যুক্তরাষ্ট্রে রহস্যঘেরা স্থান 'এরিয়া ফিফটি ওয়ান'

গোপন এই জায়গায় সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার নেই। ছবি: রয়টার্স
গোপন এই জায়গায় সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার নেই। ছবি: রয়টার্স

২০ বছর বয়সী ম্যাটি রবার্টস গত জুন মাসে মজার ছলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ইভেন্ট খোলেন। ইভেন্টটির নাম দেন ‘ঝাঁকে ঝাঁকে এরিয়া ৫১-এর দিকে ছুটে চল। তারা আমাদের সবাইকে থামাতে পারবে না’। মজা করে ইভেন্টটি খোলা হলেও এর বদৌলতে আরও একবার আলোচনায় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গোপনীয় জায়গা ‘এরিয়া ৫১’। চরম গোপনীয়তায় ঘেরা এই জায়গাটির মধ্যে কী আছে, কেনই বা জায়গাটিকে ঘিরে এত লুকোচুরি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের, এসব বিষয়ে কৌতূহলের অন্ত নেই মানুষের।

কোথায় এই ‘এরিয়া ৫১’
যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে ও লাস ভেগাস থেকে ১৩৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত গ্রুম হ্রদের ধারে অবস্থিত এরিয়া ৫১। প্রায় ৩০ লাখ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা এই এলাকা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার ফোর্সের (বিমানবাহিনী) ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর ভেতরে কী কাজ হয়, তা খুবই সতর্কতার সঙ্গে গোপন রাখা হয়। এলাকাটির বাইরে সব সময় সতর্কতাসূচক সাইনবোর্ড, সিসি ক্যামেরা ও সশস্ত্র পাহারাদার মজুত থাকে।

সিসি ক্যামেরা দিয়ে সব সময় নজরদারি চলে এখানে। ছবি: রয়টার্স
সিসি ক্যামেরা দিয়ে সব সময় নজরদারি চলে এখানে। ছবি: রয়টার্স

আশপাশে যাওয়া তো দূরের কথা, এরিয়া ৫১-এর ওপর দিয়ে উড়োজাহাজ চালানোও নিষিদ্ধ। তবে এখন স্যাটেলাইট দিয়ে মহাকাশ থেকে এর কিছু ছবি সংগ্রহ করা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম দুটি গোপন জায়গা নেভাদা টেস্ট সাইট ও নেভাদা টেস্ট অ্যান্ড ট্রেনিং রেঞ্জের গোপনীয়তার সঙ্গে এরিয়া ৫১-এর তুলনা করা হয়।

কেন এটি নির্মাণ করা হয়েছিল
যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার স্নায়ুযুদ্ধের সময় ‘এরিয়া ৫১’ নির্মাণ করা হয়। ১৯৫৫ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে প্রথমবারের মতো এর অস্তিত্বের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে নেয়। এর চার মাস পর, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামা প্রথম জনসমক্ষে এরিয়া ৫১-এর কথা প্রকাশ করেন।

কী হয় সেখানে
এরিয়া ৫১-এর ভেতরে কী কাজ হয়, সে ব্যাপারে কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে ধারণা করা হয়, শুরু থেকেই অত্যাধুনিক সব যুদ্ধবিমান বানানোর জন্য মার্কিন সেনাবাহিনী এটিকে ব্যবহার করে আসছে। প্রায় দেড় হাজার লোক এর ভেতরে কাজ করেন বলে ধারণা করা হয়। এরিয়া ৫১-এর ইতিহাস নিয়ে লেখালেখি করা অ্যানি জ্যাকবসেন বিবিসিকে বলেছেন, ‘এরিয়া ৫১ হলো পরীক্ষা চালানোর ও অনুশীলনের জায়গা। সেই ১৯৫০-এর দশকে ইউ-টু স্পাই প্লেন দিয়ে এর গবেষণাকর্ম শুরু হয়। এখন নিত্য নতুন ড্রোন বানানোর পরীক্ষাও চলে এর ভেতর।’

বেশ কয়েকটি ব্যারিকেড দিয়ে এরিয়া ৫১-এ প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে। ছবি: রয়টার্স
বেশ কয়েকটি ব্যারিকেড দিয়ে এরিয়া ৫১-এ প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে। ছবি: রয়টার্স

এরিয়া ৫১ ঘিরে যেসব গুজব আছে
এরিয়া ৫১ ঘিরে চূড়ান্ত গোপনীয়তার কারণে একে ঘিরে বেশ কিছু গুজবও রটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত গুজবটি হলো, এর ভেতরে একটি এলিয়েন সুপারক্রাফট ও এর চালকের দেহ রয়েছে। ১৯৪৭ সালে নিউ মেক্সিকোর রোজওয়েলে সুপারক্রাফটটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর সেটিকে এখানে এনে রাখা হয়। ১৯৮৯ সালে রবার্ট লাজার নামে এক ব্যক্তি দাবি করেন, তিনি এরিয়া ৫১-এর ভেতরে এলিয়েন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দাবি, এর ভেতরে কোনো এলিয়েন বা এলিয়েনের সুপারক্রাফট নেই।

এখানে কেন ঢোকা নিষেধ
এরিয়া ৫১-এ সর্বসাধারণের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে মার্কিন বিমানবাহিনী বলেছে, ‘মার্কিন বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র এরিয়া ৫১। এখানে আমেরিকার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর ভেতরে প্রবেশের ব্যাপারে সবাইকে নিরুৎসাহিত করা হয়ে থাকে।’