'হাউডি মোদি' অনুষ্ঠানে ট্রাম্প, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শপথ

হাউডি মোদি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে পরস্পরের প্রশংসা করেন মোদি ও ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
হাউডি মোদি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে পরস্পরের প্রশংসা করেন মোদি ও ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিরলস লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল রোববার যুক্তরাষ্ট্রের হাউসটনে আয়োজিত ‘হাউডি মোদি’ অনুষ্ঠানে তাঁরা এ অঙ্গীকার করেন।

গতকাল রোববার হাউসটনের একটি ফুটবল স্টেডিয়ামের অভ্যন্তরে হাজার হাজার ভারতীয়-আমেরিকানের উপস্থিতিতে এই দুই সমমনা জাতীয়তাবাদী নেতা একে অপরের প্রশংসা করেন।

গেরুয়া রঙা পাগড়ি পরা ঢাকিদের ড্রামের তালে তালে গাঢ় রঙের স্যুট পরে ট্রাম্প এবং হলুদ কুর্তা পরা মোদি ৫০ হাজার জনতার সামনে মঞ্চে প্রবেশ করেন। ‘শেয়ারড ড্রিমস, শেয়ারড ফিউচার’ স্লোগানকে সামনে রেখে অনুষ্ঠানে হাজির হন তাঁরা। এ সময় অনেকেই হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টির গেরুয়া রঙের পোশাক পরে এসেছিলেন।

নিরীহ নাগরিকদের উগ্র ইসলামি সন্ত্রাসবাদের হুমকি থেকে রক্ষা করতে প্রতিজ্ঞার কথা জানিয়ে সবার প্রশংসা কুড়ান ট্রাম্প। ট্রাম্পের উচ্ছ্বসিত ও প্রাণবন্ত সমাবেশে অংশ নেন মোদি। তিনি উপস্থিত অতিথিদের ট্রাম্পের অবস্থানের জন্য দাঁড়িয়ে সম্মান জানানোর আহ্বান জানান। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাহার এবং আত্মঘাতী বোমা হামলার জবাবে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে যুদ্ধবিমান প্রবেশের আদেশসহ নানা বিতর্কিত সিদ্ধান্তে ট্রাম্প ভারতীয় এই নেতার পাশে ছিলেন।

প্রথম সারিতে নজর রেখে মনোযোগ দিয়ে অনুবাদের মাধ্যমে মোদির কথা শোনেন ট্রাম্প। এ সময় মোদি কাশ্মীরের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করা ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের প্রতি স্পষ্টভাবে কিছু বক্তব্য দেন। হিমালয় ভূখণ্ডের এ অংশ নিয়ে বিতর্কের ব্যাপারে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেন।

মোদি জানান, তিনি কাশ্মীরের জন্য ভারতের অন্যান্য অংশের সমান মর্যাদা ও উন্নয়নের ব্যবস্থা গঠনের চেষ্টা করছেন। মোদি বলেন, তাঁর এই পদক্ষেপ ‘নিজের দেশ পরিচালনায় অক্ষম’ এবং ‘সন্ত্রাসবাদ লালনপালন করছে’ এমন কিছু ব্যক্তিকে অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

মোদি বলেন, এসব ব্যক্তি ভারতকে ঘৃণার বিষয়টিকে তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডার কেন্দ্রবিন্দুতে রেখেছে। কাশ্মীরে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করা ইসলামি জঙ্গিদের মদদ দেওয়ায় পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করেন তিনি।

তবে কাশ্মীরের বেশির ভাগ অঞ্চলে ইন্টারনেট এবং মোবাইল সংযোগ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ায় মানবাধিকার কর্মীদের তীব্র সমালোচনার শিকার হয়েছে ভারত।

কাশ্মীরকে মুক্ত করার দাবিতে বিক্ষোভকারীরা প্ল্যাকার্ড এবং শার্ট হাতে এনআরজি স্টেডিয়ামের বাইরে জড়ো হন। মোদির বিরুদ্ধে ধর্মীয় স্বাধীনতা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনেন তাঁরা। ট্রাম্প প্রশাসনও প্রায়ই এ কাজটিকে উৎসাহিত করে।

আয়োজনটি যে দ্বিপক্ষীয়, তা নিশ্চিত করতে টেক্সাস ইন্ডিয়া ফোরাম নামের আয়োজক সংগঠনটি কয়েকজন বিশিষ্ট ডেমোক্র্যাটকেও আমন্ত্রণ জানায়। হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসের দ্বিতীয় শীর্ষ ডেমোক্র্যাট স্টেনি হোয়ার বলেন, উভয় প্রধান মার্কিন রাজনৈতিক দল ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে চায়। তবে ভারতের ঐতিহাসিক ‘ধর্মনিরপেক্ষতা এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার’ ব্যাপারে কিছুটা উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।

স্টেনি বলেন, ‘আমেরিকান এবং ভারতীয়দের অবশ্যই নাগরিকদের মঙ্গলের জন্য গৃহীত প্রতিশ্রুতি ও আকাঙ্ক্ষা বাস্তবে পরিণত করার চেষ্টা করতে হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম নৃতাত্ত্বিক বৈচিত্র্যময় শহর হাউসটন। টেক্সাসের এই শহরটিতে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রবেশের সম্ভাবনা একেবারে শূন্যের কোঠায়। পরের বছর ট্রাম্পের নিশ্চিত জয়ের রাজ্য এটি। তাই জাতিগত বৈচিত্র্যকে খুব একটা পছন্দ না করা ট্রাম্পও এখানে দাঁড়িয়ে ভারতীয়-আমেরিকানদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমরা আপনাদের ভালোবাসি।’

মোদির জন্মস্থান গুজরাটের এক বাসিন্দা ভাবিন পারিখ বলেন, ‘এটা ডেমোক্র্যাট বা রিপাবলিকানের প্রশ্ন নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন করছেন, সেটিই মুখ্য বিষয়।’