'শুধু কাশ্মীর কেন, উইঘুরদের বিষয়েও সোচ্চার হোন', ইমরানকে মার্কিন কর্মকর্তা

উইঘুর মুসলিমদের প্রতি চীন সরকার কঠোর নীতি অনুসরণ করছে বলে অভিযোগ আছে। ছবি: রয়টার্স
উইঘুর মুসলিমদের প্রতি চীন সরকার কঠোর নীতি অনুসরণ করছে বলে অভিযোগ আছে। ছবি: রয়টার্স

কাশ্মীরে মুসলমানদের নির্যাতনের বিষয়ে প্রায় সব আন্তর্জাতিক ফোরামে সোচ্চার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। কিন্তু চীনে নির্যাতনের শিকার ১০ লাখ উইঘুর মুসলমানের বিষয়ে ইমরান খান বরাবরই চুপ। এ ক্ষেত্রে তাঁর চুপ থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এক মার্কিন কর্মকর্তা। 

এএফপির খবরে বলা হয়েছে, গতকাল শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যালেইস ওয়েলস ইমরান খানের কাছে উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন নিয়ে তাঁর অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, কাশ্মীরে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে সব সময় অভিযোগ করেন ইমরান খান। অথচ চীনে ১০ লাখ উইঘুর মুসলমান মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তাঁদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়, তা নিয়ে কখনো কেন কিছু বলেন না ইমরান খান।

জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের জেরে ভারতের সঙ্গে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। উপত্যকার মুসলমানদের বন্দী করে নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে অসংখ্যবার অভিযোগ করেছেন ইমরান খান। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে অ্যালেইস ওয়েলস বলেন, ‘চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠী বন্দিদশায় থাকা মুসলমানদের বিষয়েও আপনার একই ধরনের উদ্বেগ দেখলে ভালো লাগত। কাশ্মীরের চেয়ে সেখানকার মুসলমানদের মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ আরও বেশি হওয়ার কথা আপনার।’

পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগী দেশ চীন। চীনে মুসলিমদের ওপর কয়েক বছর ধরে চরম অত্যাচার ও নির্যাতন করছে বলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অনেক দিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে। উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের ১০ লাখের বেশি মানুষকে বন্দিশিবিরে আটক করে রেখেছে চীন। তবে সম্প্রতি ইমরান খান বলেছেন, তিনি এ ব্যাপারে কিছু জানেন না। তিনি বলেছেন, আসলেই তিনি এ ব্যাপারে বেশি কিছু জানেন না। চীনের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে দাবি করে তিনি জানান, উইঘুর ইস্যু নিয়ে জনসমক্ষে কোনো কথা বলবেন না।

চীনের উগ্রপন্থীবিরোধী রাজনৈতিক শিবিরগুলোয় উইঘুর সম্প্রদায়ের ১০ লাখ মুসলিমকে আটক রাখা হয়েছে বলে দাবি করে আসছে জাতিসংঘ। তবে জাতিসংঘের এ দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করে না চীন সরকার। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিটি জানিয়েছে, চীন ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে ‘কাউন্টার-এক্সট্রিমিজম সেন্টারগুলোয়’ আটক রেখেছে।

চীনের পশ্চিম অঞ্চলে অবস্থিত স্বর্ণ, তেল ও গ্যাসসম্পদে সমৃদ্ধ শিনচিয়াং প্রদেশে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাঁরা উইঘুর সুন্নি মুসলমান। তাঁরা চীনা নয়, তুর্কি ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত উইঘুর ভাষায় কথা বলেন। বিচ্ছিন্নতাবাদ ও ধর্মীয় জঙ্গিবাদের হিংসাত্মক তৎপরতা রয়েছে এই প্রদেশে। উইঘুর জঙ্গিদের প্রধান সংগঠন ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্টকে (ইআইটিএম) যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করেছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র শিনচিয়াংয়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও উইঘুরদের ওপর নিপীড়ন নিয়ে উচ্চকিত।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলো জাতিসংঘ কমিটির কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে যে চীনের বিভিন্ন শিবিরে উইঘুরদের গণহারে আটক করা হচ্ছে। সেখানে বন্দীদের চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের জন্য বাধ্য করা হয়।