বিক্ষোভে মুখোশ নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ হংকংয়ের

মুখোশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করছে হংকং সরকার। ছবি: এএফপি
মুখোশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করছে হংকং সরকার। ছবি: এএফপি

হংকংয়ে চলমান বিক্ষোভে মুখোশ নিষিদ্ধ করতে আলোচনায় বসতে চেয়েছে সরকার। গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভকারীদের ব্যাপারে ঔপনিবেশিক যুগের এই জরুরি আইনটি প্রয়োগ করার ব্যাপারে আজ শুক্রবার মন্ত্রিসভার বৈঠক করার কথা। খবর এএফপির।

বিরোধীরা অবশ্য বলছে, অর্থনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলটিতে স্বৈরতন্ত্র চর্চা করতেই এ পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার।

আধা-স্বায়ত্তশাসিত শহরটির ওপর চীনা শাসনের বিরোধিতা করে জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। প্রায় চার মাস ধরে চলমান আন্দোলন শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাস এবং প্রজেক্টাইল থেকে বাঁচতে বিক্ষোভকারীরা হলুদ হেলমেট, কালো বা রঙিন চশমা এবং কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যবস্থাসম্পন্ন মুখোশ পরছেন। তাঁদের যেন শনাক্ত করা না যায়, এ জন্য তাঁরা ফেস মাস্ক বা মুখোশ ব্যবহার করছেন।

স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে মন্ত্রিসভার সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেন হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি ল্যাম। বিক্ষোভ চলাকালে মুখে ব্যবহৃত সব আবরণ নিষিদ্ধ করতে জরুরি নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ জারি করা উচিত কি না, সে ব্যাপারে আজ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

হংকংয়ের সরকারি একটি সূত্র দক্ষিণ চীনের ‘মর্নিং পোস্ট’ পত্রিকাকে জানিয়েছে, যদি বিল পাস হয়ে যায়, তবে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আজ বিকেলের পর ঘোষণা করা হবে এবং মধ্যরাত থেকে তা কার্যকর হবে।

চীনে কমিউনিস্ট শাসনের ৭০ বছর পূর্তির দিন গত মঙ্গলবার দেশটির স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হংকংয়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ হয়েছে। এদিন হংকংয়ে ছাতা নিয়ে, মুখোশ পরে দলে দলে বিক্ষোভকারী জড়ো হতে থাকেন। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও জলকামান থেকে পানি ছোড়ে। পুলিশকে লক্ষ্য করে বিক্ষোভকারীরা প্রজেক্টাইল ও পেট্রলবোমা ছুড়েছেন। এর পরই মুখোশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করে সরকার।

বিক্ষোভ চলাকালে গত মঙ্গলবার পুলিশের গুলিতে এক তরুণের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে হংকং। এর পরদিন জানা যায়, পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটের আঘাতে ইন্দোনেশিয়ার এক সাংবাদিকের ডান চোখ স্থায়ীভাবে অন্ধ হয়ে গেছে।

হংকংয়ে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে পুলিশ এ পর্যন্ত ২৬৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। শতাধিক আন্দোলনকারীকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ৩০ জন সদস্য আহত হয়েছেন।

১৯৬৭ সালে বছরব্যাপী চলা দাঙ্গায় বামপন্থীদের বোমা হামলা ও হত্যাকাণ্ডে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ মারা যান। ব্রিটিশরা পুলিশকে গ্রেপ্তারের অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়ার জন্য বিশেষ আইন জারি করে এবং গণমাধ্যম ব্যাপক সেন্সরশিপের মধ্যে পড়ে যায়।

সরকারি সমর্থকেরা বলছেন, কঠোর প্রতিবাদকারীদের সহিংসতা ক্রমেই বাড়তে থাকায় তা মোকাবিলা করতে জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করা প্রয়োজন।

তবে সমালোচকেরা বলছেন, আইনসভা অতিক্রম করে এবং ল্যামকে যেকোনো আইন প্রণয়ন করার ক্ষমতা দেওয়া এমন একটি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য বিপজ্জনক হবে। কারণ যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক সাফল্য সেখানকার আইনের শাসন ও বিচার বিভাগীয় স্বাধীনতার ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।

গণতন্ত্রপন্থী আইনজীবী ক্লডিয়া এএফপিকে বলেছেন, ‘চরম সংকট এসে গেছে। আমি উদ্বিগ্ন, এর মাধ্যমে হয়তো দুর্দশা কেবল শুরু হতে যাচ্ছে। আইনের নামে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আন্দোলনকারীদের কোণঠাসা করা হতে পারে।’

তবে ফেস মাস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা কীভাবে প্রয়োগ করা হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

২০০৩ সালে সিভিয়ার অ্যাক্যুট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স) নামের একটি ভাইরাসের কারণে তিন শতাধিক মানুষ মারা যায়। এরপর থেকে হংকংয়ে মুখোশ বা ফেস মাস্কের ব্যবহার বেড়ে গেছে।

হংকংয়ে আসামি প্রত্যর্পণ বিল উত্থাপন করা হয় গত ফেব্রুয়ারিতে। বিল অনুসারে বিচারের জন্য সন্দেহভাজন আসামিকে চীনের মূল ভূখণ্ডে পাঠানো যাবে। তখন হংকংয়ের জনগণ বলেছিলেন, বিলটি পাস হলে হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসন খর্ব হবে। বিলটি বাতিলের দাবিতে গত মার্চে বিক্ষোভ শুরু হয়।