জম্মু-কাশ্মীরে 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত ৫

ভারী বর্ষণের মধ্যেও গতকাল উদ্ধার অভিযান চালায় ভারতীয় সেনাবাহিনী। ছবি: আইএএনএস
ভারী বর্ষণের মধ্যেও গতকাল উদ্ধার অভিযান চালায় ভারতীয় সেনাবাহিনী। ছবি: আইএএনএস

ভারতের জম্মু-কাশ্মীরে গতকাল শনিবার দুটি বন্দুকযুদ্ধ এবং একটি গ্রেনেড হামলার খবর পাওয়া গেছে। পৃথক দুই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় শীর্ষস্থানীয় জঙ্গি সংগঠন হিজবুল মুজাহিদীনের এক সদস্যসহ চার সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ সময় এক সেনাসদস্যও প্রাণ হারান।

গতকাল শনিবার সকালে জম্মু এলাকার রামবান জেলায় বেসামরিক নাগরিককে জিম্মি করার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের বন্দুকযুদ্ধ হয়। দীর্ঘ নয় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আটক ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হলেও এ সময় নিহত হন এক সেনাসদস্য।

নিহত সেনাসদস্যকে জয়সালমিরের বাসিন্দা নায়ক রাজেন্দ্র সিং বলে শনাক্ত করা হয়েছে।

জম্মু অঞ্চলে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল দেবেন্দ্র আনন্দ সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়াকে বলেছেন, ‘বন্দুকযুদ্ধে তিন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। এ সময় আমাদের এক সৈন্যও নিহত হয়েছেন। ’

জম্মু পুলিশের মহাপরিদর্শক মুকেশ সিং সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, ‘উদ্ধার অভিযানে দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।’

নিহত সন্ত্রাসীরা হলেন ওসামা ও তাঁর সহযোগী জাহিদ ও ফারুক। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর বিজেপির প্রবীণ নেতা অনিল পরিহর এবং তাঁর ভাই অজিত পরিহরকে হত্যা, ৯ এপ্রিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) কর্মী চন্দরকান্ত শর্মা এবং তাঁর নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে (পিএসও) হত্যাসহ বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ঘটনার হোতা ছিলেন ওসামা।

দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে রামবান জেলার বাটোতে এলাকার জম্মু-শ্রীনগর মহাসড়কে তিন সন্ত্রাসী একটি যাত্রীবাহী বাস থামানোর চেষ্টা করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

এনডিটিভি জানিয়েছে, সামরিকবাহিনীর পোশাক পরা সন্ত্রাসীদের দেখে বাসচালক গতি বাড়িয়ে পালিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানান। এরপর নিরাপত্তা বাহিনী ওই এলাকা ঘিরে ফেলে তল্লাশি অভিযান শুরু করে।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, ‘আমি দুটো বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছি।’

সূত্র জানায়, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে অভিযান পরিচালনা করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। এক ব্যক্তিকে জিম্মি করে তিন সন্ত্রাসী বাটোতে এলাকার একটি বাড়িতে ঢোকে। সেখানে ঢোকার আগে সন্ত্রাসীরা নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে ও গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।

সব ধরনের পারিপার্শ্বিক ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে চরম সতর্কতার সঙ্গে অগ্রসর হয় নিরাপত্তা বাহিনী। গুলি চালানোর আগে সন্ত্রাসীদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পৃথক এক বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে নিয়ন্ত্রণ রেখার (এলওসি) নিকটবর্তী গুরেজ সীমান্তবর্তী গেন্ডারবলের ওপরের অংশে। সেনাবাহিনীর উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান টুইট করেছেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে এক সন্ত্রাসী নিহত হয়েছেন।

নিহত সন্ত্রাসী এলওসির নিকটবর্তী গুরেজ অঞ্চল থেকে ভারতে অনুপ্রবেশকারী বৃহত্তর গোষ্ঠীর অংশ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তৃতীয় ঘটনাটি ঘটেছে শ্রীনগরের শহরতলিতে। সন্ত্রাসীরা সেখানকার এক জনবহুল এলাকায় গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ হামলায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এই এলাকায় আবারও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় রাস্তায় তখন খুব কম লোক ছিল। নির্জন এলাকার কোন অংশ থেকে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছে, তা খুঁজে দেখছে পুলিশ।

জম্মু ও কাশ্মীর সফরকারী ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল রাজ্য পুলিশ এবং আধাসামরিক বাহিনীকে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান আরও বাড়াতে বলেছেন। বিপুলসংখ্যক সন্ত্রাসী ভারতে অনুপ্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে খবর পেয়ে এ নির্দেশ দেন তিনি।

৫ আগস্টের পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বার জম্মু ও কাশ্মীর সফর করলেন দোভাল। ভারত সরকার সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল করে রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা রদ করে রাজ্যটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করেছে। রাজ্যে কী ঘটছে তা জানতে নিরাপত্তা বাহিনী এবং সাধারণ নাগরিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন দোভাল। সরকার প্রকাশিত কয়েকটি ছবিতে তাকে স্থানীয়দের সঙ্গে খাবার খেতে দেখা গেছে।

দূরদর্শন নিউজ জানিয়েছে, জম্মু ও কাশ্মীরের ২২টি জেলা থেকে নিষেধাজ্ঞা অপসারণ করা হয়েছে। তবে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, গ্রেনেড হামলার পর শ্রীনগরের শহরতলিতে নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত রয়েছে।