ভারত-পাকিস্তান পারমাণবিক যুদ্ধ হলে প্রাণ যাবে সাড়ে ১২ কোটি মানুষের

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, ভারত-পাকিস্তানের পরমাণু যুদ্ধে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি মানুষের প্রাণহানি হতে পারে। ছবি: এএফপি
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, ভারত-পাকিস্তানের পরমাণু যুদ্ধে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি মানুষের প্রাণহানি হতে পারে। ছবি: এএফপি

ভারত ও পাকিস্তান পারমাণবিক যুদ্ধে জড়ালে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়ে ১২ কোটি মানুষ মারা যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক গবেষণাপত্রে এই আশঙ্কা করা হয়েছে। দুই দেশের এই পারমাণবিক যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক জলবায়ুর ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলেও সতর্ক করা হয়েছে ওই গবেষণায়।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির রুটজার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন গবেষক এই গবেষণা করেছেন। বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’–এ গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষকদের আশঙ্কা, ২০২৫ সালে পারমাণবিক যুদ্ধে জড়াতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ ভারত ও পাকিস্তান। তত দিনে দুই দেশ মিলিয়ে ৪০০ থেকে ৫০০ পারমাণবিক অস্ত্র মজুত করে ফেলবে, এমন আশঙ্কাও করেছেন গবেষকেরা। গবেষণায় অংশ নেওয়া অধ্যাপক অ্যালান রোবোক বলেছেন, ‘বর্তমানে নয়টি দেশের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র আছে। কিন্তু এদের মধ্যে কেবল ভারত ও পাকিস্তানই নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার দ্রুত সমৃদ্ধ করছে। অন্য দেশগুলোর তুলনায় ভারত ও পাকিস্তানের পরিস্থিতি ভিন্ন। দেশ দুটির সামরিক যুদ্ধে জড়ানোর অতীত ইতিহাস আছে। সাম্প্রতিক সময়েও দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই বোমা যেখানে পড়বে, শুধু সেখানকার মানুষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা নয়, বরং তা পুরো বিশ্বের জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।’

ভারত-পাকিস্তানের এই পারমাণবিক যুদ্ধ ভয়াবহতার দিক থেকে হিরোশিমার সমতুল্য হতে পারে বলেও সতর্ক করে দিয়েছেন গবেষকেরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমায় পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়। রোবোক বলেছেন, এই পারমাণবিক যুদ্ধের কারণে তাৎক্ষণিকভাবে ৫ কোটি থেকে সাড়ে ১২ কোটি মানুষ মারা যেতে পারে। এ ছাড়া কালো ধোঁয়ায় আকাশ ছেয়ে যাওয়ায় খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে। যে কারণে যুদ্ধের পর অনাহারে অনেক মানুষের মৃত্যু হবে বলেও আশঙ্কা করছেন গবেষকেরা।

পারমাণবিক এই যুদ্ধ বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি বৈশ্বিক জলবায়ুর ওপরেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে ওই গবেষণাপত্রে আশঙ্কা করা হয়েছে। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, পরমাণু অস্ত্রের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে পুরো বিশ্বে গাছপালার হার ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমে যেতে পারে। এ ছাড়া সমুদ্রেও প্রাণের হার ৫ থেকে ১৫ শতাংশ কমতে পারে। পৃথিবীতে সূর্যের আলো আসার হার ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ কমে যেতে পারে, যে কারণে খাদ্য উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। বৃষ্টির পরিমাণও কমে যাবে ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ। পারমাণবিক অস্ত্রের কারণে পরিবেশের ওপর এসব বিরূপ প্রভাব কাটিয়ে উঠতে ১০ বছরের বেশি সময় লাগবে, এমন কথাও বলেছেন গবেষকেরা।