সেনা প্রত্যাহার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-তুরস্ক নতুন উত্তাপ

সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণায় তুর্কি হামলার আতঙ্কে রয়েছে কুর্দিরা। ছবি: এএফপি
সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণায় তুর্কি হামলার আতঙ্কে রয়েছে কুর্দিরা। ছবি: এএফপি

সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা ঘিরে অঞ্চলটিতে নতুন করে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। ঘোষণাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে ওই অঞ্চলে সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করে তুরস্ক। এ ঘটনায় ট্রাম্প তুরস্ককে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিদ্বেষপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও সিরিয়ায় তুরস্কের সামরিক অভিযানের বিরোধিতা করেছে ইরান।

বার্তা সংস্থা এএফপি ও বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো, গত রোববার আকস্মিক এক ঘোষণায় ট্রাম্প মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। সিরিয়ায় কুর্দি বাহিনীর পক্ষে অনেক দিন ধরে মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে। কুর্দি বাহিনী বরাবরই তুর্কি হামলার হুমকিতে রয়েছে। ট্রাম্প সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর মারমুখী হয়ে ওঠে তুরস্ক। তারা সীমান্তে সেনা পাঠানোর তোড়জোড় শুরু করে। গতকাল মঙ্গলবার সীমান্তে আরও সাঁজোয়া যান পাঠিয়েছে তুরস্ক।

সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে এ নিয়ে উদ্বিগ্ন ট্রাম্প। তিনি এটাও জোর দিয়ে বলছেন যে ওই এলাকা থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে মিত্র কুর্দি বাহিনীকে একা ছেড়ে আসা যাবে না।
ইতিমধ্যে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার নিয়ে কুর্দিদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তুর্কি হামলা থেকে বাঁচাতে মার্কিন সেনা ছিল তাদের জন্য সুরক্ষা-ঢাল।
মার্কিন সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে কুর্দি বাহিনী আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট গ্রুপের বিরুদ্ধে লড়ছে। অন্যদিকে কুর্দি বাহিনীকে ‘জঙ্গি’ বলে থাকে তুরস্ক।
সিরিয়ায় কুর্দি বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন দেওয়ার বরাবরই বিরোধিতা করে আসছে তুরস্ক। কারণ, নিষিদ্ধ কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি ১৯৮৪ সাল থেকে তুরস্কের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত বিপ্লব পরিচালনা করে।
তুরস্কের ভাষায়, কুর্দি নেতৃত্বাধীন মার্কিন-সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সকে (এসডিএফ) মূলত পরিচালনা করে ওয়াইপিজি মিলিশিয়া। এই মিলিশিয়া নিষিদ্ধ কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টিরই সম্প্রসারিত অংশ।
ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়ে জ্যেষ্ঠ মার্কিন রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম গতকাল মঙ্গলবার তুরস্ককে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে সেনা পাঠানোর বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন।

লিন্ডসে গ্রাহাম ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠজন। গতকাল এক টুইটে তিনি তুর্কি সরকারের বিরুদ্ধে বলেন, ‘সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে প্রবেশের সবুজ সংকেত নেই আপনাদের। কংগ্রেসে বড় ধরনের দ্বিপক্ষীয় বিরোধিতা রয়েছে। এটাকে আপনাদের লাল রেখা হিসেবে দেখা উচিত, যা আপনাদের অতিক্রম করা উচিত নয়।’

গ্রাহাম বলেন, তুর্কি বাহিনী সিরিয়ায় ঢুকে পড়লে, কুর্দি বাহিনীর ওপর হামলা চালালে তিনি তুরস্কের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয় তুলবেন। পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটো থেকে তুরস্ককে বহিষ্কার করার আহ্বান জানাবেন তিনি।

সেনা প্রত্যাহারে ট্রাম্পের ঘোষণায় সীমান্ত এলাকায় কুর্দি যোদ্ধাদের ওপর আক্রমণে তুরস্কের পথ খুলে গেলেও নিজের ঘোষণার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন ট্রাম্প। সেনা প্রত্যাহারে ট্রাম্পের পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছেন অনেক রিপাবলিকানও।
সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) পরাজিত করার ক্ষেত্রে মার্কিন বাহিনীর পক্ষে প্রধান ভূমিকা রেখেছে কুর্দি বাহিনী।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য অনুসারে, সিরিয়াজুড়ে এক হাজারের মতো মার্কিন সেনা রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র দুই ডজন সেনাকে সীমান্ত এলাকা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

গত সোমবার টুইটে ট্রাম্প বলেন, তিনি নির্বাচিত হয়েছেন এই সীমাহীন অসম্ভব যুদ্ধগুলো থেকে পরিত্রাণের জন্য। তুরস্ক, ইউরোপ, সিরিয়া, ইরান, ইরাক, রাশিয়া ও কুর্দিদের এখন এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজতে হবে।

গত মাসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান একটি মানচিত্র উপস্থাপন করেন। মানচিত্রে প্রদর্শিত ৪৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৩০ কিলোমিটার প্রশস্ত ‘নিরাপদ এলাকার’ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিরিয়ার সঙ্গে তুরস্কের সীমান্তে তুরস্ক এর নিয়ন্ত্রণ চায়। এতে তুরস্কে অবস্থানরত ৩৬ লাখের বেশি সিরিয়ার শরণার্থীর মধ্যে ২০ লাখের মতো শরণার্থীকে পুনর্বাসন করা যাবে।

গত সোমবার তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, অভিযানের সমস্ত প্রস্তুতি নেওয়া শেষ। ওই এলাকায় এই ব্যবস্থা সিরিয়ার মানুষ এবং ওই এলাকার শান্তির জন্য জরুরি।
তবে তুরস্ক সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল সীমান্তে কুর্দি যোদ্ধাদের ওপর হামলার হুমকি দিয়েই যাচ্ছে।

গতকাল ইরান বলেছে, সিরিয়ায় তুরস্কের সামরিক অভিযানের বিরোধিতা করছে তারা।