেঁটে যাচ্ছিলেন, তখন সবার নজর ছিল তাঁর প্রতি। পোশাক-পরিচ্ছদের ওপর থাকা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গত সপ্তাহে রাজধানী রিয়াদের একটি বিপণিবিতানে এভাবেই হাজির হন এক সৌদি নারী। বিষয়টি শুধু সৌদি আরবেই নয়, সারা বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

ওই নারীর নাম মাশায়েল আল-জালুদ (৩৩)। এভাবে রাস্তায় হাঁটতে দেখে পথচারীরা ভেবেছিলেন, তিনি কোনো তারকা হবেন। আদতে তা নন। তিনি একজন সাধারণ নারী। তিনি রিয়াদে একটি প্রতিষ্ঠানে মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত।

পর্দার বিধান থাকায় বাইরে বের হতে হলে সৌদি আরবে নারীদের আবায়া (বোরকা) পোশাক পরতে হয়। অতিরক্ষণশীল দেশটিতে এটাকে সৌন্দর্যের বিধান হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু গত বছর মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি নারীদের পোশাকের বিধিবিধান শিথিল করার ইঙ্গিত দেন। যুবরাজ নারী স্বাধীনতা নিয়ে নানা পদক্ষেপ নিলেও পোশাকের ওপর থাকা বিধিনিষেধের বিষয়টি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তোলেননি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাঝেমধ্যে এ নিয়ে কিছু নারীকে প্রতিবাদ জানাতেও দেখা যায়। এ সময় সেখানে তাঁরা বোরকা পরা নারীদের ছবিও পোস্ট দেন। কিন্তু ঝুঁকি জেনেও অনেক নারী সাধারণ পোশাকেই বাইরে বের হতে শুরু করেছেন। মুষ্টিমেয় ওই নারীর একজন মাশায়েল।

তবে মাশায়েলের ঘটনাটি চোখ এড়ানোর মতো নয়। তাঁর পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া এক নারী তো প্রশ্নই করে বসেন, ‘আপনি কি তারকা? আপনি কি মডেল?’ হেসে উত্তর দেন মাশায়েল, ‘না, আমি তারকা নই। আমি একজন সাধারণ সৌদি নারী।’

মানাহেল আল ওতাইবি (২৫) নামের এক অধিকারকর্মীও বোরকা ছেড়েছেন। পথ দিয়ে যাওয়ার সময় প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘চার মাস ধরে আমি রিয়াদে বোরকা ছাড়া চলাফেরা করছি। আমি স্বাধীনভাবে, নিষেধাজ্ঞা ছাড়া চলাফেরা করতে চাই। কারণ, এটা আমি চাই। আমি যা পরতে চাই না, সেটা আমাকে কেউ পরাতে পারবে না।’

মাশায়েল বলেন, ‘এখানে কোনো নির্দিষ্ট আইন নেই, নীতি নেই। আমার ক্ষতি হতে পারে। আবায়া ছাড়া বাইরে বের হওয়ার কারণে আমি ধর্মীয় উগ্রবাদীদের হাতে আক্রমণের শিকার হতে পারি।’

অবশ্য জুলাইয়ে একবার বোরকা ছাড়া রিয়াদের আরেকটি বিপণিবিতানে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন মাশায়েল। তবে সে সময় তাঁকে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বোরকা না পরার কারণে।