আদালতে নিজের বুকে গুলি বিচারকের

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

থাইল্যান্ডের বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়ে আদালতকক্ষে নিজের বুকে গুলি চালিয়েছেন দেশটির একজন বিচারক।

বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, কানাকর্ন পিয়াঞ্চানা নামের ওই বিচারক গত শুক্রবার পাঁচ মুসলিমকে খুনের অভিযোগ থেকে খালাস দিয়ে একটি সুষ্ঠু বিচার বিভাগ গঠনের আহ্বান জানান। এরপর তিনি শপথ পাঠ করে একটি পিস্তল বের করে নিজের বুকে গুলি করেন। তবে বেঁচে গেছেন ওই বিচারক। তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন।

রায় দেওয়ার আগে বিচারকের নিজের হাতে লেখা এক বিবৃতি থেকে ধারণা করা হচ্ছে, তাঁর আত্মহত্যা-চেষ্টার সঙ্গে এ মামলার রায়ের সম্পর্ক থাকতে পারে।

বিচারক কানাকর্ন থাইল্যান্ডের বিদ্রোহী অধ্যুষিত দক্ষিণাঞ্চলের ইয়ালা আদালতে দায়িত্ব পালন করেন। হত্যা ও আগ্নেয়াস্ত্র মামলায় পাঁচজনকে খালাস দেওয়ার পর তিনি ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচারিত (ফেসবুক লাইভ) এক বক্তব্যে আদালতকে সম্বোধন করে কিছু কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘কাউকে শাস্তি দেওয়ার জন্য সুস্পষ্ট ও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ প্রয়োজন। সুতরাং, নিশ্চিত না হয়ে কাউকে শাস্তি দেবেন না।’ তিনি বলেন, ‘আমি বলছি না এই পাঁচ আসামি অপরাধ করেননি, তাঁরা অন্যায় করতেও পারেন। তবে বিচারিক প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য হওয়া দরকার। ভুল লোকদের শাস্তি দিয়ে তাঁদের কেবল বলির পাঁঠাই বানানো হয়।’

ফেসবুক লাইভটি তখন বন্ধ করে দেওয়া হয়। আদালতে উপস্থিত লোকজন জানান, এরপরই থাই রাজার প্রতিকৃতির সামনে শপথ বাক্য পড়েন বিচারক। তারপর পিস্তল বের করে গুলি চালান। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গেছে।

বিচারক কানাকর্ন পিয়াঞ্চা কেন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন, তা এখনো জানা যায়নি। জুডিশিয়ারি অফিসের মুখপাত্র সুরিয়ান হংভিলাই বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ব্যক্তিগত চাপের কারণে তিনি নিজের গায়ে গুলি করেছেন।

তবে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, এমন কিছু হলে বিচারক শুধু যে মামলার রায় দিচ্ছিলেন, সেটিই উল্লেখ করতে পারতেন। নিজেকে গুলি করার আগে বিচারক তাঁর লিখিত এবং ফেসবুকে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, প্রমাণের অভাব থাকা সত্ত্বেও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দোষী সাব্যস্ত করার জন্য তাঁকে চাপ দেওয়া হয়েছিল।

তিনি লিখেছিলেন, ‘এই মুহূর্তে, দেশের আদালতগুলোতে অন্য বিচারপতিদের সঙ্গে আমার মতোই আচরণ করা হচ্ছে। আমি যদি আমার শপথ রক্ষা করতে না পারি, তবে আমি অসম্মানিত হয়ে বাঁচার চেয়ে বরং মরে যাব।’

থাইল্যান্ডের আদালতে বিচারকদের মুখে বিচার ব্যবস্থার সমালোচনা অত্যন্ত বিরল একটি ঘটনা।

মানবাধিকার সংরক্ষণ দলগুলোর অভিযোগ, মালয়-মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে মুসলিম সন্দেহভাজন লোকজনেদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে নিরাপত্তা বাহিনী।