লাশ কাটার সময় গান শুনতেন খাসোগির হত্যাকারী

জামাল খাসোগি। ছবি: এএফপি
জামাল খাসোগি। ছবি: এএফপি

সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একের পর এক নতুন তথ্য সামনে আসছে। চার দিন আগে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেছিলেন, খাসোগি হত্যার দায় তাঁর ওপরই বর্তায়। এবার তদন্তে বেরিয়ে এসেছে আরও বেশ কিছু তথ্য। খাসোগিকে হত্যার পর টুকরো টুকরো করেছেন যিনি, তিনি নাকি লাশ কাটার সময় গান শুনতেন!

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তদন্তের জন্য জাতিসংঘের তদন্তকারী দলের কাছে ৪৫ মিনিটের একটি গোপন অডিও রেকর্ড সরবরাহ করেছে তুরস্ক। হেলেনা কেনেডি নামের এক ব্রিটিশ আইনজীবী জাতিসংঘের ওই তদন্তকারী দলকে সহায়তা করছেন। খাসোগির হত্যাকারী সম্পর্কে নতুন তথ্যগুলো এই হেলেন কেনেডিই দিয়েছেন। অডিও রেকর্ডে খাসোগিকে ‘বলি দেওয়ার যোগ্য জানোয়ার’ বলতে শোনা গেছে, এমন কথাও বলেছেন কেনেডি।

সোমবার রাতে বিবিসি টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানে এসে খাসোগি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে নতুন তথ্যগুলো দিয়েছেন কেনেডি। তিনি বলেছেন, ‘ব্যাগে মরদেহ ঠিকভাবে ঢোকানো যাবে কি না, অডিও রেকর্ডে এমন একটি আলোচনা শুনতে পাচ্ছিলাম। তারা খাসোগির আসার জন্য অপেক্ষা করছিল। একপর্যায়ে কেউ বলে ওঠে, বলি দেওয়ার যোগ্য জানোয়ারটা কি এসেছে? কথাগুলো বলার সময় তাদের হাসি স্পষ্ট শোনা যাচ্ছিল।’

এরপরই হত্যাকারীর গান শোনার অভ্যাস সম্পর্কে মুখ খুলেছেন কেনেডি। খাসোগিকে হত্যার জন্য একজন ফরেনসিক প্যাথলজিস্টকে সৌদি দূতাবাসে আনা হয়েছিল, এমনটাই দাবি করেছেন কেনেডি। খাসোগির মরদেহ কাটার সময় ওই প্যাথলজিস্টকে বলতে শোনা গেছে, ‘লাশ কাটার সময় আমি প্রায়ই গান শুনি। কখনো কখনো হাতে কফি কিংবা সিগারেটও থাকে।’ প্যাথলজিস্ট আরও বলেছেন, ‘জীবনে প্রথমবার আমি মাটিতে শুইয়ে লাশ কাটছি। এমনকি কসাইরাও পশু কাটার সময় সেটিকে ঝুলিয়ে নেয়।’

কেনেডি আরও বলেছেন, দূতাবাসে ঢোকার পরপরই খাসোগি বুঝে গিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গে অপ্রীতিকর কিছু ঘটতে চলেছে। কেনেডি বলেছেন, ‘একপর্যায়ে শোনা গেছে, খাসোগি তাঁর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কাছ থেকে আস্তে আস্তে দূরে সরে যেতে লাগলেন। তাঁর কণ্ঠে ভয়ের ছাপ টের পাওয়া যাচ্ছিল। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁর ভাগ্যে খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে।’

তদন্তের কাজে ৪৫ মিনিটের অডিও রেকর্ডটি শুনেছেন জাতিসংঘের তদন্তকারী দলের সদস্য অ্যাগনেস ক্যালামার। তিনি বলেছেন, ‘মৃত্যুর আগে খাসোগি তাঁর হত্যাকারীদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমরা কি আমাকে ইনজেকশন দিতে চলেছ? অপর পক্ষ থেকে উত্তর এসেছিল, হ্যাঁ। এরপরই একটি আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়, অনেকটা দম বন্ধ হয়ে আসার মতো শব্দ। সম্ভবত তাঁর মাথা কোনো প্লাস্টিকের ব্যাগ দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছিল। এরপরই হত্যাকারীরা বলে, মাথা মুড়ে ফেল। এরপর হয়তো খাসোগির শরীর থেকে মাথাটা বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়।’

গত বছরের ২ অক্টোবর খাসোগিকে শেষবার দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। ওই দিন তিনি তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি দূতাবাসে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। পরে জানা যায়, দূতাবাসের ভেতরেই তিনি খুন হন। এ ঘটনায় তুরস্ক বরাবরই সৌদি আরবকে দায়ী করছে। বলা হয়, খাসোগিকে হত্যার জন৵ সৌদি আরব থেকে ১৫ সদস্যের একটি দল পাঠানো হয়েছিল।