মোদির পুরস্কার ঘিরে বিতর্ক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: এএফপি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: এএফপি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘গ্লোবাল গোলকিপারস গোলস অ্যাওয়ার্ড ২০১৯’ পুরস্কার ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। পুরস্কারের কথাটি এক টুইটের মাধ্যমে প্রকাশ হয়ে পড়ার পর থেকেই সমালোচনা শুরু হয়েছে।

বিবিসির খবরে জানা যায়, স্থানীয় সময় আজ মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে নরেন্দ্র মোদির হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এই সম্মানসূচক পুরস্কার দেয়। ভারতে উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ বন্ধে স্বচ্ছ ভারত অভিযান কর্মসূচিকে সফল বিবেচনায় নরেন্দ্র মোদিকে এ পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। জাতিসংঘের ৭৪তম অধিবেশন উপলক্ষে এখন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সফরে রয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং ২ সেপ্টেম্বর এক টুইটে নরেন্দ্র মোদি পুরস্কৃত হওয়ার কথা জানান। ওই টুইটের পর থেকেই এই পুরস্কারের বিরোধিতা করে এক লাখের বেশি মানুষ পিটিশনে সই দেন। নোবেলজয়ীদের মধ্যে অন্তত তিনজন দ্বিমত পোষণ করেছেন এই পুরস্কার নিয়ে। এর মধ্যে নোবেলজয়ী শিরিন এবাদিও রয়েছেন। অনেক তারকা অতিথিও অনুষ্ঠানে থাকতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ব্রিটিশ-এশীয় অভিনয়শিল্পী জামিলা জামিল ও রিজ আহমেদ রয়েছেন। তবে অনুষ্ঠানে না আসার কারণ তাঁরা ব্যাখ্যা করেননি।

টুইটে সমালোচকেরা বলছেন, মোদির ‘টয়লেট সাফল্যের’ অনুষ্ঠানটি এখন রূপ নিয়েছে ‘টয়লেট-বিভ্রাটে’। তাঁদের মতে, যে কারণে নরেন্দ্র মোদিকে পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে, তা সফল ঘোষণা করার মতো পর্যায় এখনো আসেনি। ভারতের জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ এখনো উন্মুক্ত স্থানে মলমূত্র ত্যাগ করে। এ সংখ্যা কোটি কোটি। তা ছাড়া পুরস্কারটির দাবিদার তৃণমূল পর্যায়ের রাজনৈতিক প্রতিনিধি ও অধিকারকর্মীরা।

মোদি সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকার ক্লিন ইন্ডিয়া মিশন বা স্বচ্ছ ভারত অভিযান কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র মানুষের জন্য কয়েক কোটি টয়লেট নির্মাণ করেছে। বলা হচ্ছে, ২০১৪ সাল থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানের আওতায় গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র মানুষের জন্য এ বছরের অক্টোবরের মধ্যে ৯ কোটি টয়লেট নির্মাণ শেষ করা হচ্ছে। বেশির ভাগ রাজ্য এখন উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগমুক্ত বা ওপেন ডিফিকেশন ফ্রি (ওডিএফ) এলাকা।

তবে বিবিসির অনুসন্ধান বলছে, এসব টয়লেটের অনেকগুলো নানা অব্যবস্থাপনায় অকার্যকর হয়ে পড়ছে। বহু বছরের অভ্যাসের কারণে ঠিকঠাকভাবে পানি ব্যবহার করছে না লোকজন। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতের উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকায় লোকজন খোলা জায়গাতেই মলত্যাগ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। তাদের কাছে এভাবে টয়লেট করাটাকে ‘স্বাস্থ্যকর’ মনে হয়। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, বাড়িতে টয়লেট নির্মাণে দরিদ্রদের ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। যেহেতু এই ভর্তুকি একবছরের বেশি সময় ধরে কিস্তিতে দেওয়া হয় তাই অনেক দরিদ্র পরিবারকে নির্মাণকাজ শেষের জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়।

স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য কর্মরত অলাভজনক গ্রুপ হাউজিং সেবা ট্রাস্টের সিরাজ হিরানি বলেন, ভর্তুকিপ্রাপ্ত অনেকে টয়লেট নির্মাণের কাজ শুরু করলেও শেষ করেননি।

বিবিসির অনুসন্ধানে আরেকটি সমস্যার কথা উঠে এসেছে। তা হলো, টয়লেট নির্মাণের জন্য ভর্তুকি দেওয়া হলেও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য দেওয়া হয় না। ফলে গ্রামের অনেকে গর্ত খুঁড়ে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করেন। সে ক্ষেত্রে সিরাজ হিরানির আশঙ্কা, উপকূলীয় এলাকার ভূগর্ভস্থ পানি ও মাটি দূষিত হতে পারে।

তবে হিরানির মতে, উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ আগের চেয়ে অনেক কমেছে। এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জে হলো, কীভাবে এটা টেকসই হবে। তিনি আরও বলেন, সরকারি পরিসংখ্যান অবকাঠামোগত বিষয়ের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। যেমন টয়লেট নির্মাণ করা। সে তুলনায় এই কর্মসূচির সফলতার জন্য টয়লেটের প্রকৃত ব্যবহার অথবা টয়লেট ব্যবহারে লোকজনকে অভ্যস্ত করার বিষয়টির দিকে সরকারের নজর কম।

এসব সমালোচনায় এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি মোদি। গত ২০ সেপ্টেম্বর এক টুইটে তিনি পুরস্কারের জন্য বিল গেটস ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ দিয়েছেন।

বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে পুরস্কারপ্রাপ্ত হিসেবে মোদির নাম আগে ঘোষণা করা হয়নি। এতে বলা হয়েছিল, অনুষ্ঠানের দিন পুরস্কারপ্রাপ্তদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হবে। সমালোচনার পর ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে মোদি একজন।

সমালোচনার মুখে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বিবিসিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বিল গেটস ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, স্যানিটেশন খাতটি কখনো উল্লেখযোগ্য মনোযোগ পায়নি। অনেক সরকার এটা নিয়ে কথা বলতে চায় না। কারণ এ ক্ষেত্রে সহজ সমাধান নেই। স্বচ্ছ ভারত অভিযানের আগে ৫০ কোটিরও বেশি ভারতীয় জনগণের নিরাপদ স্যানিটেশনের নিশ্চয়তা ছিল না। এখন বেশির ভাগের আছে। এখনো অনেক পথ যেতে হবে। কিন্তু স্যানিটেশনের বিষয়টি এখন ভারতে গুরুত্ব। স্বচ্ছ ভারত অভিযান কর্মসূচি বিশ্বের অন্য দেশগুলোর জন্য মডেল হতে পারে।